চাঁদা চাওয়ায় ছাত্রলীগ নেতাকে কৃষকদের গণপিটুনি
তরমুজচাষিদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতে গিয়ে গণপিটুনি খেয়েছেন সবুজ মালাকার নামের এক ছাত্রলীগ নেতা। সোমবার (৩ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া হাটে এমন ঘটনা ঘটেছে। পিটুনি খাওয়া ছাত্রলীগ নেতা এখন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তিসি আমতলী উপজেলার ছাত্রলীগ সহসভাপতি বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে ওই ছাত্রলীগ নেতার বিচার দাবি করে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশও করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, আমতলী উপজেলার ছাত্রলীগ সহসভাপতি মো. সবুজ মালাকার একজন কিশোর গ্যাং লিডার এবং ডজনখানেক মামলার আসামি। হলদিয়া ইউনিয়নের তরমুজচাষিদের কাছে তরমুজ প্রতি ১০ টাকা চাঁদা আদায় করে আসছেন তিনি। কৃষকেরা চাঁদা না দিলে তরমুজের গাড়ি আটকে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সোমবার রাতে তাদের গণপিটুনি দেন এলাকাবাসী। এ সময় সবুজ ম্যালাকার আহত হয়। এরপর সবুজের সঙ্গে থাকা লোকজন পাল্টা হামলা চালায়। এতে সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আরিফুল হাসান আরিফ, রাকিবুল ইসলাম, শাহিন ও শাহেদ আবদুল্লাহ আরিফ আহত হয়।
দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের চাষি আলামিন শরীফ জানান, সবুজ মালাকার তার কাছ থেকে জোর করে ৫ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছেন। হলদিয়া গ্রামের এখলাশ প্যাদা জানান, সবুজ মালাকার তার কাছ থেকেও ৫ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছে।
হলদিয়া গ্রামের তরমুজ চাষি বাসুদেব শীল জানান, সবুজ মালাকার তার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। টাকা না দিলে বাড়ি ছাড়ার হুমকিও দেন। তিনি আরও জানান, চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে সবুজ মালাকার গতকাল সোমবার রাত ৯টার দিকে তাকে হলদিয়া হাটে ধরে নিয়ে যান। সেখানে মারধর করা হয়। এর প্রতিবাদ করলে বরগুনা জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আরিফ-উল-হাসান আরিফকেও মারধর করেন তিনি। তাঁকে রক্ষায় স্থানীয় রাকিবুল হাসান ও আরিফ হোসেন এগিয়ে এলে তাঁদেরও মারধর করা হয়।
পরে খবর পেয়ে পুলিশ আসে। তবে তার আগেই স্থানীয় কয়েকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক মিনহাজুর রহমান তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠাতে বলেন।
তবে চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সবুজ মালাকার। তার দাবি, তিনি অনুগত ছেলেদের নিয়ে হলদিয়া বাজারের আওয়ামী লীগ অফিসে বসেছিলেন। এ সময় অ্যাডভোকেট আরিফের লোকজন পূর্ব শত্রুর জেরে তার ওপর হামলা চালায়।
অ্যাডভোকেট আরিফুল হাসান আরিফের ভাষ্য, সবুজ ম্যালাকার ১০-১২ জন সন্ত্রসী নিয়ে হলদিয়া ইউনিয়নের তরমুজ চাষিদের জিম্মি করে চাঁদা আদায় করছে। তারা ক্ষিপ্ত হয়ে সবুজকে গণপিটুনি দিয়েছে।
অপরদিকে সবুজ ম্যালাকারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, চাঁদাবাজির কারণে গণপিটুনির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সবুজ মালাকারের বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. রেজাউল কবির রেজা বলেন, ‘মারধরের খবর শুনেছি। যে কারণে তাঁকে মারধর করা হয়েছে, ওই ঘটনা যদি সত্য হয়, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’