২৯ মার্চ ২০২৩, ১৬:৫৬

দাম কমলেও ক্রেতা কম ব্রয়লারের

ব্রয়লার মুরগি গত দুই-একদিনে কেজিপ্রতি ৬০-৮০ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে।  © টিডিসি ফটো

নানা নাটকীয়তা, ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক, পাইকারী খুচরা বাজারে অভিযান আর দৌঁড়ঝাপের পর অবশেষে ক্রেতার হাতের নাগালে আসতে শুরু করেছে  ব্রয়লার মুরগির দাম। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রায় ৩০০ টাকা ছুঁই-ছুঁই ব্রয়লার মুরগি গত দুই-একদিনে কেজিপ্রতি ৬০-৮০ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে। একইসাথে স্বস্তি ফিরেছে ডিমের বাজারেও। ১৫০ টাকা ডজনে বিক্রি হওয়া ডিম আজ ১৩৫ টাকা ডজন দরে বিক্রি হচ্ছে।

বুধবার (২৯ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি ভোক্তা  পর্যায়ে  ব্রয়লার মুরগির দ্বিগুণ দাম নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনার পর সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সাথে বৈঠক শেষে চারটি বড় কর্পোরেট কোম্পানী দাম কমানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে। এতে করেই রাজধানীর খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম নেমে এসেছে ২০০-২২০ টাকায়। রোজার আগে উত্তাপ ছড়িয়ে শুরুতেই আবার দাম কমে যাওয়ার কারণে স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ মানুষের মাঝেও। তবে দাম কমলেও ব্রয়লার মুরগির ক্রেতার পরিমাণ খুবই কম।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের সহকারী পরিচালক (বাজার তথ্য) মোঃ নাসির উদ্দিন তালুকদার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের তথ্য অনুযায়ী আজ খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগির বাজারদর  ১৭০-১৯০ টাকা কেজি যা এক সপ্তাহ আগে ছিলো  ২৫০-২৭০ টাকা এবং এক মাস আগে ছিলো ২০০-২৩০ টাকা।

তবে সরেজমিনে নিউমার্কেটের বনলতা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবগুলো খুচরা দোকানেই প্রতি কেজি ব্রয়লার ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩৪০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা এবং কক লেয়ার ৩৪০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতারা বলছেন, কয়েকদিন আগেও প্রায় ৩০০ টাকার কাছাকাছি ছিলো ব্রয়লার দাম। এখন বিভিন্ন অভিযানসহ নানা পদক্ষেপের কারণে দাম কমতে শুরু করেছে। তবে বাড়তি দাম থাকার কারণে এতদিন ক্রেতা খুব কম ছিল। একজন বিক্রেতা যেখানে প্রতিদিন গড়ে ১০০ টির মত মুরগী বিক্রি করতো সেখানে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে কোনকোনদিন ৫০টা মুরগিও বিক্রি করতে পারেননি। অবশ্য গত দুই দিনে যখন মুরগির দাম কিছুটা কমেছে তখন আবারও আরও ক্রেতা বাড়বে বলে আশা করি।

শামীম রেজা নামের এক ক্রেতা বলেন, আজ বাজারে এসে দেখলাম ব্রয়লারের দাম অনেকটা কমেছে। তাই দুই কেজি ওজনের একটা ব্রয়লার কিনলাম। কয়েকদিন আগেও যখন অতিরিক্ত দাম ছিলো তখন মুরগি কেনাই বন্ধ রেখেছিলাম।

দিলারা ইয়াসমিন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ব্রয়লার মুরগির এমন দাম ইতিহাস তৈরি করেছে। হঠাৎ করেই সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়ে এর কেজি দাঁড়িয়েছিলো ২৮০ টাকায়। উৎপাদন খরচ ১৪৫-১৫০ টাকা হলেও খুচরা বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে দ্বিগুণেরও বেশি দামে কেন ব্রয়লার মুরগী বিক্রি হচ্ছে সেটি বলতে পারিনা।

অপরদিকে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০০ টাকা কমেছে বলে দাবি করেছেন ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, দেশব্যাপী অভিযান এবং তৎপরতার কারণে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০০ টাকা কমেছে। অন্যান্য বছর রমজান মাসে ভোগ্য পণ্যের বাজারে অসুবিধা দেখা গেলেও এবার সেটি স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি বলেন, মুরগির দাম যখন অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ২৮০ টাকা কেজি হয়েছিলো তখন আমরা এর প্রেক্ষিতে দেশব্যাপী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এর ফলস্বরূপ ব্রয়লার মুরগি এখন ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে অর্থাৎ কেজিতে ১০০ টাকা কমেছে।

তবে ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য আলাদা পোলট্রি বোর্ড গঠনের দাবি জানান খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলি্ট্র অ্যাসোসিয়েশনের সভিাপতি সুমন হাওলাদার। তিনি বলেন, কর্পোরেট কোম্পানির স্বেচ্ছাচারিতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিক মুরগি পালনের খামার গড়ে তোলার নামে প্রান্তিক খামারি দের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছেন। প্রান্তিক খামার বন্ধ থাকলেও চুক্তি খামার কখনো বন্ধ থাকেনা। এই সুযোগে চুক্তিভিত্তিক খামারে বাচ্চা দিলেও প্রান্তিক খামারে কোম্পানিগুলো বাচ্চা দেয়না।

তিনি আরও বলেন, এমন অবস্থা থেকে উত্তোলনের পথ বের করতে হবে। সেজন্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি সাইন্সবিভাগের প্রফেসরগণ এবং পোল্ট্রি স্টোক হোল্ডারদের সমন্বয়ে পোল্ট্রি উন্নয়ন ডেভলপমেন্ট বোর্ড গঠন করে পোল্ট্রি সকল পণ্যের উৎপাদন খরচ সমন্বয় করে ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।