২৮ মার্চ ২০২৩, ১৫:৩৫

‘নারীদের নেতৃত্ব দিতে হবে নিজ নিজ অবস্থানে’

‘উইমেন ইন লিডারশিপ’ সামিটে অতিথিরা  © টিডিসি ফটো

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ বলেছেন, নারীদের প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, নেতৃত্ব মানে শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্ব নয়। নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা, পৃথিবীর যত্ন নেয়ার মাধ্যমেও আমরা নেতৃত্বকে শাণিত করতে পারি। 

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এবং ঢাকার ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহায়তায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে যুব নারীদের নেতৃত্ব বিকাশে ‘উইমেন ইন লিডারশিপ’সামিটে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, আজকের এই তরুণ নেতৃত্ব আগামী দিনের নেতৃত্ব বিকাশে ভূমিকা রাখবে। এক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা নিশ্চিত করা খুব জরুরী—বলেও মনে করেন তিনি।

সামিটেরর উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীন বলেন, সরকারের সাথে সকল পক্ষের কাজের সমন্বয়ের মাধ্যমে সমাজে জেন্ডার সমতা গড়ে তোলা সম্ভব। বর্তমান সরকার নারীর অগ্রযাত্রা এবং নেতৃত্ব বিকাশে বহুমুখী কর্মসূচি পরিচালনা করছে। 

ফরিদা পারভীন বলেন, দেশের ৪৯৩টি উপজেলায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কাজ করছে। জয়ীতা ফাউন্ডেশন; নারী নির্যাতন রোধে ৮০-এর অধিক ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার; দেশের ৬ বিভাগে নারী সহায়তা কেন্দ্র; নারী নির্যাতন আইন; লাল সবুজ ডট কম; হটলাইন ১০৯; জয় মোবাইল অ্যাপ; কিশোর-কিশোরী ক্লাব; ই-সেবা; ই-কমার্স প্রভৃতি উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করছে। 

সামিটে ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রতিনিধি ডেভিড নক্স বলেন, নারীর নেতৃত্ব বিকাশে বাংলাদেশ অনেকাংশে যেমন এগিয়েছে তেমনি নারীর প্রতি বিভিন্ন প্রকার বৈষম্য এখনো রয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা ও দায়বদ্ধতা নারীর ক্ষমতায়নে অধিক ভূমিকা রাখবে। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হলেই নারী নেতৃত্ব তৈরি হবে। 

সামিটে আয়োজকদের পক্ষে বক্তব্য প্রদানকালে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী বলেন, এসডিজি-৫ এ নারীর সমঅধিকার, দায়িত্ব ও সুযোগ এই ৩দিকের কথা বলা হয়েছে জোরালোভাবে। নারীর পিছিয়ে থাকার কারণই হলো নেতৃত্বে ঘাটতি। এ উপলব্ধি থেকেই এই প্রকল্প নারীর নেতৃত্ব বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করছে।

‘উইমেন ইন লিডারশিপ’ সামিটের অতিথিদের সাথে অংশগ্রহণকারী নারীরা

বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ওয়েভ ফাউন্ডেশন ‘একটি ন্যায্য ও সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠার’ রূপকল্প নিয়ে বিগত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহায়তায় যুব নারীদের নেতৃত্ব বিকাশে সংস্থাটি ‘উইমেন ইন লিডারশিপ’ শীর্ষক একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের আওতায় ২০ জন যুব-নারী অংশগ্রহণকারী ইংল্যান্ডের ক্লোর সোশ্যাল লিডারশিপের একটি আট সপ্তাহের অনলাইন লিডারশিপ কোর্সে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার মোট ১০০জন অংশগ্রহণকারীর সাথে নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ লাভ করেছেন। 

অংশগ্রহণকারীরা এ কোর্সের পাশাপাশি ৬টি স্পিড মেন্টরিং সেশনে নারী নেতৃত্বের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে নিজেদের জ্ঞান ও দক্ষতার পরিধি আরও বিস্তৃত করার সুযোগ পেয়েছেন। একইসাথে অংশগ্রহণকারীরা ৬টি ওয়েবিনারে বিষয়ভিত্তিক সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের সাথে মতবিনিময় এবং নিজেদের মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছেন। 

এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে কেন্দ্র করে সপ্তাহব্যাপী সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণকারীরা তাদের বক্তব্য ও ভিডিও চিত্র নিয়ে হাজির হয়ে নিজেদের মতামতকে ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন বিশ্বব্যাপী। প্রকল্প কাজের অংশ হিসেবে ‘সাফল্যে, সংগ্রামে, নেতৃত্বে নারী’ শীর্ষক দিনব্যাপী ‘উইমেন ইন লিডারশিপ সামিট’টি অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

এছাড়াও ওয়েব ফাউন্ডেশন মনে করে তাদের এ উদ্যোগটি শিক্ষা, প্রযুক্তি, এন্টারপ্রাইজ ও ব্যবসা, শিল্প ও সংস্কৃতি এবং উন্নয়ন সেক্টরের বিষয়গুলোতে নজর দেয়া হয়েছে এ কোর্সে। সর্বোপরি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (অভীষ্ট ৫) অন্তর্গত ‘জেন্ডার সমতা অর্জন এবং সকল নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন’ অর্জনে ভূমিকা পালন করবে। 

সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ কাউন্সিলের উপ-আনুষ্ঠানিক প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. আব্দুর রাহামান খান এবং ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রকল্প সমন্বয়ক রোকসানা ইয়াসমিন প্রকল্পের কার্যক্রম উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক নাজমা সুলতানা লিলি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংস্থার উপ-পরিচালক কানিজ ফাতেমা। 

সামিটের উদ্বোধনী অধিবেশনের পর ‘উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিতে নারী;’ ‘নারীর জন্য দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা’ এবং ‘সাফল্যে, সংগ্রামে, নেতৃত্বে নারী’ শীর্ষক তিনটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রোবটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল, বিশিষ্ট প্রশিক্ষক আব্দুল্লাহ জাফর, কারিগরের উদ্যোক্তা তানিয়া ওয়াহাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জোবায়েদা নাসরীন, মানবাধিকার ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞ সানাইয়া ফাহিম আনসারিসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আগত প্রকল্পের প্রতিনিধি ও উপস্থিত অংশগ্রহণকারীরা তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।