‘বাবার বেতন বাড়েনি, দ্রব্যমূল্য না কমলে শিক্ষাজীবন ভেঙে পড়বে’
আবহাওয়ার বদলের মত দিনদিন যেন বাড়ছে দ্রব্যমূল্যের দাম। তবে এই বদলের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদেরও। ‘স্বাস্থ্যই সম্পদ’ প্রবাদটি বদলে যেন ‘অর্থই সম্পদ’ এমন প্রবাদে রুপ নিচ্ছে তাদের কাছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে শিক্ষা জীবনের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের ডিআইইউ প্রতিবেদক সাদিয়া তানজিলা।
দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়লেও আমাদের বাবাদের বেতন বাড়েনি
দিনদিন লাগামবিহীন পণ্যের দাম বৃদ্ধি আমাদের জীবনে খুবই বিরূপ প্রভাব ফেলছে। যেসব শিক্ষার্থী হলে বা ভাড়া বসায় থেকে পড়াশুনা করছেন, তাদের পরিবারকে তাদের থাকা-খাওয়াসহ সব কিছুর জন্য খরচ দিতে হয়। আমরা যেহুতু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তাই আমাদের খরচ একটু বেশি। আমরা অনেকেই আবার নিজেরা টুকটাক ইনকাম করে নিজেদের হাত খরচ চালাই। পূর্বে এই টাকাতে বেশ ভালো চললেও বর্তমানে হিমশিম খাওয়া অবস্থা। এছাড়া একজন মানুষের স্বাভাবিক সুস্থতার জন্য যে পরিমাণ খাদ্য-পুষ্টি দরকার তাও এখন পূরণ হচ্ছে না।
মাছ, মাংস, ডিমসহ সবকিছুর দাম আকাশচুম্বি হওয়ায় আমিষের ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। কারণ একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে সপ্তাহে এক-দুইদিন আমিষের জোগান দেওয়া এখন খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে সপ্তাহে ৩/৪ দিন ডিম খেতে পারতাম। কিন্তু এখন ডিমের দামও চড়া।
আরও পড়ুন: একবেলা খাবার বন্ধ করেছেন ৫১.৫% শিক্ষার্থী-চাকরিপ্রার্থী
সামনে আবার রমজান আসছে, সবকিছু বিবেচনা করে দ্রব্যমূল্যের দাম কমানো উচিত। না হলে আমাদের মত সাধারণ মানুষদের জীবনে ভেঙে পড়তে বেশিদিন সময় লাগবে না। কারণ দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়লেও আমাদের বাবাদের বেতন কিন্তু বাড়েনি। একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে স্বল্প আয় দিয়ে পরিবার চলানো যেন বড় চ্যালেঞ্জ।
সুমাইয়া তাপ্তিলা
ইংরেজি বিভাগ
ঢাকা ইন্টান্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
খাদ্যদ্রব্যের মূল্যের উর্ধ্বগতি শিক্ষার্থীদের জন্য হুমকি
সারাদেশে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য ক্রমান্বয়ে বেড়েই যাচ্ছে। যা সাধারণ জনগণের চেয়ে বেশি চাপ সৃষ্টি করছে শিক্ষার্থীদের ওপর। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যের উর্ধ্বগতিতে শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। অধিকাংশ হোস্টেল বা মেসের খাবারের মান খারাপ হয়। তার ওপর যখন খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বেড়ে যায় তখন কম টাকায় চাহিদা মোতাবেক খাবার পাওয়া যায় না। এতে করে শিক্ষার্থীরা অ-স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে বাধ্য হয়।
যে সমস্ত শিক্ষার্থী টিউশনি করে পড়াশোনা করে, খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বাড়ার কারণে তাদের খাবার রুটিন থেকে সকলের খাবার বাদ দিতে হয়। বাসা থেকে টাকা নিয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের একটা নির্দিষ্ট অংকের টাকা নির্ধার করা থাকে। খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বাড়লেও বাসা থেকে নির্ধারিত টাকার অংক বাড়ে না অনেক শিক্ষার্থীর। প্রতিনিয়ত বাড়তি টাকা চাওয়াতেও একটা সংকোচবোধ কাজ করে। এভাবে মূল্য বাড়তে থাকলে হয়তো অনেক শিক্ষার্থী ঝড়ে যাবে।
কাওছার আলী,
পুরকৌশল বিভাগ,
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
দুর্বল অর্থনীতিতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এখন আর কোন বিশেষ সংবাদ নয়
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির ফলে নানামুখী সমস্যা তৈরি হচ্ছে। গত দুই বছর ২০২০-২০২১ ঘটে যাওয়া করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সর্বোপরি আছে আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব। দেশের অর্থনীতি যেহেতু পরনির্ভরশীল তাই বিশ্বের দ্রব্যমূল্যের উঠা-নামার উপরে দেশীয় দ্রব্যমূল্যের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে উন্নত দেশসহ বাংলাদেশে জৈব জ্বালানীর সংকট দেখা দেওয়ার কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাগলা ঘোড়ার মত লাফিয়ে চলছে। এটা চরম সত্য যে দেশের কৃষি, শিল্প এবং বাণিজ্যের উন্নতি না হলে জিনিসের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে না। তাছাড়া সামনে আসছে, রমজান এই সময়ে বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেনির ব্যক্তিবর্গ আর্থিকভাবে নানা মুখী সমস্যার সম্মুখীন হবে।
নুসরাত জাহান
আইন বিভাগ
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
নিত্যপণ্যের বাজারের আগুনে মানুষ পুড়ে ছাই হচ্ছে
করোনার মহামারি কাটতে না কাটতেই শুরু হয়ে গেলো দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাজেহাল অবস্থায় প্রায় রাজধানীসহ পুরো দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো। একে তো মানুষের আয় বাড়েনি, তার উপর সকল নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রায় হাতের নাগালের বাইরে। এমতাবস্থায় প্রায় সকল শ্রেণীর পেশাজীবীদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে প্রায় হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: জীবন চালাতে হিমশিম মেসের শিক্ষার্থীদের, খাবারের ব্যয়ে কাটছাঁট
একজন মানুষের পক্ষে একটা পুরো সংসার চালানো বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন চাল, ডাল, তেল থেকে শুরু করে মাছ, মাংস, সবজি সব কিছুরই দাম অনেক বেশি আগের তুলনায়। এই মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় আমাদের সবাইকে নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বলা চলে বর্তমানে মাছের বাজার, তরকারির বাজারে আগুন আর আমরা সেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছি।
মো. সৌরভ মিয়া
আইন বিভাগ
ঢাকা ইন্টান্যাশনাল ইউনিভার্সিটি