১১ মার্চ ২০২৩, ০৭:৪৮

গেমে সময় পার প্রাথমিকের ৯২% শিক্ষার্থীর, মাধ্যমিকের ৮১%

প্রতীকী  © সংগৃহীত

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করোনায় দেড় বছর বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে প্রাইভেট-টিউশনির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের এখনো অনেকটা সময় কাটছে মোবাইল ফোনে গেম খেলেই। শিক্ষার্থীদের কমে গেছে শিখনদক্ষতা, বেড়েছে ফেল করার হার। করোনা-পরবর্তী স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম চালু হলেও এখনো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি ।

বেসরকারি সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযানের করোনা-পরবর্তী শিক্ষা পুনরুদ্ধার শীর্ষক ‘এডুকেশন ওয়াচ স্টাডি-২০২২’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। শিগগিরই এটি প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।

গণসাক্ষরতা অভিযানের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, প্রাথমিকের ২৭ দশমিক ৫ ও মাধ্যমিকের ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মোবাইল ফোনে গেম বা কম্পিউটার গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে। প্রাথমিকের ৯২ দশমিক ৩ ও মাধ্যমিকের ৮১ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রতিনিয়ত কমপক্ষে এক থেকে দুই ঘণ্টা মোবাইল ফোন/কম্পিউটারে গেমে পার করে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মফস্বলে ৯১ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী কোচিং সেন্টার বা টিউশনির সাহায্য নিয়েছে। আর শহর এলাকায় ৮৮ শতাংশ ছাত্রছাত্রী নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে টিউশনির ওপর। এমনকি রাজধানীতে টিউশনির ওপর নির্ভর করছে ৭৩ দশমিক ৬ শতাংশ ছাত্রছাত্রী, যা পরিবারে অর্থ ব্যয়ে বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরও পড়ুন: করোনা সংকটে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ আয় কমবে ১০ শতাংশ: বিশ্বব্যাংক

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করার পর মতামত জানতে সরকারের শিক্ষাসংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে পাঠানো হয়েছে। আগামী মাসে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, করোনার কারণে শেখার দক্ষতা কমেছে শিক্ষার্থীদের। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসাররা বলছেন, করোনার আগে শিক্ষার্থীদের ১০ এর স্কেলে শিখনদক্ষতা ছিল ৮ দশমিক ৬, কিন্তু করোনার প্রকোপের পর এ দক্ষতা ৫ দশমিক ৮-এ এসে ঠেকেছে।

জেলাভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পাসের ক্ষেত্রে সব থেকে পিছিয়ে হবিগঞ্জ। এ জেলায় ৫৭ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। ফেলের হারে তার পরই রয়েছে রাজশাহী। এ জেলায় ফেল করেছে ৪৬ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। করোনার প্রভাবে অন্য জেলাগুলোয়ও বেড়েছে অকৃতকার্যের হার। ভোলায় ২৫ দশমিক ৪, চট্টগ্রামে ২৪ দশমিক ৮, ঢাকায় ১৫ দশমিক ৫, গাইবান্ধায় ২৮ দশমিক ৪ ও নেত্রকোনায় ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে।

পরিসংখ্যান বলছে, পাসের হারে সব থেকে এগিয়ে যশোর জেলা। এ জেলার ৯০ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। আর মাত্র ৯ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। শতভাগ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা করোনার প্রভাবে শিখন ঘাটতি হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ঘাটতি মেটাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ডিজিটাল ডিভাইস বা মোবাইল ফোনে তারা এখনো অনেকটা সময় ব্যয় করছে। এখন স্কুল-কলেজে পুরোদমে ক্লাস চলছে। আশা করছি করোনার নেতিবাচক নানান প্রভাব কেটে যাবে।