বিস্ফোরণে নিহত ১৭ জনের পরিচয় মিলেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারের নর্থ-সাউথ রোডের ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ জনে। এ ঘটনায় আহত হয়ে এখন পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৭৮ জন। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩০ জন রোগী। এছাড়াও, এ ঘটনায় আহত হয়ে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন ১১ জন; যাদের ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। মৃতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত পরিচয় মিলেছে ১৭ জনের।
মঙ্গলবার (৭ মার্চ) রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই তালিকা প্রকাশ করে। মঙ্গলবার বিকেল ৫টার আগে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে নর্থ সাউথ রোডের ১৮০/১ হোল্ডিংয়ের সাত তলা ওই ভবনে। এতে ভবনে থাকা বিভিন্ন দোকানের কর্মচারীদের পাশাপাশি সামনে রাস্তায় থাকা যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীরাও হতাহত হন।
তখন আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। উদ্ধার কাজে অংশ নেয় ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট। এ সময় বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থল থেকে আহতদের হাসপাতালে নেয়ার কাজ করে। এছাড়াও উদ্ধার কাজে যোগ দেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা-বাহিনী ও স্থানীয়রা। এছাড়াও ঘটনাস্থলে আসে বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট ও সেনাবাহিনীর একটি উদ্ধারকারী দল। রাতে নিহতদের স্বজনরা ঢামেক হাসপাতালে তাদের স্বজনদের মরদেহগুলো শনাক্ত করেন।
নিহতদের মধ্যে পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে কুমিল্লার মেঘনার তিথিরচড় গ্রামের মমিনের ছেলে সুমন (২১), সুমনের মরদেহ তার বাবা মমিন শনাক্ত করেন। বংশাল সুরিটোলা এলাকায় থাকতেন সুমন। বরিশাল সদর উপজেলার কাজিরহাট গ্রামের মৃত দুলাল মৃধার ছেলে ইসহাক মৃধা (৩৫)। মরদেহ শনাক্ত করেন তার ফুফাতো ভাই হুমায়ুন কবির খান। ইসলামপুরে কাপড়ের ব্যবসা করতেন ইসহাক মৃধা।
যাত্রাবাড়ীর শেখদির মোশারফ হোসেনের ছেলে মনসুর হোসেন (৪০)। মরদেহ শনাক্ত করেন নিহতের ভায়রা মুরাদ হোসেন। বংশাল আলু-বাজার এলাকার মৃত হোসেন আলীর ছেলে ইসমাইল হোসেন (৪২)। মরদেহ শনাক্ত করেন ভাই আব্দুল কুদ্দুস। চাঁদপুরের মতলবের পশ্চিম লালপুর গ্রামের বিল্লাল হোসেনের ছেলে আল আমিন (২৩)। তার মরদেহ শনাক্ত করেন ভাই হাবিবুর রহমান। আলামিন বেসরকারি কলেজে বিবিএর ছাত্র। কেরানীগঞ্জের চুনকুঠিয়া এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে রাহাত (১৮) শনাক্ত করেন ভাই রাকিবুল হাসান।
চকবাজার ইসলামবাগের আবুল হাসেমের ছেলে মমিনুল ইসলাম (৩৮)। তার স্ত্রী নদী বেগম (৩৫)। তাদের মরদেহ শনাক্ত করেন চাচা জয়নাল আবেদীন। মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের মৃত সমির উদ্দিনের ছেলে মাঈন উদ্দিন (৫০) শনাক্ত করেন ছেলে মাহমুদুল হাসান। বংশালের কেপি ঘোষ স্ট্রিটের ইউনুছ আলীর ছেলে নাজমুল হোসেন (২৫)। তার মরদেহ শনাক্ত করেন খালাতো শোভন।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেউথা গ্রামের মৃত সাহেব আলীর ছেলে ওবায়দুল হাসান বাবুল (৫৫),তার মরদেহ শনাক্ত করেন মেয়ে জামাই চাতক সিকদার। মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার বালুয়া কান্দি গ্রামের মৃত মোজাম্মেল হকের ছেলে আবু জাফর সিদ্দিক (৩৪)। মরদেহ শনাক্ত করেন খালাতো ভাই রাশেদুল হাসান। বংশালের আগামাসি লেনের মৃত আনোয়ারুল ইসলামের স্ত্রী আকুতি বেগম (৭০)। তার মরদেহ শনাক্ত করেন খালাতো ভাই শাজাহান সাজু।
শরীয়তপুরের নড়িয়ার কাঠাকুলি গ্রামের মৃত কালাচাঁন মিয়ার ছেলে ইদ্রিস মিয়া (৬০)। তার মরদেহ শনাক্ত করেন তার ছেলে রিফাত। তিনি জানান, বর্তমানে যাত্রাবাড়ীর মীর হাজারীবাগ এলাকায় থাকেন এবং তার বাবা আজাদ স্যানেটরি দোকানে কাজ করতেন। যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল এলাকার মৃত আলী মোহাম্মদ ভুইয়ার ছেলে নুরুল ইসলাম ভুইয়া (৫৫)। মরদেহ শনাক্ত করেন ভাই মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া। তার ভাই ওই ভবনের ইউসুফ স্যানেটারির দোকানের মালিক। কিশোরগঞ্জ করিমগঞ্জ থানার উলুকাঠা গ্রামের হাশেম মিয়ার ছেলে হৃদয় (২০)। মরদেহ শনাক্ত করেন তার বাবা।
ঢাকার কেরানীগঞ্জ কালিগঞ্জের মো. দুলাল মিয়ার ছেলে আব্দুল হাকিম সিয়াম (১৮)। ছেলের মরদেহ শনাক্ত করে দুলাল হোসেন জানান, সিয়াম জয়নাল স্যানেটারি স্কুলে কাজ করত। আহতাবস্থায় পথচারীরা সিয়ামকে হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যায়।
এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ভবনটির পিলারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ফলে ভেতরে ঢুকে উদ্ধার কাজ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা এখনো বিস্ফোরণের কারণ জানাতে পারেননি। তারা জানিয়েছেন, উদ্ধার কাজ শেষে তদন্ত করা হবে এবং তখন জানা যাবে বিস্ফোরণের মূল কারণ।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স’র পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বিস্ফোরণে বিআরটিসি কাউন্টারের দক্ষিণ পাশে ৫তলা একটি ভবন (নিচ তলায় স্যানিটারি দোকান, বাকি ফ্লোরগুলো ব্র্যাক ব্যাংকের অফিস) এবং তার পাশের ৭তলা একটি স্যানিটারি মার্কেট ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত কোনো ভবন ধসে পড়েনি এবং ভবনটি ঝুঁকিতে রয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৬ জন পুরুষ এবং ২ জন নারী। পুরান ঢাকার সিদ্দিক বাজার এলাকায় বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত শতাধিক ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।