সরকার গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
সরকার গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রেখেছি; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ব্যাপক গবেষণার জন্য বিভিন্ন ইন্সস্টিটিউট তৈরি করেছি।
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, বিজ্ঞানী, গবেষক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, এনএসটি ফেলোশিপ ও বিশেষ গবেষণা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সরকার প্রধান। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।
স্বাস্থ্য খাতে গবেষণার ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য খাতে গবেষণাটা আমাদের খুবই দরকার। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে গবেষণা খুবিই সীমিত কয়েকজন করেন। আরও বেশি যেন গবেষণা হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে।
জাতির পিতা আণবিক শক্তি কমিশন, ইউজিসি, ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন, স্থলসীমানা চুক্তি সমুদ্রসীমা আইন করে গেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, পচাত্তরের পরবর্তী সরকার কোনও উদ্যোগ নেয়নি। তবে আমরা এসে সম্পন্ন করেছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে জাতির পিতা ভিত্তিটা তৈরি করে গেছেন। আমরা সেটাকে ধরে কাজ করতে চেষ্টা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অগ্রযাত্রা এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব নতুন প্রজন্মের। আমরা কোনও অংশে কারও থেকে পিছিয়ে থাকবো না। কারও কাছে হাত পেতে চলবো না। স্বাধীন বাংলাদেশ ১৪ বছরে বাংলাদেশের বিরাট পরিবর্তন এসেছে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন স্মার্ট জনগোষ্ঠী। আমাদের অর্থনীতি হবে স্মার্ট অর্থনীতি। আত্মসামাজিক ক্ষেত্রে স্মার্ট উন্নতি আমরা করবো। কৃষি, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান সব ক্ষেত্রে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে।
দেশে কৃষি-বিজ্ঞানসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে গবেষণা হলেও স্বাস্থ্য খাতে প্রত্যাশিত গবেষণা না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কৃষি-বিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণা হলেও স্বাস্থ্য খাতে গবেষণাটা খুবই সীমিত। আমাদের যারা ডাক্তার হন, ডাক্তার হয়ে পুলিশের চাকুরিতে চলে যান বা রাজনীতিবিদ হয়ে যান। কেউ ডাক্তারিও করেন না। গবেষণাও করেন না। আরেক শ্রেণি আছেন, তারা শুধু টাকা কামাই করতেই ব্যস্ত। সরকারি চাকরিও করবে, আবার প্রাইভেটে প্র্যাকটিসও করবে। এভাবে চাকরি আর প্রাকটিস করলে সেখানে আর গবেষণা হয় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নভোথিয়েটার করতে যাওয়ার কারণে আমার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া দুটি মামলা দিয়েছিল। কেন দিয়েছিল জানি না। যে কাজই করতে গিয়েছি মামলা খেয়েছি। আমার বিরুদ্ধে এসব কারণে এক ডজন মামলা দিয়েছিল। আমরা এখন বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে নভোথিয়েটার করে দিচ্ছি। আমাদের যত বেশি গবেষণা বাড়বে জাতি হিসেবে তত বেশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমরা অবদান রাখতে পারবো।
প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা ভোকেশনাল শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। কর্মসংস্থান হাইটেক পার্ট, হাইটেক সিটি, ইনকিউভেশন সেন্টার করে দিচ্ছি। শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি সবকিছুতেই আমরা ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে পারছি।
সরকার প্রধান বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, স্যাংশন, পাল্টা স্যাংশনে আমাদের আমাদানি পণ্যে ব্যাপক বাধা পেতে হচ্ছে। বিশ্বব্যাপীর মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়েছে। তারপরও আমরা এই সব পরিবেশকে মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জে আমাদের লোকবল কম লাগবে কিন্তু টেকনোলজি ব্যবহার করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। তার জন্য আমাদের দক্ষ জনশক্তি দরকার। তবে আমরা সম্পূর্ণ সেদিকে যেতে চাই না। আমরা শ্রমনির্ভর শিল্পও করতে চাই কারণ আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। দুটো মিলিয়ে কীভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে পারি, সেই চিন্তাটা সবার মাথায় থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি গবেষণায় সব থেকে বেশ সফলতা আমরা পেয়েছি। লবণাক্তসহিষ্ণু ধান আমরা দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদন করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আসবে। সেটাকে মোকাবিলা করে ভবিষ্যতে চলার পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের আরও দক্ষ বিজ্ঞানী দরকার। আমরা সেদিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। যারা ফেলোশিপ পেয়েছেন আন্তরিকতার সঙ্গে গবেষণা করবেন। জানতেও চাই কী কী উদ্ভাবন করলেন, এটা কতটুকু দেশের জন্য কাজে লাগবে।