২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২২:১৭

ভাষা দিবসে নানান আয়োজন চবি শিক্ষার্থীদের

সজ্জিত চবির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার  © টিডিসি ফটো

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৩ উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা নানান কর্মসূচি আয়োজন করেছে। এর মধ্যে আছে বই বিনিময় উৎসব, একুশের চেতনায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা এবং ক্যাম্পাসে সাইকেল রাইডিংসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার ছাত্র সংগঠনগুলোর শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন। 

প্রভাতের আলো ছড়িয়ে পড়তেই চারিদিকে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে ভাষার চেতনায় লেখা গান। শীতল আবহাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বের হয়েছে কাটা পাহাড়ের রাস্তা ধরে শহীদ মিনারে। কালো কাপড়ের টুকরোয় শোকের চিহ্ন বুকে লাগিয়ে শিক্ষার্থীরা ফুল নিবেদন করছেন শহিদদের স্মরণে। আবার অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারের চারিদিকে ভাষার চেতনায় বিভিন্ন উক্তিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা স্থিরচিত্র ধারণে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

আরও পড়ুন: ‘ছাত্রলীগ ভীতি’: ২ বছর ধরে ক্যাম্পাস ছাড়া চবি ছাত্রদল 

বই বিনিময় উৎসব:

মাতৃভাষাকে ছড়িয়ে দিতে বাংলা বইয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। সেই চেতনা ধরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘উদ্দীপ্ত বাংলাদেশ’ আয়োজন করেছে এমন ব্যাতিক্রমী আয়োজন। শিক্ষার্থীদের থেকে বই সংগ্রহ করে গড়ে তুলেছেন বিপুল সমাহার। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সাজানো হয়েছে বইয়ের তালিকা৷ পড়ে শেষ করা বই দিয়ে নিতে পারছেন ভিন্ন কোনো বই। শিক্ষার্থীদের আর্থিক দিক বিবেচনায় সংগঠনটির এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বিনিময় করছেন বই। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে এই আয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার প্রবণতা ছড়িয়ে দিতে এবং আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও আর্থিক সমস্যার কারণে যেসব শিক্ষার্থী পাঠ্যক্রম বহির্ভূত বই সংগ্রহ করতে পারছেনা তাদেরকে প্রধান্য দিয়ে সার্বজনীনভাবে এই বই বিনিময় উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার এমন আয়োজন করেছে সংগঠনটি। 

এই বই উৎসবে অংশ নিয়ে চবি বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. লায়লা খালেদা বলেন, বই বিনিময় উৎসব শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই ইতিবাচক বিষয়। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। ‘উদ্দীপ্ত বাংলাদেশে’র আয়োজন প্রশংসার দাবি রাখে। 

রক্তদানে এক দশক পেরিয়ে কণিকা:

একুশের চেতনায় বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করার উদ্যাগ নিয়েছে ‘কণিকা’। সকাল ১১টায় শুরু হয় তাদের কার্যক্রম। ‘সৃষ্টির জন্য ভালোবাসা’ স্লোগানকে ধারণ করে ‘কণিকা-একটি রক্তদাতা সংগঠন’ কাজ করছে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে বাল্যবিয়ে বিরোধী ক্যাম্পেইন, থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি, বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা,  সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে চিকিৎসক দ্বারা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ বিতরণ এবং স্থানীয় শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে থাকে সংগঠনটি। 

কণিকার সভাপতি কফিল উদ্দিন বলেন, শুরু থেকেই সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের প্রয়োজনে কাজ করে আসছে ‘কণিকা’ একটি রক্তদাতা সংগঠন। আমরা রক্তদানের পাশাপাশি প্রতি বছর বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি। ভবিষ্যতে আরও ভাল কাজ করার আশা রাখছি। 

২০১২ সালে এপ্রিলে চবির তিন তরুণের হাত ধরে চালু হয় এ সংগঠন। তারা হলেন সাইফুল্যাহ মনির, সাঈদ আহমদ নসিফ ও মহসিন রনি। রক্তদান বিষয়ক সচেতনতা তৈরিতে ‘কণিকা ব্লাড ব্যাংক’ নামক একটা ফেসবুক পেজ থেকে অনলাইনে কাজ শুরু এই সংগঠনের কর্মযজ্ঞ। 

বাংলা ভাষার বৈচিত্র্যময়তা এবং রম্য বিতর্ক:

একুশে ফেব্রুয়ারিতে নানা ব্যাতিক্রমী আয়োজনে ভাষা শহীদের স্মরণ করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় বিতর্ক সংগঠন চিটাগং ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি (সিইউডিএস)। দিনব্যাপী হওয়া আয়োজনের মধ্যে ছিলো যুক্তিনির্ভর উপস্থিত বক্তৃতা, আদিবাসী ভাষা ও সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং রম্য বিতর্ক। বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্ত্বরে সকাল ১০ টা থেকে আয়োজন শুরু হয় ‘আবার ফেব্রুয়ারি, আবার গর্জমান। বাংলার মাটি, দুর্জয় ঘাঁটি, শত্রুরা সাবধান।’ এই স্লোগানে।  সংগঠনটির মডারেটর প্রফেসর ড. এবি এম আবু নোমানের সঞ্চালনায় প্রথমেই অনুষ্ঠিত হয় যুক্তি নির্ভর উপস্থিত বক্তৃতা। এতে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট বিষয়ে যুক্তির মাধ্যমে তাদের আলোচনা তুলে ধরেন। এরপর অনুষ্ঠিত হয় আদিবাসী ভাষা ও সাংস্কৃতিক পরিচয়। এখানে বিভিন্ন উপজাতীয় শিক্ষার্থী নিজস্ব ভাষায় তাদের শিল্প,সংস্কৃতি ও পরিচয় প্রকাশ করেছেন। এরপরেই অনুষ্ঠিত হয় হাস্যরসাত্মক রম্য বিতর্ক। রম্য বিতর্কে প্রতিযোগীরা রংপুর, নোয়াখালী, পুরান ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেণু কুমার দে বলেন, ভাষা দিবসের প্রতিজ্ঞা হোক শুদ্ধ মাতৃভাষার চর্চা। মাতৃভাষার জন্য আমাদের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের এক গর্বিত ইতিহাস রয়েছে। অন্য ভাষা চর্চা করতে গিয়ে বাংলাকে যেন অবজ্ঞা না করা হয়। বিশেষ করা অন্যান্য ভাষার প্রতিও সমান শ্রদ্ধা রাখতে হবে। ভাষার এই মূল্যবোধ সৃষ্টিতে সিইউডিএস এর এই কার্যক্রম অনেক প্রশংসার দাবি রাখে।

আরও পড়ুন: চবির পাহাড় থেকে দুই শিক্ষার্থীর মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনতাই

কথা উৎসব ২০২৩:

বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য একটি বিতর্ক সংগঠন চিটাগাং ইউনিভার্সিটি স্কুল অব ডিবেট (সিইউএসডি) আয়োজন করে এই কথা উৎসব৷ তারা আয়োজন করে বারোয়ারী বিতর্ক, আঞ্চলিক বিতর্ক, প্ল্যানচ্যাট বিতর্ক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত মঞ্চে করা হয় তাদের এই আয়োজন। 

ক্যাম্পাস জুড়ে সাইক্লিং:

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাইকেলে মাতিয়ে বেড়ান বিভিন্ন জায়গায়। তাদের সংগঠন ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাইক্লিস্টস’। অমর একুশের চেতনায় তারাও ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির শিক্ষক উপদেষ্টা ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাখন চন্দ্র রায়। এছাড়াও সংগঠনটির মডারেটর শান্ত চন্দ্র রায়, আবদুল্লাহ আল মামুন, উম্মুল আখয়ার এবং মশিউর রহমান সায়মন উপস্থিত ছিলেন।