করোনায় সাড়ে ১৪ মাসের বন্ধে ২৬ মাসের শিখন ঘাটতি
করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশে গড়ে সাড়ে ১৪ মাস স্কুল বন্ধ ছিল। এর জেরে অন্তত ২৬ মাসের শিখন ঘাটতি তৈরি হয়েছে। কারণ এর মধ্যে পাঠ্যবইয়ের আগে জেনে নেওয়া কিছু শিক্ষা তারা ভুলে গেছেন। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
‘কভিড-১৯ কীভাবে মানব পুঁজির ক্ষয় করেছে এবং এ ব্যাপারে করণীয় কী’ শিরোনামের বিভিন্ন দেশের তথ্যের প্রাথমিক বিশ্লেষণ নিয়ে তৈরি করা এ প্রতিবেদন গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘ বন্ধের পর স্কুল খুলে দেওয়া হলেও অনেক শিশু আর স্কুলে ফিরতে পারেনি। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে পরিচালিত করোনায় লকডাউনের সময় ২০ মাস বয়সের এবং গত বছর একই বয়সের শিশুদের ওপর পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, করোনার প্রভাবে শিশুদের শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক ঘাটতি বেড়েছে।
আরও পড়ুন: যে নারী প্রথম করোনাভাইরাস আবিষ্কার করেছিলেন
এতে বলা হয়, প্রাক-শৈশবকাল মেধা বিকাশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। জীবন দক্ষতার ভিত্তিভূমি বলা হয় এ সময়কে। করোনাকালে লকডাউনসহ বিভিন্ন কারণে অনেক শিশু স্কুলে যেতে পারেনি। করোনায় সারাবিশ্বেই বিভিন্ন সময়ের জন্য স্কুল বন্ধ ছিল। নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এক বছরের মতো স্কুল বন্ধ ছিল।
‘‘এ কারণে বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক টিকা থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার টিকা পায়নি অনেক শিশু। তাদের পরিবারে ছিল ঘোর দুশ্চিন্তা। এসব কারণে অনুধাবন শক্তি এবং সামাজিক বিকাশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। দরিদ্র পরিবারের প্রাক-শৈশব, বিদ্যালয়গামী বয়সের শিশু ও তরুণদের পরিস্থিতি তুলনামূলক খারাপ।’’
বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষণে বাংলাদেশের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, শিশুদের ওপর পরীক্ষায় দেখা গেছে, ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২২ সালের পরীক্ষায় শিশুরা বেশ পিছিয়ে আছে। অর্থাৎ করোনার প্রভাবে শিশুদের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এই পিছিয়ে থাকার কারণে এসব শিশুর পরিণত বয়সে আয় কমবে স্বাভাবিক আয়ের চেয়ে অন্তত ২৫ শতাংশ।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস মিষ্টি-কেক তৈরি হচ্ছে কলকাতায়
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, বেশ কিছু দিন ধরে বিশ্বব্যাংক এ নিয়ে গবেষণা এবং জরিপ করছে। তবে তাদের জরিপ এবং গবেষণা অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে করা। শিখন ঘাটতি এবং দক্ষতা ঘাটতির ক্ষতিটাকে তারা বড় করে দেখে।
তিনি বলেন, আসলে করোনার কারণে শিক্ষা এবং শিখন কার্যক্রমের যে ক্ষতি হয়েছে, তা শুধু আর্থিক নয়, একই সঙ্গে আর্থসামাজিক। কারণ, শিখন বঞ্চিত শিশুর আর্থসামাজিক অবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষতি কিছুটা পূরণে একটাই বড় কাজ তা হচ্ছে, ক্ষতিটাকে আমলে নেওয়া। তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সঠিক কর্মপরিকল্পনা নেওয়া এবং পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করা।