বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে ছাত্রলীগের সহিংসতার শিকার শিক্ষার্থীরা
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের প্রতি ছাত্রলীগের দাপটে নানা ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেই চলেছে। ফলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) নবীন শিক্ষার্থীকে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে রাতভর নির্মমভাবে শারীরিক, মানসিক নির্যাতন এবং বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে এমন দাবি তুলেছে মহিলা পরিষদ। ওই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানুর সই করা বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়।
সংবাদ বিবৃতিতে মহিলা পরিষদ জানায়, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি- ছাত্রলীগের দাপটের কারণে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের প্রতি নানা ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেই চলেছে। ফলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে নির্মমভাবে শারীরিক, মানসিক নির্যাতন ও জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে সেটার ভিডিও ধারণের ঘটনায় আমরা বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ।
এই ঘটনায় একদিকে যেমন নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। নারী শিক্ষার্থীদের মর্যাদা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছে। এছাড়া ভুক্তভোগীসহ শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। পাশাপাশি এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে।
জানা যায়, ইবির উদ্বোধনী ক্লাসে উপস্থিত হতে গত ৭ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা হলের ৩০৬ নম্বর রুমে এলাকার পরিচিত আপুর কাছে ওঠেন ওই নবীন ছাত্রী। গত ৯ ফেব্রুয়ারি ইবি ছাত্রলীগের কর্মী তাবাসসুম তাকে রুমে দেখা করতে বললে অসুস্থ থাকায় যথাসময়ে তিনি রুমে যেতে পারেননি। পরে ওই ছাত্রী দেখা করতে গেলে তারা তার সঙ্গে খারাপ আচরণ, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হল থেকে ঘাড় ধরে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন।
এ ঘটনার জের ধরে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগী তাবাসসুমসহ ৭-৮ জন ওই নবীন ছাত্রীকে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে নিয়ে যায়। এসময় তার মুখ চেপে ধরে নির্মমভাবে শারীরিক, মানসিক নির্যাতন ও জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে।
এ ঘটনা কাউকে জানালে তাকে হল থেকে বের করে দেওয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল করে দিবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। মঙ্গলবার সকালে নির্যাতনের শিকার ছাত্রী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।