প্রযুক্তির চর্চা করতে হবে মানুষের প্রয়োজনে: মোস্তফা জব্বার
মানব সভ্যতার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যত আবিষ্কার হয়েছে সবই মানব-কল্যাণের জন্য জানিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেছেন, পৃথিবীতে মানুষের জায়গা দখল করে নেবে এমন কোন যন্ত্র মানব সভ্যতার বিকাশে কোন কাজ করতে পারে না। বরং মানুষ যন্ত্র নির্মাণ করে তাকে সহায়তা করার জন্য এবং তার নিয়ন্ত্রণে থাকার জন্য সেটিই আবিষ্কারের প্রকৃত বিষয়।
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা কলেজের শহিদ আ.ন.ম. নজিব উদ্দিন খান খুররম অডিটোরিয়ামে তিন দিনব্যাপী ৮ম ডিসিএসসি বিজ্ঞান মেলা ২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মোস্তফা জব্বার বলেন, মানব সভ্যতার বিকাশের স্তরগুলো আমরা যদি বিন্যস্ত করি তাহলে বেশ কয়েকটি শিল্প বিপ্লব দেখতে পাব। প্রথম শিল্প বিপ্লব ছিল যখন বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার হয়, দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব ছিল যখন বিদ্যুৎ আবিষ্কার হয় আর তৃতীয় শিল্প বিপ্লব ইন্টারনেট বা তথ্য প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল। এখন আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলছি। যেখানে এমন একটি যান্ত্রিক যুগ শুরু হবে যা প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় প্রয়োগ করা হবে।
তিনি বলেন, আমি অবশ্য মনে করি আমরা ইতোমধ্যেই সেই সময় অতিক্রম করে ফেলেছি। আমাদের ধারণা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে যন্ত্র এসে মানুষের জায়গা দখল করে নেবে। তবে আমি সব সময় বলি মানুষের জায়গা দখল করে নেবে এমন যন্ত্র হয়না। বড় মানব সভ্যতার প্রয়োজনেই যন্ত্রের আবির্ভাব হয়েছে। সেই কারণেই জাপানিজরা বলছেন, আমরা এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নয় বরং পঞ্চম শিল্প-বিপ্লবের যুগে বসবাস করছি। এই বিপ্লবের বৈশ্বিক ছবি হচ্ছে মানুষ প্রযুক্তির চর্চা করবে কিন্তু বিজ্ঞান কিংবা প্রযুক্তি কোনটিই মানুষকে বাদ দিয়ে নয় বরং মানুষের জন্য, মানুষের দ্বারা এবং মানুষের প্রয়োজনে প্রযুক্তির চর্চা করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, আজকের বাস্তবতা হলো শুধুমাত্র বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীর বিজ্ঞান চর্চার করবে সেই দিনটা অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। পৃথিবীর আধুনিক প্রযুক্তির সাথে সাথে সবকিছু রূপান্তর হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলা চ্যালেঞ্জিং ছিল জনিয়ে তিনি বলেন, তার কারণ আমরা প্রথম দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সব কটা শিল্প বিপ্লব আমরা মিস করেছি। তবে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনের পর তাঁর বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়ে আমাদের প্রত্যেকের কাছে যে বাণীটা পৌঁছে দিয়েছিলেন সেটি হচ্ছে আমাদেরকে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করতে হবে। সেই পথ ধরে আজকে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে জায়গায় বাংলাদেশকে নিয়ে এসেছেন সেটি বিশ্বে অনুকরণীয়। বাংলাদেশের সার্বিক ডিজিটাল রূপান্তরের যে বীজ বপন বঙ্গবন্ধু বপন করেছিলেন ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চারাগাছে রূপান্তর করেছেন।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কম্পিউটারের বিস্তারের জন্য আমদানিকৃত কম্পিউটারের উপর থেকে শুল্ক এবং ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করেছিলেন। কম্পিউটার শিক্ষার বিস্তার ঘটনা ঘটিয়েছিলেন এবং যত রকমের ব্যবস্থা নেওয়া যায় তার সমস্ত কিছুই তিনি করেছিলেন। আজকের এই ৫২ বছর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের সাড়ে তিন বছর এবং প্রধানমন্ত্রী ১৫ বছর মোট এই ১৯ বছরের সময়কে আমাদের বাংলাদেশের জন্য স্বর্ণযুগ বলতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই দেশটা আজকের এই অবস্থায় অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর আগে পৃথিবীর কোন দেশ ডিজিটাল কর্মসূচির কথা ভাবেনি। বাংলাদেশকে ডিজিটাল করার ঘোষণার এক বছর পর ব্রিটেন ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে ডিজিটাল ব্রিটেন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তারও ছয় বছর পরে ভারত ডিজিটাল ইন্ডিয়া কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আমাদের ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তান ডিজিটাল পাকিস্তান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। অপরদিকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়ন করেছেন। ২০২২ সালের ৭ই এপ্রিল তিনি কর্মসূচি দিয়েছেন ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ ঘোষণা করার। তিনি কিন্তু একই সাথে বলেছেন আমার স্মার্ট বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভিত্তি হচ্ছে স্মার্ট মানুষ। এর মাধ্যমেই একটি উন্নত এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে স্থান করে নিবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ’ এর ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ইমরান রাহমান এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো: আজিজুল ইসলাম, ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ,উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ. টি. এম. মইনুল হোসেন, ঢাকা কলেজে বিজ্ঞান ক্লাবের আহ্বায়ক এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শরীফা সুলতানা, ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক ড. মোঃ আব্দুল কুদ্দুস সিকদার উপস্থিত ছিলেন।