বিচারপতি, মেজর আর অধ্যাপকরা মিলে সামলেছেন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব
বাংলাদেশের আইনবিভাগ, শাসনবিভাগ ও বিচারবিভাগের সব শাখার আনুষ্ঠানিক প্রধান এবং বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক (কমান্ডার ইন চিফ) রাষ্ট্রপতি। বর্তমানে রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ কর্তৃক নির্বাচিত হয়ে থাকেন। রাষ্ট্রপতির কার্যকালের মেয়াদ পাঁচ বছর। সরকারের এই প্রধান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রেরও প্রধান হয়ে থাকেন, যিনি রাষ্ট্রপতি হিসাবে পরিচিত হন।
প্রত্যেক সাধারণ নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণটি দেন রাষ্ট্রপতি। সংসদে পাস হওয়া প্রতিটি বিল আইনে পরিণত হয় রাষ্ট্রপতির সম্মতিক্রমে। বছরের প্রথম সংসদীয় অধিবেশনের প্রথম উদ্বোধনী ভাষণটিও তিনিই দেন। তাঁর এই ভাষণটিই সরকারি নীতির রূপরেখা হিসেবে গণ্য।
এছাড়া বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হচ্ছে তিনি। বর্তমান রাষ্ট্রপতির মতো এর আগে অনেকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। রাষ্ট্রপতির দণ্ডিত ব্যক্তির দণ্ডাদেশ স্থগিত, হ্রাস বা দণ্ডিতকে ক্ষমা করার অধিকার রয়েছে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ ২৩ এপ্রিল শেষ হচ্ছে। এর ৬০ কিংবা ৯০ দিন আগেই নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদকাল শেষ হয়ে আসায় নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক এ পদটি। মো. আবদুল হামিদ ছাড়াও স্বাধানীতার পর থেকে ১৯ জন রাষ্ট্রপতি এ পদে দায়িত্বপালন করেছেন। চলুন এক নজরে দেখা নেওয়া যাক তাদের সম্পর্কে-
০১. জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ভারত বিভাজন আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব দেন।
শুরুতে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি, এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রথমে ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল থেকে ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয়বার ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।
০২. সৈয়দ নজরুল ইসলাম (অস্থায়ী)
সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রধানতম পুরুষ, যার প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের অস্হায়ী বাংলাদেশ সরকার নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের কবল থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করে। এই ঘটনাটি বাঙালি জাতিসত্তাকে বিশ্ববাসীর সামনে গর্বিত পুনরুত্থানের সুযোগ করে দেয়।
১২ এপ্রিল ১৯৭১ সাল থেকে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সাল পর্যন্ত অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
০৩. আবু সাঈদ চৌধুরী
আবু সাঈদ চৌধুরী বাংলাদেশের একজন বিচারপতি এবং রাষ্ট্রপতি ছিলেন। এছাড়া, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার ছিলেন। তিনি ১৯২১ সালের ৩১ জানুয়ারী টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার নাগবাড়ি গ্রামের এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জমিদার পরিবার ছাড়াও, তার পিতা আবদুল হামিদ চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের স্পিকার ছিলেন।
তিনি টাঙ্গাইল এর বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় এর শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ১৯৪০ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৪২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতকোত্তর হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে তিনি লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করেন। তিনি ১২ জানুয়ারি ১৯৭২ থেকে ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭৩ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
০৪. মোহাম্মদ মোহাম্মদউল্লাহ
মোহাম্মদউল্লাহর পূর্ণ নাম মোহাম্মদ মোহাম্মদউল্লাহ। তিনি আইনজীবী, রাজনীতিক এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি ছিলেন সংসদ সদস্য, ডেপুটি স্পীকার ও স্পীকার। মোহাম্মদউল্লাহ ২১ অক্টোবর ১৯২১ সালে ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের সাইচা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মুনশী আবদুল ওয়াহাব। তিনি লক্ষ্মীপুর হাইস্কুল থেকে ১৯৩৮ সালে প্রবেশিকা পাস করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৩ সালে ইতিহাসে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। কলকাতার রিপন কলেজ থেকে তিনি ১৯৪৮ সালে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৮ সালেই এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি ঢাকা জেলা কোর্টে ১৯৫০ সালে আইন ব্যবসা শুরু করেন ও ঢাকা হাইকোর্টে ১৯৬৪ সাল থেকে আইন ব্যবসায়ে যোগ দেন। তিনি ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
০৫. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ভারত বিভাজন আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেন।
শুরুতে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি, এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রথমে ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল থেকে ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয়বার ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।
০৬. খন্দকার মোশতাক আহমেদ
খন্দকার মোশতাক আহমেদ বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ থেকে ৬ নভেম্বর ১৯৭৫ পর্যন্ত অঘোষিতভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। খন্দকার মোশতাক আহমেদ ১৯১৮ সালে ত্রিপুরা জেলার (বর্তমানে কুমিল্লা জেলা) দাউদকান্দির দশপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে বি.এল ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৪২ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম মহাসচিব।
০৭. রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম
বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত আইনবিদ এবং প্রথম প্রধান বিচারপতি। তিনি বাংলাদেশের ৬ষ্ঠ রাষ্ট্রপতি হিসাবে ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর থেকে ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম বর্তমান রংপুর জেলায় (তৎকালীন বাংলা প্রদেশের অংশ) ১৯১৬ সালের ৮ জুলাই জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি রংপুর জিলা স্কুলে পড়া লেখা করেন এবং পরবর্তিতে কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন। বিচারপতি সায়েম কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ালেখা করেন ও ইউনিভার্সিটি ল' কলেজ থেকে আইনে ডিগ্রি লাভ করেন।
০৮. মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান
জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের অষ্টম রাষ্ট্রপতি, প্রাক্তন সেনাপ্রধান এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সামরিক বাহিনী বাঙালি জনগণের উপর আক্রমণ করার পর তিনি তার পাকিস্তানি অধিনায়ককে বন্দি করে বিদ্রোহ করেন এবং সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
পরে ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের নামে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা সমর্থনে একটি বিবৃতি পাঠ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিয়াউর রহমান ২১ এপ্রিল ১৯৭৭ সাল থেকে ৩০ মে ১৯৮১ পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করেন।
০৯. বিচারপতি আব্দুস সাত্তার (অস্থায়ী)
আব্দুস সাত্তার বাংলাদেশের অষ্টম রাষ্ট্রপতি। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতি ছিলেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তিনি প্রথমে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এসময়ে তার বয়স ছিল ৭৬ বছর। পরে তিনি ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর তারিখে দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৬৬% ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
তার শাসনকালে সরকারের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ১৯৮২ সালে তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তার জায়গায় সামরিক আইন জারীর মাধ্যমে প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের হাতে চলে যায়। আব্দুস সাত্তার ৩০ মে ১৯৮১ থেকে ২৪ মার্চ ১৯৮২ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি ছিলেন।
১০. হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান ও রাজনীতিবিদ যিনি ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার দেশ পরিচালনাকে অনেকেই সামরিক একনায়তন্ত্রের সাথে তুলনা করেন। তিনি জাতীয় পার্টি নামক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন যা পরবর্তীতে বেশ কিছু উপদলে বিভক্ত হয়। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসন হতে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
১৯৮৩ সালে নির্বাচিত সরকারের অধীনে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালনকালে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং সামরিক শাসন জারীর মাধ্যমে দেশ শাসন করেন। দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুন:প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ঘোষণা করে তিনি ১৯৮৬ সালে সংসদীয় সাধারণ নির্বাচন দেন। এই নির্বাচনে তিনি স্বপ্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসাবে অংশ গ্রহণ করেন এবং পরে পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে গণবিক্ষোভের চাপে এবং সেনাবাহিনীর সমর্থনের অভাবে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
১১. বিচারপতি এ.এফ.এম আহসান উদ্দিন চৌধুরী
আ ফ ম আহসানউদ্দীন চৌধুরীর প্রকৃত নাম আবুল ফজল মোহাম্মদ আহসানউদ্দিন চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশের ১১তম রাষ্ট্রপতি। হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং ১৯৭৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর গ্রামে ১ জুলাই ১৯১৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও বিএল ডিগ্রি লাভ করেন। আহসানউদ্দীন চৌধুরী ২৭ মার্চ ১৯৮২ থেকে ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৩ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১২. হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান ও রাজনীতিবিদ যিনি ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার দেশ পরিচালনাকে অনেকেই সামরিক একনায়তন্ত্রের সাথে তুলনা করেন। তিনি জাতীয় পার্টি নামক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন যা পরবর্তীতে বেশ কিছু উপদলে বিভক্ত হয়। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসন হতে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
১৯৮৩ সালে নির্বাচিত সরকারের অধীনে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালনকালে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং সামরিক শাসন জারীর মাধ্যমে দেশ শাসন করেন। দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুন:প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ঘোষণা করে তিনি ১৯৮৬ সালে সংসদীয় সাধারণ নির্বাচন দেন। এই নির্বাচনে তিনি স্বপ্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসাবে অংশ গ্রহণ করেন এবং পরে পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে গণবিক্ষোভের চাপে এবং সেনাবাহিনীর সমর্থনের অভাবে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
১৩) বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহম্মদ (অন্থায়ী)
বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত আইনবিদ ও ৬ষ্ঠ প্রধান বিচারপতি এবং দুইবার দায়িত্বপালনকারী রাষ্ট্রপতি। তিনি প্রথমে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর হতে ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতি হিসাবে এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় থাকা-কালীন ১৯৯৬ সালের ২৩ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে পাঁচ বছরের মেয়াদে নিরপেক্ষ ভূমিকার জন্য প্রশংসিত ছিলেন।
১৪) বিচারপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস
আবদুর রহমান বিশ্বাস ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি। তিনি ১৯২৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর বরিশালের শায়েস্তাবাদ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন। তার আনুগত্য ছিল পাকিস্তান সরকারের প্রতি। আবদুর রহমান বিশ্বাস স্কুল ও কলেজ জীবন বরিশালে কাটে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (সম্মান) ও ইতিহাস এবং আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
প্রথমে তিনি স্থানীয় সমবায় ব্যাংকের সভাপতি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। শিক্ষাবিস্তারেরে উদ্দেশ্যে তিনি কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। এই কাজের জন্য সরকার ১৯৫৮ সালে তাকে স্বেচ্ছাসেবী সমাজ কর্মী হিসেবে স্বীকৃতি দান করে। ষাটের দশকে কিছু দিন বাবুগঞ্জ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে বরিশালে আইন পেশায় জড়িয়ে পড়েন। আবদুর রহমান বিশ্বাস রাষ্ট্রপতির পদে অদিষ্ট ছিলেন অক্টোবর ১০, ১৯৯১ সাল থেকে অক্টোবর ১০, ১৯৯৬ পর্যন্ত।
১৫) বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহম্মদ
বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত আইনবিদ ও ৬ষ্ঠ প্রধান বিচারপতি এবং দুইবার দায়িত্বপালনকারী রাষ্ট্রপতি। তিনি প্রথমে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর হতে ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতি হিসাবে এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় থাকা-কালীন ১৯৯৬ সালের ২৩ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে পাঁচ বছরের মেয়াদে নিরপেক্ষ ভূমিকার জন্য প্রশংসিত ছিলেন।
১৬) অধ্যাপক এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী
অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে তিনি উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০০১ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ক্ষমতায় আসার পর তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন। এর কিছুদিন পর ২০০১ সালের নভেম্বর মাসে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক।
এছাড়া তিনি একজন লেখক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, উপস্থাপক এবং সুবক্তা। ২০০২ সালে সৃষ্ট এক বিতর্কিত ঘটনার জের ধরে তিনি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ও পরবর্তীকালে আরেকটি রাজনৈতিক দল বিকল্প ধারা বাংলাদেশ গঠন করেন। তিনি ১৪ নভেম্বর ২০০১ সাল থেকে ২১ জুন ২০০২ পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৭) ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার
জমির উদ্দিন সরকার বাংলাদেশের একজন প্রথম সারির প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা। তিনি দুই দফা বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অধিকন্তু তিনি দুইবার বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পেশায় আইনজীবী। আওয়ামী মুসলিমের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। মাওলানা ভাসানীর সহচর।
১৯৭৫ পরবর্তীকালে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশী জাতীয়বাদী রাজনৈতিক ধারার প্রবর্তন। বর্তমানে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রথম সারির নেতা। এই দলের মনোনয়নে জাতীয় সংসদের সদস্য। তিনি ২১ জুন ২০০২ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর ২০০২ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৮) অধ্যাপক ইয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ
অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ছিলেন বাংলাদেশের একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৬ সালের ২৯ অক্টোবর তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত হবার জন্য শপথ গ্রহণ করেন।
পরে জরুরী আইন জারি করে ২০০৭ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি এই পদ ছেড়ে দেন। এই পদে তার স্থলাভিষিক্ত হন বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফখরুদ্দীন আহমদ। ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জিল্লুর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের কার্যকাল সমাপ্ত হয়। তিনি ২০০২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্বপালন করেন।
১৯) অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান
জিল্লুর রহমান বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এ যাবৎ দেশের সবকয়টি আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি এম এম রহুল আমিন তাকে বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গভবনে শপথ বাক্য পাঠ করান। তিনি ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সাল থেকে ২০ মার্চ ২০১৩ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে ছিলেন।
২০) মো. আব্দুল হামিদ
আব্দুল হামিদ হলেন একজন বাংলাদেশী প্রবীণ রাজনীতিবিদ। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি (ব্যক্তি হিসেবে ১৭তম)। দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি ২১তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে। তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার হিসেবে ১৪ জুলাই, ১৯৯৬ সাল থেকে ১০ জুলাই, ২০০১ সাল পর্যন্ত এবং ১২ জুলাই, ২০০১ সাল থেকে ৮ অক্টোবর, ২০০১ সাল পর্যন্ত স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন। নবম জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসাবে ২৫ জানুয়ারি, ২০০৯ সাল থেকে ২৪ এপ্রিল, ২০১৩ সাল পর্যন্তও দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের অসুস্থতাজনিত কারণে তার মৃত্যুর ৬ দিন পূর্বেই ১৪ মার্চ, ২০১৩ তারিখে তিনি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে আসীন ছিলেন। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় তাকে ২০১৩ সালে স্বাধীনতা দিবস পদকে ভূষিত করা হয়। আব্দুল হামিদ প্রথমে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেন তিনি। পাঁচ বছর মেয়াদপূর্তির পর ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
সংবিধানে উল্লেখিত তথ্যানুযায়ী, তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ প্রসঙ্গে সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একজন রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন। সংবিধানের ৫০(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘একাধিক্রমে হোক বা না হোক, দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।