টাকা দিয়ে মাকে ‘আত্মগোপনে’ পাঠিয়েছিলেন মরিয়ম মান্নান: পিবিআই

রহিমা বেগম এবং মরিয়ম মান্নান
রহিমা বেগম এবং মরিয়ম মান্নান  © টিডিসি ফটো

খুলনার আলোচিত মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগমের ‘নিখোঁজের’ ঘটনায় তদন্ত শেষ করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্তে উঠে এসেছে, নিখোঁজের ওই ঘটনা ছিল পরিকল্পিত এবং প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মরিয়ম মান্নান নিজেই দীর্ঘ সময় নিয়ে নিখোঁজের নাটক সাজিয়েছিলেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, জমি নিয়ে মরিয়ম মান্নানদের সঙ্গে প্রতিবেশীদের ঝামেলা চলছিল। মরিয়ম মান্নান বিভিন্ন সময় ওই প্রতিবেশীদের নামে জমি নিয়ে মামলা দিলেও তারা প্রতিবার নথিপত্র জমা দিয়েই বেরিয়ে গেছেন। সর্বশেষ প্রতিবেশীদের ফাঁসাতে মায়ের নিখোঁজ হওয়ার নাটক সাজান তিনি।

তদন্তে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার দিন মাকে আত্মগোপনে যেতে এক হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন মরিয়ম। এর পরেই আত্মগোপনে যান রহিমা বেগম। পুরো ঘটনাটি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিষয়টি অন্য ভাই-বোনদের কাছ থেকেও আড়াল করেন মরিয়ম। এমনকি এ ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে রহিমা বেগমের ছেলে মিরাজ ও দ্বিতীয় স্বামী বেলাল হাওলাদার আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন।

তদন্ত সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, এর আগেও রহিমা বেগম বেশ কয়েকবার কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। কিছুদিনের মধ্যে আবার ফিরেও আসতেন। এসকল কারণে নিখোঁজের মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে এজাহারে যাঁদের নাম দেওয়া হয়েছিল তাঁদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে চাননি মরিয়ম বেগমের দ্বিতীয় স্বামী বেলাল। এত ক্ষিপ্ত হয়ে সৎবাবাকেও গ্রেপ্তার করিয়েছিলেন মরিয়ম মান্নান।

তবে জিজ্ঞেসাবাদে রহিমা বেগম কোনো তথ্য প্রদান না করায় কিছু বিষয় অজানা রয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, মরিয়ম মান্নান ও তাঁর মা এবং বাদীকে বিভিন্ন সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তাঁরা মুখ ফুটে কোনো কথা বলছেন না। রহিমা বেগম শুধু একটা কথাই বলছেন—তিনি অপহৃত হয়েছিলেন। এর বাইরে কোনো কথা জিজ্ঞাসা করলেই তিনি চুপ করে থাকছেন। এসব কারণে তদন্তে কিছু বিষয় অজানা রয়ে গেছে।”

এ বিষয়ে খুলনা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানিয়েছেন, সম্প্রতি মামলার তদন্তের কাজ শেষ করে তা অনুমোদনের জন্য পিবিআইয়ের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদিত হলেই ওই প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে রহিমা বেগম নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ করেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ওই দিন দিবাগত রাত দুইটার দিকে খুলনা নগরের দৌলতপুর থানায় মায়ের অপহরণের অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রহিমার ছেলে মিরাজ আল সাদী। রহিমা বেগমকে অপহরণ করা হয়েছে—এমন অভিযোগ তুলে পরদিন ওই থানায় মামলা করেন আরেক মেয়ে আদুরী আক্তার।

ওই মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাঁদের প্রতিবেশী মঈন উদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মাদ জুয়েল ও হেলাল শরীফের নাম জড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই সময়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। বর্তমানে তাঁরা জামিনে।

মামলা পরবর্তী সময়ে মাকে ফিরে পেতে খুলনা এবং ঢাকায় মানববন্ধনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মরিয়ম। মরিয়মের কান্না দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মরিয়মের্ মাকে খুঁজে বের করার দাবিতে সরব হন। এমন পরিস্থিতিতে ২৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুরে মায়ের লাশ খুঁজে পেয়েছেন বলে দাবি করেন  মরিয়ম। 

দেশজুড়ে আলোচনার মাঝেই ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে অক্ষত ও স্বাভাবিক অবস্থায় রহিমা বেগমকে উদ্ধার করে পুলিশ। বর্তমানে রহিমা বেগম তাঁর মেয়ে আদুরী আক্তারের জিম্মায় খুলনা শহরের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন।

 


সর্বশেষ সংবাদ