হিরো আলমের অভিযোগের বিষয়ে যা বললেন ইসি-নির্বাচন কর্মকর্তা
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে ফল পাল্টানোর অভিযোগ তুলেছেন একতারা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। তার এই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) টেলিফোনে বগুড়া জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহমুদ হাসানকে এ নির্দেশ দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
এ ব্যাপারে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বলেন, বগুড়া-৪ আসনে উপনির্বাচনে ১০ কেন্দ্রে ফলাফল পাল্টানোর অভিযোগ তুলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম গণমাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নজরে আসার পর সিইসি ফোন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ পাওয়ার পর নন্দীগ্রাম উপজেলার সব কটি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম মেশিনে প্রাপ্ত ফলাফল পুনর্যাচাই করা হয়েছে। ঘোষিত ফলাফলের সঙ্গে ইভিএম মেশিনে পড়া ভোটের হিসাব শতভাগ নির্ভুল আছে। প্রয়োজনে হিরো আলম কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল নিয়ে যাচাই করতে পারেন।
এদিকে হিরো আলমের করা অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, 'এর কোনো ভিত্তি নেই। পত্রিকায় বিষয়টি আসার পরেই সকাল থেকে এটা আমলে নিয়ে আমরা রেকি করেছি। এর জন্য বগুড়া জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেছি। জেলা-উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, থানা নির্বাহী অফিসারের (টিএনও) সঙ্গে স্যার (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) নিজে কথা বলেছেন। তারা আমাদের নিশ্চিত করেছেন, এ ধরনের কোনো ইয়ে তাদের কাছে নেই। তাদের রেজাল্ট একদম হান্ড্রেড পারসেন্ট ওকে। এখানে কোনো রকম ইয়ে নেই।'
বিষয়টি নিয়ে কমিশন আর কোনো তদন্তে যাবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'না, আমরা স্যাটিসফায়েড। আমাদের কাছে যে রেজাল্ট শিটগুলো এসেছে, সেগুলো আমরা নিজেরাও ক্যালকুলেট করে দেখলাম আসলে কোথাও কোনো ব্যত্যয় নেই'।
ইসি রাশেদা সুলতানা আরও বলেন, একজন প্রার্থী যখন হেরে যায় তখন কিন্তু নানা ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রবণতা আমাদের দেশে আছে। এটা শুধু হিরো আলম সাহেব না, আমরা যতগুলো নির্বাচন করলাম, সব জায়গায় এ ধরনের প্রবণতা আমরা লক্ষ্য করেছি।'
কিছু কেন্দ্রে হিরো আলমের এজেন্টদের ফলাফল দেওয়া হয়নি এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, তিনি নন্দীগ্রামে খুব একটা এজেন্ট দেননি। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, 'আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, তিনি নন্দীগ্রামে খুব একটা এজেন্ট দেননি। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আমার যেটা কথা হয়েছে; তিনি বলেছেন, আমি এবং এসপি সাহেব নিজে কেন্দ্র ভিজিট করেছি। আমরা সেখানে গিয়ে তার কোনো এজেন্ট পাইনি। কাহালুতে উনার কিছু এজেন্ট ছিল। কাহালু উনার নিজের এলাকা। নন্দীগ্রামে উনার বাড়ি না।'
ইসি রাশেদা সুলতানা বলেন,'অন্যান্য প্রার্থীর এজেন্ট নেই, রেজাল্ট দেওয়া হয়নি এ ধরনের কোনো অভিযোগ নেই। যেহেতু উনি হেরে গেছেন উনি কিন্তু এই অভিযোগগুলো করছেন। টিভিতে আমি দেখেছি, উনি বলেছেন ভোট ভালো হয়েছে এবং একটা সাক্ষাৎকারে আমি দেখলাম, সাংবাদিক প্রশ্ন করেছেন, আপনি যদি হেরে যান তাহলে কীভাবে নেবেন? উনি বলেছেন, হেরে গেলে আমি ফলাফল মেনে নেব। উনি হেরে গেছেন, উনার কষ্ট হয়েছে, উনি কষ্টের নানাভাবে প্রকাশ করছেন। এটা তো উনি করতেই পারেন। একজন মানুষ বললেই তো আর হয়ে যায় না, প্রমাণ তো থাকতে হবে'।
জানা যায়, গতকাল বুধবার বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের কাছে মাত্র ৮৩৪ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন হিরো আলম। বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলার মোট ১১২টি কেন্দ্রে মোট বৈধ ভোট পড়েছে ৭৮ হাজার ৫২৪টি। এর মধ্যে ২০ হাজার ৪০৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন (মশাল)। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আশরাফুল হোসেন (একতারা) পেয়েছেন ১৯ হাজার ৫৭১ ভোট।
ফলাফল ঘোষণার পর গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বগুড়া শহরতলির এরুলিয়ায় নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন হিরো আলম। সেখানে তিনি ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ভোট চুরি হয়নি, ফলাফল ছিনতাই হয়েছে। ন্যায়বিচার পেতে উচ্চ আদালতে যাব।
সংবাদ সম্মেলনে হিরো আলম অভিযোগ করেন, ভোট গ্রহণের পর নন্দীগ্রাম উপজেলা প্রশাসনে স্থাপিত নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে যখন ফলাফল ঘোষণা চলছিল, তখন ৪৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ১ থেকে ৩৯টি কেন্দ্রের ফলাফল কেন্দ্রভিত্তিক ঘোষণা করা হয়। এরপর ফলাফল ঘোষণায় বিরতি দেওয়া হয়। কিছু সময় পর ১০ কেন্দ্রের ফল কেন্দ্রভিত্তিক ঘোষণা না করেই জাসদের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনকে হঠাৎ বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
এ বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বলেন, ‘অভিযোগ তো করলেই হবে না, তা প্রমাণ থাকতে হবে। তাঁর কাছে কী প্রমাণ আছে? আদালতে কেউ রিট করতেই পারেন, তবে তা প্রমাণ করতে হবে।’