২১ উপজেলায় একটিও নতুন বই পৌঁছায়নি
আগামী ১ জানুয়ারি সারাদেশে বই উৎসব উদযাপন করা হবে। তবে এখনও দেশের ২১টি উপজেলায় প্রাথমিক স্তরের কোনো বই পৌঁছায়নি। শুধু তাই নয়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে সারাদেশে প্রায় ১০ কোটি বই পৌঁছানো বাকি রয়েছে। ফলে নতুন বছরের প্রথম দিন সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে নতুন বছরের বই উৎসব আয়োজন এবং বই সরবরাহের এই চিত্র জানা গেছে।
জানা যায়, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে সারাদেশে ৩৪ কোটি ৬১ লাখ ৬৩ হাজার পাঠ্যবই বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরে ৯ কোটি ৯ লাখ ৫৩ হাজার এবং মাধ্যমিক স্তরে ২৪ কোটি ৬৩ লাখ ১০ হাজার বিতরণ হবে। গতকাল রোববার পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরে সাড়ে ৬ কোটি বই বিভিন্ন উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। আর মাধ্যমিক স্তরে ১৮ কোটি বই পাঠানোর কাজ শেষ হয়েছে।
এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন বছরের প্রথম দিনে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হবে না। তবে কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসে যেন খালি হাতে বাসায় ফেরত না যায় সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে ৮০ শতাংশ নতুন বই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পৌঁছানোর কথা। মাধ্যমিকে ৮০ শতাংশ বই পৌঁছানো গেলেও প্রাথমিক স্তরে এই পরিমাণ বই পাঠানো নিয়ে শঙ্কায় খোদ এনসিটিবির কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান মো. ফরহাদুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রাথমিক স্তরে বই ছাপানোর কাজ দেরিতে শুরু হয়েছে। প্রাথমিকের বই ছাপানোর সাথে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কিছু ঝামেলা ছিল। তারা বই ছাপানোর কাজ দেরিতে শুরু করায় এই স্তরের বই পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরে ৬৮ শতাংশ বই পৌঁছে গেছে। আর মাধ্যমিকে এই সংখ্যা ৭৭ শতাংশ। আমরা আশা করছি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ৮০ শতাংশ বই সব উপজেলায় পৌঁছে যাবে।
২১ উপজেলায় কোনো বই পৌঁছায়নি
এনসিটিবির বই বিতরণের সাথে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশের ২১টি উপজেলায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের কোনো বই এখনো পৌঁছায়নি। ফলে এই উপজেলাগুলোতে বই উৎসব নিয়ে বড় ধরনের সংশয় দেখা দিয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই উপজেলাগুলোতে বই পাঠানোর জন্য মাধ্যমিকের বই পাঠানোর কাজে ধীরগতি দেওয়া হয়েছে।
এনসিটিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, যে ২১ উপজেলায় এখনো কোনো বই পৌঁছায়নি সেগুলোর মধ্যে অধিকাংশই খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলা। এছাড়া চট্টগ্রামের পটিয়া, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী; পটুয়াখালীর বাউফল; পাবনার চাটমোহর এবং নওগাঁ জেলার সাপাহার ও মান্দা উপজেলায় প্রাথমিক স্তরের কোনো বই পৌঁছায়নি।
ওই সূত্র আরও জানায়, এই ২১ উপজেলায় বই ছাপানোয় দেরি হওয়ায় বই পৌঁছানো নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। উপজেলাগুলোর বই ছাপানোর দায়িত্ব রয়েছে দুটি প্রতিষ্ঠানের ওপর। এর একটি দশদিশা প্রিন্টার্স। আরেকটি হলো জাহানারা প্রিন্টার্স। দুটি প্রতিষ্ঠানকেই সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) দ্রুত বই সরবরাহের তাগাদা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে এনসিটিবি।
এ প্রসঙ্গে এনসিটিবি চেয়ারম্যান জানান, ২১টি উপজেলায় আমরা এখনো কোনো বই পাঠাতে পারিনি। তবে আজ (সোমবার) সকালে একটি উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বাকি উপজেলাগুলোতেও দ্রুত সময়ের মধ্যে বই পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি ৩১ ডিসেম্বরের আগেই এই উপজেলাগুলোতে বই পাঠাতে পারবো।
বইয়ের মান নিয়ে আপোস
জানা গেছে, এনসিটিবির বই ছাপানোর দরপত্রে কাগজের উজ্জ্বলতা ৮৫ হওয়ার কথা। তবে পাল্প সংকটের অজুহাতে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কাগজের উজ্জ্বলতা ৮২ শতাংশ করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের সেই দাবি অনানুষ্ঠানিকভাবে মেনে নেওয়ার পর মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো আরও নিম্নমানের কাগজে বই ছেপেছেন।
তবে কাগজের উজ্জ্বলতা ৮২ শতাংশের নিচে আসেনি বলে দাবি এনসিটিবির। এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাজারে কাগজের সংকট থাকায় এবার মানের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে এটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের কোনো অসুবিধা হবে না। কাগজের উজ্জ্বলতায় দুই/তিন শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে। এটি করা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মৌখিক নির্দেশনায়।
এ প্রসঙ্গে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, পাল্পের সংকটের কারণে বইয়ের উজ্জ্বলতায় কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে বইয়ের অন্যান্য সব বিষয় ঠিক রয়েছে। আমরা বইয়ের মানের ক্ষেত্রে কোনো ‘কম্প্রোমাইজ’ করিনি বা ছাড় দেইনি। যারা নিম্নমানের বই সরবরাহ করেছিল তাদের বই বাতিল করা হয়েছে।