পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে নৈরাজ্য বন্ধের আহ্বান ২৪ বিশিষ্টজনের
মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও কারিগরি স্তরের পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ‘নৈরাজ্য’ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ২৪ বিশিষ্টজন।
শুক্রবার (১১ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
বিবৃতিদাতারা হলেন— পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সুলতানা কামাল, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, রাশেদা কে চৌধূরী, রামেন্দু মজুমদার, ডা. সারওয়ার আলী, নুর মোহাম্মদ তালুকদার, রানা দাশগুপ্ত, খুশী কবির, এম এম আকাশ, এস এম এ সবুর, রোবায়েত ফেরদৌস, সালেহ আহমেদ, পারভেজ হাসেম, আবদুল ওয়াহেদ, এম এ সামাদ, সেলু বাসিত, রনজিৎ কুমার সাহা, এ কে আজাদ, অলক দাসগুপ্ত, আবদুর রাজ্জাক, আবদুল আলীম, দীপায়ন খীসা ও গৌতম শীল।
বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও কারিগরি স্তরের পাবলিক পরীক্ষার সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক, নারীর প্রতি অবমাননাকর এবং একজন লেখকের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত ও অবমাননাকর প্রশ্ন সংযোজনের ঘটনা ঘটেছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত, কোনও অবস্থাতেই এসব মেনে নেওয়া যায় না।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাইকে সৃজনশীল হয়ে উঠতে হবে। সম্প্রতি পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, নারীর প্রতি অবমাননাকর, ব্যক্তির প্রতি বিদ্বেষমূলক প্রশ্নপত্র শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিক্রিয়াশীল, সাম্প্রদায়িক ও আধুনিকতাবিরোধী প্রবণতার চিত্র উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন: হদিস পাওয়া যাচ্ছে না শিক্ষক প্রশান্ত কুমারের।
বিবৃতিতে জানানো হয়, একারণে শুধু প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী ও মডারেশন বোর্ডের সদস্যদের যোগ্যতা ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করার পাশাপাশি সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ভাবার সময়ও এসেছে। পাশাপাশি মৌলবাদী একটি গোষ্ঠী বিজ্ঞানশিক্ষার পঠনপাঠন থেকে চার্লস ডারউইনের যুগান্তকারী বিবর্তনবাদ তত্ত্ব বাদ দেওয়ার যে দাবি তুলেছে, তাও আমাদের বিচলিত করছে। এসব বিষয়ে বাংলাদেশে বিজ্ঞানশিক্ষা ও মুক্তচিন্তার প্রসার বাধাগ্রস্ত করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্র ও সমাজকে অন্ধকার, সাম্প্রদায়িকতা আর কূপমণ্ডূকতায় ঠেলে দেবে।
বিবৃতিদাতারা বলেন, ৩০ লাখ জীবনের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পরও একটি সর্বজনীন, অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। হেফাজতের ১৩ দাবি মেনে নিয়ে এই শিক্ষাকে আরও পশ্চাৎপদ ও প্রতিক্রিয়াশীল করা হয়েছে। দেশের শিশুদের একটি বিরাট অংশ শিক্ষা নিচ্ছে সরকার নিয়ন্ত্রিত আলিয়া মাদ্রাসা ও সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা কওমি মাদ্রাসায়। অনেক বিতর্কের মধ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে সৃজনশীল পদ্ধতি প্রবর্তনের পরও শিক্ষকরা নিজেদের এই পদ্ধতির উপযোগী করে গড়ে তুলতে পেরেছেন কিনা, তা নিয়ে এখনও প্রশ্ন আছে।
প্রসঙ্গত, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় প্রথম দিনই দুই শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্নপত্র নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বাংলা প্রথমপত্রের প্রশ্নপত্রে একটি উদ্দীপকে মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেওয়ার মতো কথামালাযুক্ত প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে। আর কুমিল্লা বোর্ডের প্রশ্নে ‘পীর’ সংক্রান্ত শব্দগত দিক জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষা প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।