লালন নিয়ে গবেষণা করতে এসে সাধুকে বিয়ে করলেন ফরাসি তরুণী
ফকির লালন শাহকে নিয়ে গবেষণার জন্য সুদূর ফ্রান্স থেকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে আসেন দেবোরা কিউকারম্যান নামের এক তরুণী। গবেষণার এক পর্যায়ে ভালো লেগে যায় লালন রীতি। এরপর আর ফিরে যাননি দেশে। বদলেছেন নাম, বিয়ে করেছেন সাধুকে। থাকছেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে।
ফ্রান্সের দেবোরা কিউকারম্যান এখন দেবোরা জান্নাত নামে পরিচিত। বাংলাদেশে থাকলেও মাঝে মাঝে যান ফ্রান্সে বেড়াতে। জানা গেছে, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম গবেষণার কাজে বাংলাদেশে আসেন দেবোরা কিউকারম্যান। এরপর প্রখ্যাত বাউল ফকির নহির শাহের শিষ্য হন। অবিবাহিত দেবোরা গুরুর আস্তানায় বসবাসকারী নহির শাহের আরেক শিষ্য রাজনকে বিয়ে করেন। এখনো গুরুর কাছে আত্মিক শান্তি ও সৃষ্টি রহস্য খুঁজতে দীক্ষা নিচ্ছেন। ফকির লালন শাহকে যতই জেনেছেন ততই তার প্রেমে পড়েছেন তিনি। বেড়েছে শ্রদ্ধাভক্তি ও প্রেমবোধ।
দেবোরা জান্নাত প্যারিসের মেয়ে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। মা চিকিৎসক এবং বাবা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী দেবোরা খুব পরিশ্রমী, মানবিক, স্পষ্টবাদী ও প্রতিবাদী ছিলেন। তিনি একজন ভালো অনুবাদক। দেশে থাকাকালীন ফরাসি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদের কাজ করেছেন। বাংলাদেশে এসেও তিনি অনুবাদের কাজ করেছেন। তিনি দর্শনে এমএ ও ইয়োগার শিক্ষক ছিলেন। ২০০৭ সালে লন্ডন কিংস্টোন ইউনিভার্সিটি থেকে নৃবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। কাজ করেছেন সিনেমায়ও।
তিনি জানান, আমি শান্তি খুঁজে পেয়েছি লালন দর্শনে। তাই আর ফ্রান্সে ফিরে যাব না। লালনের দেশে গুরুজি নহির শাহর শিষ্য হিসেবে আমৃত্যু সাধুসঙ্গ নিয়ে থাকতে চাই। দেহ কেবলমাত্র সবকিছু বয়, মরে গেলে লাশ মাত্র। আমি আমার মরদেহটি এই কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের প্রাগপুরের হেম আশ্রমে রেখে দিতে বলব। মাজার হবে এখানেই।
তিনি আরও জানান, আমি বাংলাদেশে সাধুসঙ্গ দেখতে এসেছিলাম গবেষণার জন্য। কিন্তু শেষ বেলায় সিদ্ধান্ত নিতে হলো কোনটা আমার জন্য বেশি জরুরি। সামাজিক জীবন আর একটা সার্টিফিকেট অর্জন নাকি গুরুকে ধরে সত্যিকারে ভক্ত হওয়া। এ সময় সাধকের আধ্যাত্মিকতা দেখে লালন দর্শনের প্রেমে পড়ে যাই। খ্যাতি ও অর্থের মোহ পিছু ঠেলে থেকে যাই এ দেশে। মাঝে মধ্যে মাতৃভূমি ও পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে প্যারিসে যাই। তারাও বাংলাদেশে আসেন। তাছাড়া আত্মীয়দের সাথে ফোনে যোগাযোগ আছে।
দেবোরাহ জান্নাতের স্বামী রাজন ফকির জানান, আমি দেখতে একজন বিদেশী মানুষকে বিয়ে করেছি। কিন্তু তার আচরণ, কথাবার্তা, চালচলন, মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা কোনো কিছুই বিদেশীদের মতো নয়। সে বাংলাদেশ এবং এদেশের মানুষকে ভালোবাসে। এজন্য আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই।