এক যুগেও হয়নি শিক্ষা আইন, খসড়াতেই আটকা
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে কেবল আলোচনাই হচ্ছে। এই চূড়ান্ত হচ্ছে, তো আবার পিছিয়ে যাচ্ছে। একটি আইন প্রণয়ন করতে এত দীর্ঘ সময় লাগার উদাহরণ দেশে আর আছে কি না, তা সংশ্লিষ্ট কেউ বলতে পারেন না। মূলত নোট-গাইড বা সহায়ক বই এবং কোচিং-প্রাইভেটের মতো কিছু বিষয় রাখা না-রাখা নিয়েই আইনের খসড়াটি এত দীর্ঘ বছর ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে।
তবে শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখছে না প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন। আইনটি প্রণয়নে দীর্ঘ এক যুগ ধরে চলেছে আলোচনা-পর্যালোচনা। ২০১১ সাল থেকে বৈঠক হয়েছে সর্বমোট ৫৩ বার। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আইনের খসড়া তুলে দিয়ে অংশীজনের মতামত নেওয়া হয়েছে অন্তত দু'বার। দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও শিক্ষকরা দিয়েছেন অভিমত। দীর্ঘ এ সময়ে আইনের খসড়া বারবার কাটাছেঁড়া হয়েছে। নীতিগত অনুমোদন নিতে মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠেছে দু'বার। এর পরও আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এখন আইনটি আদৌ হবে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে।
আইনটি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে পাঁচ দফা বৈঠক করেছে এ মন্ত্রণালয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের আইনের খসড়া সন্তুষ্ট করতে পারেনি সরকারের নীতিনির্ধারকদের। ফলে দীর্ঘ ১২ বছর পর এসে শূন্য ফলাফল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই কর্মযজ্ঞের। সর্বশেষ পঞ্চমবারের মতো পর্যালোচনা শেষে প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের খসড়া ফেরত দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে দ্বিতীয়বার সুযোগ দিতে শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বান
জানা গেছে, আইনটি বারবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ফেরত আসায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও নিজেদের দুর্বলতাগুলো বুঝতে পেরেছে। আইনের প্রস্তাবিত খসড়ায় এমন সব বিষয় যুক্ত করা হয়েছিল, যেগুলো সময়ে সময়ে পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে। অথচ আইন চাইলেই পরিবর্তন করা যায় না। একটি আইন পরিবর্তন মানে পাঁচ থেকে আটটি ধাপ পার করে সংসদে পাস হতে হয়। তাই শিক্ষা আইনে মৌলিক বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন খসড়া করার বিষয়টি নিয়ে সর্বশেষ সরকারের দায়িত্বশীল মহলে আলোচনা হয়েছে।
সূত্র জানায়, শিক্ষা আইন করা ঠিক হবে কিনা সে বিষয়েও চিন্তা করছে মন্ত্রণালয়। প্রচলিত বিষয়, যেগুলো দ্রুত পরিবর্তনের প্রশ্ন আসতে পারে সেগুলো বিধি-প্রবিধি দিয়ে চলার বিষয়টি প্রাধান্য পেতে পারে। তাই শিক্ষা আইনের ভবিষ্যৎ আপাতত অন্ধকারাচ্ছন্ন।
‘শিক্ষা আইন কি আপাতত হচ্ছে না’- এই প্রশ্নে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, ‘প্রস্তাবিত আইনটির ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে কিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিষয়গুলো আমরা ভালোভাবে দেখে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব।’
নীতিমালা এক যুগের বেশি হয়ে গেছে। এটা সংশোধনের পর আইনের খসড়া নতুনভাবে হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পর্যবেক্ষণগুলো দেখে তারপর সিদ্ধান্ত।
সর্বশেষ গত ২৭ অক্টোবর নতুন কিছু পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত করতে শিক্ষা আইনের খসড়া ফের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর আগেও গত বছরের ১ জানুয়ারি কিছু পর্যবেক্ষণসহ এই আইনের খসড়া ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
সর্বশেষ খসড়া ফেরত সম্পর্কে সংশ্নিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, নথিতে অফিসিয়ালি ‘অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা’র কথা বলা হলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে আপাতত আইনটির খসড়া রেখে দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, অর্থনীতিবিদ ড. ফরাসউদ্দিন, জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ড. খলীকুজ্জমান আহমদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ প্রমুখ আইনের খসড়া প্রণয়নে সময় ও শ্রম দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।