০১ নভেম্বর ২০২২, ১০:৩৯

এক বছরে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ ১২ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের

২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।  © সংগৃহীত

পণ্য বিক্রির জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম আদায় করা হাজার হাজার কোটি টাকার যথাযথ ব্যবহার করেনি দেশের অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। গ্রাহকের কাছ থেকে এক বছরে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার (১০ হাজার ৪৫০ কোটি) কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে দেশের শীর্ষ ১২ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। এ অর্থের ৩৪ শতাংশই অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। কোম্পানিগুলো এসব অর্থ সংগ্রহ করেছে ব্যাংক ও মোবাইল আর্থিক সেবার ৮৬টি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে।

সোমবার (৩১ অক্টোবর) বাংলা‌দেশ ব্যাংকে অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

ইউনিটের ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- এ খাতের সন্দেহজনক ৫০টি প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিচালিত তদন্তে ১২টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের তহবিল অপব্যবহারের সন্দেহ রয়েছে। ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন ব্যক্তিদের কাছেও গেছে এসব টাকা। অভিযুক্ত ১২টি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা না হলেও ইভ্যালি ডটকমসহ দেশের নামিদামি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এ তালিকায় রয়েছে বলে জানিয়েছে বিএফআইইউর একটি সূত্র। 

প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অর্থবছরে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেনের ঘটনা বেড়েছে প্রায় ৬২ শতাংশ। এর মধ্যে ব্যাংক খাতেই বেড়েছে প্রায় ৭৮ শতাংশ। এ সময়ে দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বড় অঙ্কের নগদ লেনদেন হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সন্দেহ, চোরাচালানের কারণে এসব জেলায় নগদ লেনদেন বেশি হয়েছে।

বিএফআইইউর প্রতিবেদন বলছে, সন্দেহজনক ৫০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৩টি ই-কমার্স, ৫টি অনলাইনে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান, ৭টি অনলাইন এমএলএম কোম্পানি, ২টি অনলাইন বেটিং অ্যাপ এবং অন্যান্য ৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২টি ই-কমার্সের সদস্য। তবে গ্রাহকের তহবিল অপব্যবহার করা প্রতিষ্ঠানগুলোর কতটি ই-কমার্সের সদস্য সেটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।

আরও পড়ুন: চলন্ত লিফটে আটকে পড়েছেন নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএফআইইউর এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা তহবিল ওই ১২ প্রতিষ্ঠান কীভাবে ব্যবহার করেছে সেটিই মূলত প্রতিবেদনে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা দেখেছি, প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের অর্ডার অনুযায়ী দেওয়া অগ্রিম অর্থের ৬৬ শতাংশের বিপরীতে পণ্য সরবরাহ করেছে। বাকি ৩৪ শতাংশ তহবিল বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়েছে যা আমাদের কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এটি খতিয়ে দেখার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, গ্রাহকদের পণ্য অর্ডারের বিপরীতে ১২টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ১০ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা পেয়েছে। এর মধ্যে ৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা অর্থাৎ ৬৬ শতাংশ গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহের বিপরীতে ব্যবহার হয়েছে। বাকি ৩৪ শতাংশ অর্থাৎ ৩ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা পণ্য সরবরাহে নয়, অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক ও এমএফএস থেকে ৬১০ কোটি বা ৬ শতাংশ টাকা নগদে উত্তোলন করা হয়েছে। এ টাকা কোথায় কী কাজে ব্যবহার হয়েছে, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি বিএফআইইউ। এ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার হয়েছে ৪৪১ কোটি টাকা। এ টাকা বিদেশ ভ্রমণের পাশাপাশি বিলাসীপণ্য ও ফ্ল্যাট ক্রয়, ব্যাংকে এফডিআর ও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হয়েছে।

এ ছাড়া প্রায় ১৪ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন করেছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানেরই একটি অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তরের ঘটনা ঘটেছে সর্বাধিক। ১২ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও লেনদেন করেছে ৫৯৩ কোটি টাকা। এ নিয়েও সন্দেহ রয়েছে বিএফআইইউর। তাদের পরিচালন ব্যয়েও জটিলতা পেয়েছে দেশের কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থাটি। অনেক অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ও পরিচালন ব্যয় খাতে দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে ৪৪ কোটি টাকার ব্যয় নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিএফআইইউর।

আরও পড়ুন: টুইটার কিনেই একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে চলেছেন ইলন মাস্ক

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ২৪৪টি সন্দেহজনক লেনদেন ও কার্যক্রমের রিপোর্ট করেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই রয়েছে ৪৯টি লেনদেন নিয়ে সন্দেহ, আরেকটি প্রতিষ্ঠানের ২৩টি। প্রতিবেদনে সন্দেহজনক ২০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা এবং লেনদেনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। দেখা গেছে, মাত্র ২০টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে ৫৫৯টি। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলোতে ডিপোজিট জমা হয়েছে ১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে উত্তোলনের পর স্থিতি ছিল মাত্র ১৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা।