২৪ অক্টোবর ২০২২, ২৩:৫৯

মানবেতর অবস্থায় ঢাবির এসএম হলের বারান্দায় থাকা শিক্ষার্থীরা

  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রতিষ্ঠাকালীন আবাসিক হল সলিমুল্লাহ মুসলিম হল (এসএম হল)। কালের পরিক্রমায় কাঠামোগত ভাবে এই হলটি এখন নড়বড়ে অবস্থায়। খসে পড়ছে ছাদের সুন, সুরকী, দেয়াল আর ছাদে ধরেছে ফাটল। ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি শিক্ষার্থীকে এটাচ (বরাদ্ধ) দেয়া, ছাত্র জীবন শেষেও দীর্ঘদিন হলে অবস্থানের কারণে বৈধ শিক্ষার্থীদের থাকতে হয় বারান্দায়। 

তবে হলে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পর নতুন করে শিক্ষার্থীদের এটাচ দেয় বন্ধ হয় ২০২০-২১ সেশন থেকে। এখন বারান্দায় যারা অবস্থান করছেন তারা সবাই ২০১৯-২০ সেশন অর্থাৎ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সোমবার (২৪ অক্টোবর) দিবাগত রাতে ঘূর্ণিঝড় 'সিত্রাংয়ের' তান্ডবে বারান্দায় অবস্থায় করতে পারছেন না তারা। বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ার ঝাপটায় বইখাতা, বিছানাপত্র সব ভিজে একাকার। 

এতো রাতে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই৷ কেউ অবস্থান নিয়েছেন মসজিদের হলে। আবার কেউ অন্য কোনো হলে, অন্য কোনো বন্ধুর রুমে জায়গা খুঁজতে বেরিয়েছেন। কেউ নিরুপায় হয়ে আপন মনে বলছেন, ‘ধরনী দ্বিধা হও’। 

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমালোচনা করে অনেক শিক্ষার্থীকে ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা যায়। মিজানুর রহমান সাকিল নামে একজন লিখেছেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটপাতে যে সকল মানুষ ঘুমায় তারা আর এসএম হলের বারান্দায় থাকা শিক্ষার্থীরা আজ সমান সিচুয়েশনে!'

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শামীম আহমেদ বলেন আমরা, ৩য় বর্ষের সবাই সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের বারান্দায় থাকি, আজকে ঝড়ে এতো বাজে পরিস্থিতি হইছে, ঘুমানোর মতো পরিস্থিতি নাই। উপর থেকে ছাদ ভেঙে পরলো দেখলাম একজনের বেডে, বইগুলো ভিজে যাচ্ছে, জামাকাপড় উড়ে যাচ্ছে। 

তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মামুন খান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের পর আর নতুন করে কোন শিক্ষার্থী বরাদ্ধ দেয়া হয়নি, তার মানে এই হলের সবচেয়ে নবীন শিক্ষার্থীরা সবাই ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বিগত ৩ শিক্ষাবর্ষ হতে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের বারান্দায় অন্তত ১০০ জন শিক্ষার্থী থাকেন যারা প্রায় সবাই তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বিগত তিন বছর ধরে আমরা বারান্দায় থাকছি, আমাদের জিনিসপত্রের কোন নিরাপত্তা তো নেই ঝড় বৃষ্টি এবং শীতের সময় বারান্দায় অবস্থান করাও অসম্ভব হয়ে যায়। তিনবছর ধরে আমরা শতাধিক শিক্ষার্থী বারান্দায় মানবেতরভাবে থেকে যাচ্ছি অথচ আমাদের ব্যাপারে সর্বমহল যেন দেখেও না দেখার ভান করে আছে।

এ বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মজিবুর রহমানকে বলেন, হলের বারান্দায় কোনো শিক্ষার্থী থাকার কথা না। আমরা সেখানে তাদেরকে অবস্থান করতে নিষেধ করেছি, কেননা সেটি এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। আর আমার কাছে রিপোর্ট এসেছে সেখানে যারা অবস্থান করছে তারা মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্র।  

সেখানে সবাই তৃতীয় বর্ষের বৈধ শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছে বলে জানালে তিনি বলেন, তাহলে তাদের আগামীকাল আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলবেন। আর আজকের জন্য তাদেরকে টিভি রুমে অবস্থান করতে বলবো। আমাদের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে কোনো মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থী হলে থাকবে না। আর যে রুম আছে সেখানে আমাদের সকল বৈধ শিক্ষার্থী সিট হয়ে যাবে। ঝূঁকিপূর্ণ বিল্ডিংটা ভেঙে নতুন প্ল্যান পাশ হয়ে গেছে, খুব দ্রুতই কাজ শুরু হবে।