১৯ অক্টোবর ২০২২, ০৮:২৪

রূপপুরে দ্বিতীয় পরমাণু চুল্লি বসছে আজ

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র  © সংগৃহীত

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের রি-অ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল (পারমাণবিক চুল্লি পাত্র) বসছে আজ বুধবার। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটি। এখানে মূল জ্বালানি (ইউরেনিয়াম) থাকবে। এটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের হৃৎপিণ্ড হিসেবে পরিচিত।

বুধবার (১৯ অক্টোবর) সকাল ১০টায় গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি এ কাজের উদ্বোধন করবেন। অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত থাকবেন রুশ আণবিক শক্তি সংস্থা-রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সিই লিখাচেভ।

এর আগে গত বছরের ১০ অক্টোবর প্রথম ইউনিটের রি-অ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন তিনি। পারমাণবিক চুল্লি স্থাপন অনুষ্ঠান ঘিরে নতুন রূপে সাজানো হয়েছে পাবনার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা।

রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। প্রকল্প পরিচালক ও পরমাণুবিজ্ঞানী মো. শৌকত আকবর বলেন, প্রথম ইউনিটের অনুকরণে দ্বিতীয় ইউনিটের রি-অ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপন করা হবে। দ্বিতীয় ইউনিটের ভৌত কাঠামোর ভেতরে রি-অ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের মাধ্যমে প্রায় সব ধরনের পারমাণবিক যন্ত্রাংশ স্থাপন সম্পন্ন হবে। এর ফলে এই ইউনিটের রি-অ্যাক্টর ভবনের ভেতরের কাজ প্রায় শেষ হয়ে যাবে।

দুটি ইউনিটে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৩ সালের শেষ দিকে প্রথম ইউনিট থেকে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট এবং ২০২৪ সালের শেষ দিকে দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে টানা ৬০ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে। অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আরো ২০ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। প্রচলিত জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে খরচ, তার চেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে এখান থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে বলে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

বিদ্যুতের গ্রিডলাইনের অগ্রগতির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সময়সূচি অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যেই এগোচ্ছি, কিন্তু যারা (পিডিবি) বিদ্যুৎ নেবে, তাদেরও তো প্রস্তুত থাকতে হবে। ’ গ্রিডলাইনের অগ্রগতি কত শতাংশ হয়েছে, জানতে চাইলে মন্ত্রী কিছু বলতে রাজি হননি।

আরও পড়ুন: রাজধানীতে আজ কখন কোথায় লোডশেডিং

রাশিয়ার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, আর্থিক ও প্রকল্প বাস্তবায়নসহ সার্বিক সহযোগিতায় নির্মিত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এতে স্থাপন করা হচ্ছে রাশিয়ার উদ্ভাবিত সর্বশেষ প্রযুক্তি থ্রিজি (প্লাস) ভিভিইআর ১২০০ মডেলের রি-অ্যাক্টর। রোসাটম প্রকৌশল শাখা এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। রূপপুর প্রকল্পে ৩৩ হাজার লোক কাজ করে। তার মধ্যে বিদেশি জনশক্তি রয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় হবে ১২.৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি)। এই প্রকল্পের ৯০ শতাংশ টাকা ঋণ দিয়েছে রাশিয়া। একই সঙ্গে আন্তঃরাষ্ট্রীয় কয়েকটি চুক্তির মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে রুশ ঠিকাদার এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি এটি পরিচালনার জন্য জনবল প্রশিক্ষণও দিচ্ছে রাশিয়া।

প্রকল্প পরিচালক শৌকত আকবর বলেন, করোনা পরিস্থিতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব এই প্রকল্পে এখনো পড়েনি। ২০২৩ সালের শেষ দিকে প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ হবে। এরপর কমিশনিং শুরু হবে। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত প্রথম ইউনিটের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আর পুরো বিদ্যুৎ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি ৫৩ শতাংশ। ২০২৪ সালের মাঝামাঝিতে দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শেষ হবে। প্রথম ইউনিটের জ্বালানি আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে চলে আসবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ৭৩০ মেগাওয়াট। রূপপুরের বিদ্যুৎ যুক্ত হলে উৎপাদন সক্ষমতা সাড়ে ২৭ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে। তখন দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার সাড়ে ৯ শতাংশই যাবে রূপপুর থেকে।

২০১৪ সালের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন।