বিতর্ক শিক্ষার্থীদের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ গুরুত্ব বহন করে: স্পিকার
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, বিতর্ক প্রতিযোগিতা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ন গুরুত্ব বহন করে। বিশেষ করে আমাদের শিক্ষার্থী ভাই-বোনেরা বির্তক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। যদি এধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে পারি, তা তাদের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। কেননা আমাদের ছেলে-মেয়েরা অত্যন্ত মেধাবি। তারা তাদের লেখাপড়ায় মেধা ও যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে থাকে। লেখাপড়ার বাহিরেও যে আরেকটি জগৎ আছে, সে সম্পর্কে জানা এবং সে জগতের সদস্য হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে।
শনিবার (১৫ অক্টোবর) রাতে চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে তিন দিনব্যাপী ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ স্মারক জাতীয় বিতর্ক উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, যেকোন বিষয়ে পক্ষে বিপক্ষে ধারণা যুক্তিসঙ্গতভাবে উপস্থাপনের অনন্য মাধ্যম বিতর্ক। বিতর্ক মানুষের জীবনের একটি অংশ। বিতর্ক প্রক্রিয়ায় যুক্তিসঙ্গত চিন্তাকে প্রসারিত করার পাশাপাশি জ্ঞানের ক্ষেত্র ও পরিধিকে বিস্তৃত করার মাধ্যমে দক্ষতা, পরমতসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি ও বাকপটু হতে সহায়তা করে। কোভিড পরবর্তী বিশ্বে নিওনরমাল পরিস্থিতিতে সকলে জীবন যাপন করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া, লিঙ্গ সমতা, নিরাপত্তা ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষায়িত জ্ঞানের প্রয়োজন আছে। এক্ষেত্রে, উৎকর্ষতা সাধনের মাধ্যমে বিতর্ক ভূমিকা রাখে। বিতর্কের সাথে গণতন্ত্র সুসংহতকরণের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। জাতীয় সংসদেও আইন প্রণয়নসহ সকল বিষয়ে বিতর্ক হয়ে থাকে।
ড. শিরীন শারমিন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আরাধ্য স্বপ্ন শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ নির্মাণে বিতর্কের মাধ্যমে চিন্তাচেতনাকে শানিত, যুক্তিনির্ভর চিন্তার প্রসারকে আরো বিস্তৃত করে সৃজনশীল মানবিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ দেশ ও সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিতার্কিকদের ভূমিকা রাখতে হবে।
বিতার্কিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা লক্ষ্য করবেন-জাতীয় সংসদেও সকল বিষয়েও বিতর্কে সূচনা আছে। সেটা রাষ্ট্রীয় পলিসি, আইন প্রনয়ণ বা বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও হতে পারে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বক্তব্যে বলেন, চাঁদপুর মেঘনার পাড়ে তিন দিনব্যাপী এই বিতর্ক উৎসবে যারা সহযোগিতা করেছেন, তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি নিজেও দীর্ঘ ৩৪ বছর পর বিতর্কে অংশ নিয়েছি। অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়েছে বিতর্ক জগতের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ কয়েকজনদের সাথে অংশগ্রহন করে। আমি অভিভূত। একই ছাদের নীচে এতগুলো বিতর্ক তারকা পাওয়া একটি দারুন অভিজ্ঞতা।
ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, বিতর্কের মাধ্যমে একেকজন বিতার্কিক স্মার্ট প্রজন্মের সদস্য হয়ে গড়ে উঠেন। আমরা সজিব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশনায় দেশে ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছি। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশে^র দরবারে অংশগ্রহন করার সুযোগ করে দিয়েছি। আমরা সকলে মিলে একসাথে গড়ে তুলবো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশ। আমরা জয়ী, আমরা দুর্বার, প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার হাতিয়ার।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মশিউর রহমান ও একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু।
বিতর্ক উৎসবের চেয়ারম্যান সাব্বির আজমের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিলন মাহমুদ।
সমাপনী অনুষ্ঠানে সিডিএম এর পক্ষ থেকে চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. অসিত বরণ দাশ ও বাবুরহাট স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেনকে আজীবন সম্মাননা এবং বিজয়ী বিতার্কিকদের পুরস্কার এবং সনদপত্র প্রদান করা হয়।
এছাড়াও তিন দিনব্যাপী বিতর্ক উৎসব আয়োজকদের পক্ষ থেকে প্রকাশিত সুবিনিয়র এর মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিবৃন্দ। এ সময় চাঁদপুর জেলা ও জেলার বাহিরে থেকে আগত বিতর্ক উৎসবে অংশগ্রহনকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, সুধীজন ও আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) রাতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত বিতার্কিকদের সাথে মিট ইউথ ডা. দীপু মনি, এমপি’ শিরোনামে ফেলোশীপ নেটওয়ার্কিং অনষ্ঠিত হয়। শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) সকালে বর্ণাঢ্য র্যালী, বেলুন উড়িয়ে বিতর্ক উৎসবের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। এতে দেশের বেশ কয়েকজন তারকা বিতার্কিক অংশগ্রহন করেন।
বির্তক উৎসবের আয়োজনে ছিল-ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট, চাঁদপুর সরকারি কলেজ এর অনুপ্রেরণায় চাঁদপুর ডিভেট মুভমেন্ট (সিডিএম) এবং চাঁদপুর সরকারি করেজ ডিবেট ফোরাম (সিসিডিএফ)। সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন (বিডিএফ)।