তরুণদের হতাশার বৃত্ত ভাঙ্গবে কী?
‘সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতাকে বিশ্বব্যাপী অগ্রাধিকার দিন’(মেকিং মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড ওয়েল-বিয়িং ফর অল অ্যা গ্লোবাল প্রায়োরিটি) প্রতিপাদ্যে এ বছর বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস-২০২২। সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) এ বছর এমন স্লোগান ঠিক করেছে। আর্থিক সংকট, ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা এবং শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ আর অ্যাকাডেমিক চাপে কেমন অবস্থা দেশের তরুণ প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্যের?
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন তথ্য বলছে, দেশে বিগত ৯ মাসে আত্মহত্যা করেছে ৪০৪ জন শিক্ষার্থী। তথ্য বলছে, এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৫৭ জন, স্কুল পড়ুয়া ২১৯ জন, মাদ্রাসার ৪৪ জন এবং কলেজ পড়ুয়া ৮৪ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি এবং সংখ্যায় যা ছিল ২৪২ জন। আর আত্মহননকারীদের মধ্যে পুরুষ শিক্ষার্থী ১৬২ জন। সংস্থাটি জানিয়েছে, মূলত, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির কারণেই তারা আত্মহত্যার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে।
বৈশ্বিক মহামারী, মন্দা, যুদ্ধসহ নানা কারণে বাংলদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রতিনিয়ত তরুণদের লড়াই করে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়। যার কারনে হতাশা বাড়ছে তরুণদের মধ্যে। তথ্য বলছে, প্রচলিত ব্যবস্থায় বর্তমানে দেশে বেকার তরুণের সংখ্যা ২৭ লাখ। বিবিএস-এর জরিপ বলছে, দেশের বেকার তরুণদের মধ্যে ২৭ লাখ সবাইই কর্মক্ষম বেকার। তবে আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মোট বেকারের সংখ্যা ৩ কোটি।
আর একশনএইড বাংলাদেশ ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) বলছে, বাংলাদেশে যুবগোষ্ঠীর বড় অংশ আর্থসামাজিক ঝুঁকির মধ্যে আছে। বৈষম্য আর গুণগত শিক্ষার অভাবে ৭৮ শতাংশ তরুণ মনে করেন, পড়াশোনা করে তাঁরা চাকরি পাবেন না, গরিব শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এ হার ৯০ শতাংশ। চাকরি, পড়াশোনা বা প্রশিক্ষণে নেই ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ তরুণ। তবে, তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তুলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। যা হতাশা বাড়াচ্ছে তরুণদের।
আরও পড়ুন: অপরিকল্পিত উচ্চশিক্ষা: মেধা আর অর্থ দুটোরই অপচয়
পরিসংখ্যান মতে, পাঁচ দশকের একটি পরিণত বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। আর এ সময়ে আমাদের জনমিতিতে যে পরিবর্তন, তার সুফল পেতে আমাদের বর্তমান তরুণদের জন্য জন্য আশা বাচিঁয়ে রাখতে হবে। পাশাপাশি বৃদ্ধি করতে হবে তাদের প্রচলিত দক্ষতারও। কেননা, ২০২৯ সালে দেশের ৭ শতাংশ মানুষ বয়োবৃদ্ধ বা প্রবীণ হয়ে যাবে এবং ২০৪৭ সালে এই হার গিয়ে দাঁড়াবে মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশে। তাই, তরুণদের হতাশার বৃত্ত ভাঙ্গতে তাদের চাহিদার সামন্জস্য করার তাগিদ বিশ্লেষকদের।
তারা বলছেন, আমাদের জনমিতিতে পরিবর্তনে সময়ের সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আজকের প্রজন্মকে বর্তমানের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ বেশি দক্ষ হতে হবে স্বাভাবিকভাবেই। সংশ্লিষ্টরা সমাধান দেখছেন তরুণদের নানা কাজে উদ্বুদ্ধ ও তাদের সমস্যার সঠিক সমাধানে।
অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)’র তথ্য বলছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে হয়ে থাকে মোট ৭৭ শতাংশ আত্মহত্যা। সংস্থাটি আরও জানাচ্ছে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর আত্মহত্যা করে সাত লাখ মানুষ। যাদের অধিকাংশই তরুণ এবং মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানা সমস্যায় জর্জরিত। ফলে তারা আত্মহত্যা করছে বা করতে বাধ্য কিংবা উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
তবে আঁচল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তরুণদের এই সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব। সেজন্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনার সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করা, শিক্ষকদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি, মন খুলে কথা বলার মতো সামাজিক পরিবেশ তৈরি ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তরুণদের সমস্যাগুলো চাইলে সমাধান করা সম্ভব বলেও মনে করে তারা।