২০ বছরের লড়াই শেষে স্বপদে বহাল শিক্ষক দম্পতি
দীর্ঘ ২০ বছর লড়াই শেষে স্বপদে পূণর্বহাল হলেন পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার খাতুন্নেছা স্মৃতি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইয়েদুর রহমান ও তার স্ত্রী সহকারী শিক্ষক মাসুমা আক্তার। বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে উচ্চ আদালতের রায়ে তারা বিদ্যালয়ে স্বপদে ফিরেছেন।
প্রধান শিক্ষক সাইয়েদুর রহমান বলেন, আমাকে ও আমার স্ত্রীকে বিধি লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে বরখাস্ত করেছিল বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটি। ২০ বছর আইনি লড়াই করে বরখাস্তের আদেশ অবৈধ প্রমাণ করে চাকরির শেষ বেলাতে স্বপদে ফিরে এসেছি।
তিনি বলেন, আমরা স্বামী–স্ত্রী চাকরি হারিয়ে দীর্ঘ সময় মানবেতর জীবন যাপন করেছি। প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালিয়েছি। পাঁচ সন্তানকে কষ্ট করে পড়াশোনা করিয়েছি। মামলার খরচ জোগানোর পাশাপাশি সংসারের খরচ ও পাঁচ সন্তানের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে আমাদের।
তবে ধৈর্য্য হারাননি সাইয়েদুর রহমান। তিনি বলেন, আমি কখনো হাল ছাড়িনি। কখনো ক্লান্ত হয়নি। তাই আজ জয়ী হতে পেরেছি।
আরও পড়ুন: ২৫৪ পদে নিয়োগ দেবে আকিজ ফ্যাক্টরী লিমিটেড।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতার স্ত্রী ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি নাসরিন মল্লিকের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে ২০০২ সালের ২৬ জুন তৎকালীন অ্যাডহক কমিটি প্রধান শিক্ষক ও তার স্ত্রীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ওই বছরের ১৪ জুলাই সাইয়েদুর বরখাস্তের আদেশের বিরুদ্ধে সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। মামলা চলাকালে ২০০৪ সালে সাইয়েদুরকে এবং ২০০৫ সালে মাসুমা আক্তারকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করে ব্যবস্থাপনা কমিটি।
পরে মামলা পাল্টা মামলার জেরে এবছর সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী ৭ সেপ্টেম্বর বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে বিদ্যালয়ে স্বপদে পুনর্বহালের আবেদন করেন সাইয়েদুর রহমান। মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সাইয়েদুর রহমান ও মাসুমা আক্তারকে পুনর্বহালের নির্দেশ দেন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
সহকারী শিক্ষক মাসুমা আক্তার বলেন, আটটি অভিযোগ আনা হয়েছিল প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযোগগুলো আদালতে অবৈধ বলে প্রমাণিত হয়। ২০টি বছর আমাদের জীবনে কত ঝড় বয়ে গেছে, তা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।
বিদ্যালয়ের বর্তমান বস্থাপনা কমিটির সভাপতি মজিবুর রহমান আকন বলেন, অন্যায়ভাবে প্রধান শিক্ষক সাইয়েদুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সহকারী শিক্ষক মাসুমা আক্তারকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তারা আদালতের রায় এবং বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশে বিদ্যালয়ে স্বপদে পুনর্বহাল হয়েছেন। আমরা তাঁদের ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছি।