কে এই মরিয়ম মান্নান

মরিয়ম মান্নান
মরিয়ম মান্নান   © সংগৃহীত

গত কয়েক দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হইচই মরিয়ম মান্নানের মায়ের ‘নিখোঁজ’ হওয়া নিয়ে। মরিয়ম নিজেই দিয়ে আসছিলেন নানা আপডেট। একপর্যায়ে মায়ের মৃত্যুর খবর জানিয়ে তার ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট দেয়া হয়। এবার সেই আইডি থেকেই দেয়া হয়েছে মায়ের বেঁচে থাকার খবর।

প্রথমদিকে যারা মরিয়মের মায়ের খোঁজের আন্দোলনে এই মাধ্যমে লাইক, কমেন্টে শেয়ার করে ভার্চুয়ালি সঙ্গে ছিলেন, এখন তাদের অনেকেই মরিয়মের পোস্টে বিরূপ মন্তব্য করছেন। কেউ কেউ আবার বলছেন, ‘আবেগ ফেরত চাই’।

এ নিয়ে সাংবাদিকদের ওপর ‘ক্ষেপেছেন’ কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেত্রী মরিয়ম মান্নান। সাংবাদিকদের বিষোদগার করে ‘দালাল’ আখ্যা দিয়ে মায়ের জন্য করা আন্দোলনের জন্য যে চোখের জল পড়েছে তার দাম চেয়েছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কাছে।

সবার মনে প্রশ্ন জেগেছে কে এই মরিয়ম মান্নান। সেই প্রশ্নে উত্তর খোঁজার চেস্টা-

আরও পড়ুন: ইডেন থেকে রিভার আয় কত, জানাল ভুক্তভোগীরা

বর্তমানে মরিয়ম মান্নান একজন নারীবাদী নেত্রী। তিনি একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ২০১২ সালে তার বাবা আব্দুল মান্নানের মৃত্যু হয়। এ সময় এসএসসি পরীক্ষা দেন তিনি। পাস করার পরে চলে আসেন ঢাকায়। শুরু হয় উশৃঙ্খল জীবন-যাপন।

একটি সূত্র জানান, ঢাকা আসার বেশ কিছুদিন পর তিনি বিয়ে করেন এক ডেন্টাল চিকিৎসককে। পরে তাকে ছেড়ে আরেকটি বিয়ে করেন বরিশাল জেলায়। তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে আপনজনরা তেমন কিছুই জানেন না। ঢাকার অভিজাত একটি এলাকায় দুই-তিনটি নারী হোস্টেল খুলে ব্যবসা করছেন। সেখানে অবাধে নারী-পুরুষের যাতায়াত রয়েছে। ফেসবুকে মরিয়মের কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, যা দেখে সূত্রটির দাবির সঙ্গে মিলে যায়।

মরিয়ম নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে পরিচয় দেন। তবে তিনি তেজগাঁও কলেজের ছাত্রী ছিলেন বলে জানা গেছে।

রহিমা বেগম যখন নিখোঁজ হন; গণমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সব জায়গায় তার ছয় ছেলে-মেয়ের মধ্যে সক্রিয় উপস্থিতি ছিল মরিয়মের। তার কান্নার মধ্যে ছিল রহস্য, কথার ভেতর লুকোচুরি। কখনোই তিনি গণমাধ্যমকে সঠিক তথ্য দেননি। সংবাদকর্মীদের সঙ্গে তার রূঢ় আচরণের অভিযোগও রয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধেও এ তরুণী নানা অভিযোগ তুলেছেন।

দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এসব প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান। তিনি বলেন, মরিয়ম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে এক এক সময় এক এক রকম মন্তব্য করেন। এ ঘটনায় আমরা বিব্রত। মা হারিয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবে যে কেউ একটু রিয়্যাক্ট করেন। এটাকে আমরা স্বাভাবিকভাবে দেখতে চাই। নিশ্চয়ই তিনি (মরিয়ম মান্নান) এখন কোনো পোস্ট দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করবেন এবং উনার ভুল উনি স্বীকার করবেন।

রাহিমা বেগম নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি ফুলবাড়িগেট এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী হেলাল শরীফের স্ত্রী মনিরা আক্তার। ব্যবসায়ী হেলাল শরীফকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মনিরা মরিয়ম সম্পর্কে বলেন, মরিয়ম খুব প্রভাবশালী। ঢাকার বিভিন্ন লোকের সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে। তিনি নিজে তার মায়ের নিখোঁজ হওয়ার মতো গর্হিত কাজ করেছে বলে আমি মনে করি। প্রভাবশালী লোক দিয়ে তিনি পুলিশকে প্রভাবিত করে আমার স্বামীকে জেল খাটাচ্ছেন।

আগেও লাইমলাইট পেয়েছেন মরিয়ম মান্নান
চার বছর আগেও কোটা আন্দোলনে পুলিশি হেফাজতে নিজের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে লাইমলাইট পেয়েছিলেন মরিয়ম মান্নান। শারীরিকভাবে তাকে হেনস্তা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে ভাইরাল হন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার পোস্ট ছবি ভিডিও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি করে।

সে সময় তেজগাঁও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন মরিয়ম মান্নান। একটি ভিডিওতে দেখা যায়- কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহীদ মিনারে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি। কয়েকজন সাংবাদিক তার সঙ্গে কথা বলতে আসেন। উত্তেজিত অবস্থায় তখন সাংবাদিকদের বলেন, আপনার জানতে চান ওই দিন তারা আমার কোথায় কোথায় হাত দিয়েছিল? কি বলেছিল? আপনাদের শুনতে ইচ্ছে করছে, আমার কোথায় কোথায় ধরেছে? আমাকে কীভাবে কী করেছে? সবাই আমাকে ফোন দিচ্ছে, তোমাকে কী করেছে? এখন আমি লাইভে যাব? লাইভে গিয়ে বলব আমাকে কী করেছে? কেমন করে ধরেছে? আমি কান্না করব আর সবাই আমাকে সহানুভূতি দেখাবে?


সর্বশেষ সংবাদ