২৮ বছরেও পদোন্নতি পাচ্ছেন না উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা
দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে একই গ্রেডে চাকরি করছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা। তাদের অধীনস্থদের বেতন গ্রেড বাড়লেও উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তারা পড়ে আছেন ১০ম গ্রেডেই। এমতাবস্থায় নবম গ্রেড বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছেন সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির কাছে সম্প্রতি তাদের দাবিগুলো নিয়ে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ এস রবিউল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার পদের দশম গ্রেড থেকে নবম গ্রেডে উন্নীতকরণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন জানিয়ে এইউইও/এটিইওরা জানান, ১৯৮৫ সালে প্রণীত নিয়োগ বিধিমালার পরে ১৯৯৪ সালে এইউইও পদটি ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয় এবং সে সময়ে তার অধস্তন প্রধান শিক্ষক পদটি ১৪তম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষক পদটি ১৮তম গ্রেডে ছিল। প্রধান শিক্ষক পদটি তিন দফায় উন্নীত করার ফলে ২০১৪ সালে ১১তম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষক পদটি চার দফায় ২০২০ সালে ১৩তম গ্রেড-ভুক্ত হয়। ১৯৯৪ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত এই দপ্তরের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদটি নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে, পিটিআই সুপারিন্টেন্ডেন্ট পদটি নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে এবং পিটিআই ইন্সট্রাক্টর পদটি তৃতীয় শ্রেণি থেকে নবম গ্রেডে উন্নীতকরণ করা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার পদটি ১০ম গ্রেডেই রয়েছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ১৯৮৫ সালে এনাম কমিটির রিপোর্টে শিক্ষকসহ প্রাথমিক শিক্ষার জনবল ছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার ২০০ জন। ২০১৩ সালে ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ এবং বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ইউআরসি ইনস্ট্রাক্টরসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়ায় বর্তমানে শিক্ষকসহ মোট জনবল ৪ লাখ ৭৭ হাজার ১২৫ জনে উন্নীত হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রধান শিক্ষকসহ দ্বিতীয় শ্রেণির পদ সংখ্যা ৬৮ হাজার ৭৪৫ জনের বিপরীতে বর্তমানে প্রথম শ্রেণির পদ সংখ্যা মাত্র ২ হাজার ৯৬৫টি। সরকারের সব দপ্তরের মোট অনুমোদিত জনবলের বিবেচনায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরেরই মোট জনবল প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এমনকি নিকটতম স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরের জনবলের চার গুণের অধিক। জনবল বিবেচনায় সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদটি প্রথম শ্রেণি তথা নবম গ্রেডে উন্নীত করা একান্ত প্রয়োজন।
সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার পদের আওতাধীন জনবল একজন সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারের অধীন প্রায় ৩০ জন দ্বিতীয় শ্রেণি পদমর্যাদার প্রধান শিক্ষক এবং ১৬০-২০০ জন সহকারী শিক্ষক রয়েছেন, যাদের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন প্রদান, ছুটি মঞ্জুর, অ্যাকাডেমিক তত্ত্বাবধান, মনিটরিং ও মেন্টরিং সার্বিক সহযোগিতা করে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। শিক্ষকের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। এছাড়া তাকে সরাসরি সুবিধাভোগী হিসেবে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী, অভিভাবক, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, শিক্ষক-অভিভাবক সমিতির সদস্যসহ বিশাল অংশিয়ানদের সমন্বয় ও নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে উপজেলা পর্যায়ে এ ধরনের বৃহৎ প্রশাসনিক ইউনিট অন্য কোন সরকারি কর্মকর্তার অধীন নেই। তাই এ পদটি নবম গ্রেডে উন্নীত করার যৌক্তিকতা অপরিসীম।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, সারা দেশে ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রায় ৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে একটি ‘ক্লাস্টার’ নির্ধারিত আছে, যার নেতৃত্বে একজন এইউইও/এটিইও রয়েছেন। এছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ের অন্যান্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে দায়িত্ব পালন করতে হয়। সরকারের অন্য কোনো দপ্তরের এতো বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান মাঠ পর্যায়ে নেই। এমনকি নিকটতম মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিষ্ঠানের মাত্র প্রায় এক-চতুর্থাংশ। নির্বাচনি ইশতেহারের ফ্লাগশিপ প্রকল্প ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বাস্তবায়নকে তরান্বিত করতে এ পদের উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি।
আরও পড়ুন: খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দায়িত্বে অধ্যাপক সারোয়ার
নেতারা জানান, পদমর্যাদা বা গ্রেড উন্নয়নে বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরমধ্যে সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসাররা দীর্ঘদিন ধরে এ পদটিকে ১০ম গ্রেড থেকে নবম গ্রেডে উন্নীতকরণের দাবি জানিয়ে আসছেন। পদটি দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীতকরণের পক্ষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি ২০০৬ সালের ১৬ জুলাই ১৯তম বৈঠকে সুপারিশ করে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দ্বিতীয়, ১৮তম ও ২৫তম বৈঠকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীতকরণের সুপারিশ করা হয়।
২০০৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এইউইও/এটিইও পদটি দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করার পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগকে অনুরোধ করা হয়। অষ্টম জাতীয় সংসদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ২১তম সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি জানতে চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অনুবিভাগ ২০০৯ সালের ১৬ মার্চ একটি ইউও নোট পাঠায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ মার্চ প্রথম শ্রেণিতে উন্নীতকরণ বিষয়ে অর্থ বিভাগের আনুষ্ঠানিক সম্মতিসহ পাঠাতে বলা হয়।
উপজেলা শিক্ষা কমিটিতে এইউইও/এটিইওকে সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সম্ভাবনা ও সমস্যাসমূহ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারবৃন্দের পুঙ্খানুপুঙ্খ জানা থাকে। এ কারণে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভায় বিদ্যালয়ের যে কোনো সমস্যা ও সম্ভাবনা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তাদের মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।