১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:৪৩

শিক্ষকের বদলি নিয়ে ভিকারুননিসায় অসন্তোষ, বিক্ষোভ

আন্দোলনরত ছাত্রীরা   © সংগৃহীত

রাজধানীর শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসায় এক শিক্ষকের বদলি নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে বিক্ষোভ চলাকালীন ছাত্রীরা লাঞ্ছিত হয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) বসুন্ধরা ব্রাঞ্চের ইংরেজি শিক্ষক আবু সুফিয়ানকে বদলির সিদ্ধান্ত নেয়ায় ছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। বদলির আদেশ বাতিলের দাবিতে শাখাপ্রধানকে অবরুদ্ধ করেন ছাত্রী-অভিভাবকরা।

জানা গেছে, বসুন্ধরা ব্র্যাঞ্চের ‘দিবা শাখা’র শিক্ষক আবু সুফিয়ান ইংরেজি বিষয়ের ক্লাস নেন। ছাত্রীদের অভিযোগ, দিবা শাখার প্রধান জগদীস পালের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হওয়ায় এক সপ্তাহ ধরে তাকে ক্লাসে যেতে দেওয়া হয়নি। জগদীস পাল ব্যক্তিগত ক্ষোভের জের ধরে আবু সুফিয়ানকে ভিকারুননিসার আজিমপুর ব্র্যাঞ্চে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 

আরও পড়ুনঃনতুন ক্যাম্পাস ইস্যুতে ১০ দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামছে জবি শিক্ষার্থীরা

এ আদেশ বাতিলের দাবিতে অভিভাবকসহ ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে জড়ো হয়ে আন্দলন শুরু করেন। এক পর্যায়ে শাখাপ্রধানের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। প্রায় ঘন্টা খানেক জগদীস পালকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিলো। পরে শিক্ষক সুফিয়ানের বদলির আদেশ বাতিলের মৌখিক ঘোষণা দেয়া হলেও শিক্ষার্থীদের দাবি ছিলো লিখিত প্রমানপত্রের। সারাদিন আন্দোলন শেষে ৬ তারিখ রাতেই এ আদেশ বাতিল করা হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

অভিভাবকদের অভিযোগ, বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে ছাত্রীদের গালিগালাজ ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। পরেরদিন (৭ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানানো হয় ছাত্রীদের পক্ষ থেকে। অভিযোগ পত্রে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টদের বিচারের দাবি করেন তারা। 

ঘটনার দিন বসুন্ধরার শাখাপ্রধান জগদীস পাল বলেছিলেন, ‘আবু সুফিয়ানের বদলির বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। কয়েকদিন আগে তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাকে বেইলি রোডে মূল ব্র্যাঞ্চে অধ্যক্ষ আপা ডেকেছেন বলে জানান। আমি তাকে যেতে বলেছিলাম। সেখানে যাওয়ার পর তাকে আজিমপুর ব্র্যাঞ্চে বদলি করা হয়। তিনি আমাকে সেই বিষয়টি জানান।’

তিনি বলেন, ‘মূল ব্র্যাঞ্চ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত হলে তা মেনে নিতে হবে, সেটি আমি তাকে জানিয়েছি। আজ সকালে হঠাৎ অভিভাবকরা এসে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার শুরু করেন। পরে শিক্ষার্থীরা ক্লাস থেকে বের হয়ে আসে। তারা বিক্ষোভ শুরু করে। কেন ওই শিক্ষককে বদলি করেছি, তা জানতে চাওয়া হয়। বিষয়টি আমি কিছুই জানি না বলে তাদের বার বার বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তবুও তারা বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন।’

শিক্ষক আবু সুফিয়ান শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা রইল। তাদের ভালোবাসার কারণেই হয়তো আমি টিকে গেছি। তারা আন্দোলন না করলে আমাকে ঠিকই বদলি করে দেওয়া হতো। তাদের ঋণ হয়তো শোধ করতে পারব না। তবে একজন শিক্ষক হিসেবে আমার যে দায়িত্ব, ছাত্রীদের যেন ভালোভাবে শিক্ষা দিতে পারি।’

শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে ঘটনা তদন্তে শিক্ষকদের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে সরেজমিনে তদন্ত করে দ্রুত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

কমিটিতে প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র শিক্ষক কেকা রায় চৌধুরীকে প্রধান করে শিক্ষক রুবিনা তাসমিন, মমতাজ বেগম, আজিমপুর দিবা শাখা ভিকারুননিসার সহকারী প্রধান শিক্ষক লাইলুন নাহার, ভিকারুননিসা মূল ব্র্যাঞ্চের দিবা শাখার শাখা প্রধান শিক্ষক মো. শাহ আলম খানকে সদস্য করা হয়েছে।