রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘ব্যালেরিনা’, ফেসবুকে ভাইরাল কে এই তরুণী?
পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে রেনেসাঁর সময়কার ব্যাপক জনপ্রিয় ব্যালে নাচ। পরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পরে নাচের এই অনন্য কৌশল। আর সেই নাচের শৈলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ফ্রেম বন্দী করে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন দুই প্রতিভাবান তরুণী।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা ছবির ওই শিল্পীর নাম মুবাশ্শীরা কামাল ইরা। আর যে ফটোগ্রাফার ছবিগুলো তুলেছেন তার নাম জয়িতা তৃষা। তৃষার ক্যামেরা ফ্রেমে ইরার ফ্লেক্সিবল নাচের মুদ্রা তাক লাগিয়ে দিয়েছে নেটদুনিয়ার মানুষদের।
এক সংবাদমাধ্যমকে ইরা বলেন, ‘আমি তৃষার মডেল। ২৩ জানুয়ারি ছবিগুলো তোলা। দুই দিন পর ২৫ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড হয়। সেদিন থেকে তৃষার সঙ্গে আমিও আলোচিত।’
ইরা আরো বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে নওগাঁয় থাকি। তৃষার সঙ্গে কাজ করার জন্য ঢাকায় এসেছিলাম। তিন মাস আগে কাজ শুরু হয়। পরীক্ষামূলকভাবে ধানমন্ডির রাস্তায় কিছু ছবি তোলা হয়েছিল।’
আরও পড়ুনঃ এক দশকে দেশে ৭৪টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
মজার বিষয় হলো, ইরা এসব শিখেছে ঘরে বসেই। ইউটিউব তার শিক্ষক। অনুপ্রেরণা মা। এখন ঢাকায় মাঝেমধ্যে পারফরম্যান্স করেন।
ইরা বলেন, ‘প্রথম দিকে বাবা রাজি হতেন না। মা আমাকে সাহস জুগিয়েছে। কিছুটা এগোতে পেরেছি দেখে বাবাও তার জায়গা থেকে সরে এসেছেন।’
ফটোগ্রাফার তৃষা বলেন, ‘আমার জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। এসএসসির পর ঢাকায় আসি। বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে ফটোগ্রাফিতে ডিপ্লোমা ও অ্যাডভান্স ডিপ্লোমা করি। চার বছর ধরে ফটোগ্রাফি করছি। ফ্রিল্যান্সিংয়ের পাশাপাশি নিয়মিত ফ্যাশন হাউসে ফটোশুট করি। আমি মূলত পোর্ট্রেট ছবি তুলি। ভিন্ন কিছুর চিন্তা করতাম। ঢাকার রাস্তায় ব্যালে নাচ পরিবেশনের পরিকল্পনা হঠাৎ মাথায় আসে। নাম দিই ‘ব্যালেরিনা’। ইচ্ছা আছে ঢাকার আইকনিক জায়গাগুলোর সামনে ব্যালে নাচ অবস্থায় শিল্পীর ছবি তুলব।’
বছরখানেক আগে এই পরিকল্পনা করেন জানিয়ে তৃষা আরও বলেন, ‘এমন কাউকে খুঁজছিলাম যার সাহায্যে কাজটা করতে পারব। ৫-৬ মাস আগে ফেসবুকের একটি গ্রুপে ইরার সঙ্গে পরিচয় হয়। আমার কাজ আর আইডিয়া শেয়ারে সে রাজি হয়ে যায়।’
রাজু ভাস্কর্যের নীচে ছবি তোলার ব্যাপারে তিনি জানান, তিনি টিএসসিতে সকালে ছবি তুলতে গিয়েছিলেন। তারপর রাজু ভাস্কর্যের ওখানে ছবি তুলতে গেলে, দেখেন, শাবিপ্রবির আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অনেকগুলো প্লাকার্ড সাঁটানো। এর পরেই তিনি পরিকল্পনা করে, ওই প্লাকার্ডের সামনে ছবি তুলে আন্দোলনের একটা আলাদা ভাষা তৈরি করতে চেয়েছেন।
তৃষা আরও বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৩ জানুয়ারি সকালে বের হই আমরা। ব্যস্ত এলাকা হওয়ায় ঠিকমতো কাজটা হচ্ছিল না। এই হর্ন বাজছে, চিৎকার, হাসি চলছেই। কিন্তু উপায় নেই। এসবের মধ্যেই ছবিগুলো তুলেছি। এর জন্য ইরাকে ধন্যবাদ। চারপাশের সবকিছু পাশ কাটিয়ে ও ঠিকই ফোকাস ধরে রেখেছিল।’
ইরাকে নিয়ে আরও কাজ করার ইচ্ছা জানিয়ে তৃষা বলেন, ‘ব্যালেরিনা’ নামের এই প্রজেক্ট চালিয়ে যাব।’