আপনি ছিলেন বলেই তরুণরা স্বপ্ন দেখার সাহস পেয়েছে

পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান সাদিক খান
পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান সাদিক খান  © ফাইল ফটো

পিএসসির ততকালীন চেয়ারম্যান মহোদয় (আজকে সাবেক হয়েছেন), সাদিক খান স্যারকে একটা ফোন করলাম। বিনয়ের সাথে সালাম ও পরিচয় দিয়ে বললাম, স্যার, একটু দেখা করতে চাই, যদি আপনার সুবিধামতো ৫ মিনিট সময় দিতেন।

সালামের জবাব দেয়ার সময় স্যারের সুরটা যেমন নরম ছিলো, পরিচয় জানার পর বেশ কঠিন স্বরেই বললেন, তিনি ব্যস্ত, দেখা করার সময় দিতে পারবেন নাহ। যা বলার যেন ফোনেই বলি। আমি পূর্বের ন্যায় অধিক বিনীতভাবে বললাম, স্যার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুইটা ছেলে রিটেনে টিকেছে, সামনে ভাইবা... ব্যাস! স্যার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন, তুমি এসব বলতে আমাকে ফোন দেয়ার সাহস পেলে কীভাবে, কোন তদবির-টদবির আমার কাছে চলবে না!

স্যারের কথায় আশাহত হয়ে জাস্ট এটুকু বললাম, ‘স্যার, আমরা রাজনীতি করি। সুপারিশ করা তো আমাদের কাজ। মানুষ একান্ত প্রয়োজনে, আশা নিয়ে আমাদের কাছে আসে। আর দীর্ঘদিন সংগঠন করা দুইটা ছেলের জন্য সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে একটু সুপারিশ আমি করতেই পারি, রাখা না রাখা আপনার ব্যাপার। আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য দুঃখিত, বলে ফোন রেখে দিলাম। পরদিন গণভবনে গিয়ে জানলাম, আমার কথা নাকি স্যারের ইগোতে লেগেছে, তাই তিনি আমার নামে নালিশ করেছেন!

পড়ুন: আমার পরিবারের সদস্যও বিসিএসে উত্তীর্ণ হতে পারেনি, সুপারিশের সুযোগ ছিল না

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর ফেসবুক পোস্ট থেকে সংগৃহীত, এই অংশটুকু

*আমার ছেলেও বিসিএসে সুপারিশ প্রাপ্ত হয় নি, কারণ আমার ছেলে পাস করেনি। - ড. মোহাম্মদ সাদিক স্যার।

*প্রিলিমিনারী পরীক্ষার আগের রাতে পরীক্ষার্থীরা ঘুমাতে পারলেও আমি সাদিক ঘুমাতে পারি না, প্রশ্নফাস এর দুশ্চিন্তায়।

গর্বের বিষয় এখানে এটা যে, প্রশ্নফাঁস তো দূরের কথা, এ নিয়ে গুজবও তৈরী হয় নি, স্যারের দায়িত্ব থাকাকালীন সময়ে।

*যারা সরকারি চাকরি করছেন তাদের মানুষের সেবা করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারি চাকরি বা দেশসেবার জন্য তিনটি জিনিস দরকার- মমতা, সততা ও দক্ষতা। তবে, প্রথম দুটি থাকলে দক্ষতা এমনিতেই তৈরি হয়ে যাবে। আর মানুষের জন্য মমতা না থাকলে, সততা না থাকলে শুধু দক্ষতা দিয়ে দেশ ও মানুষের বেশি কাজে আসে না।’

*আপনি বলেছেন, আমি বই মেলায় যাই, কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের সাথে ছবি তুলি না, কারণ এতে বিতর্ক তৈরি হতে পারে। আপনি ভাইবা বোর্ড থেকে ওয়েটিং রুমে এসে বলেছেন, ভয়ের কিছু নেই, আমি সাদিক একদিন এই ওয়েটিং রুমে ছিলাম, আমারও পা কাঁপছিল সেদিন।

পড়ুন: বিতর্ক এড়াতে ছাত্রদের সঙ্গে ছবি তুলতেন না ড. সাদিক

আপনি ছিলেন বলে হয়তো আমি/আমার মতো অনেকে স্বপ্ন দেখার সাহস পেয়েছে, মনে বিশ্বাস তৈরি হয়েছে, যদি পরিশ্রম করে যাই, একদিন সফল হবো ইনশাআল্লাহ। অনেকে ক্যাডার হতে পেরেছে স্যার! নয়তো ফাঁসপ্রশ্ন কিনে নয়তো ‘অতি নম্রভাবে ফোন’ করে আমার চাকরিটা কোন স্নেহের ছোটভাই-বোন/ভাগ্নে/শ্যালিকাকে (হয়তো) বাগিয়ে দিত।

আর অনেক পরিবারের স্বপ্নগুলো অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়ে হতাশ রাত কাটত কিংবা "I Quit my certificates" বলে সিলিং হতে হত। আপনার সাহসী কার্যক্রম আমার জানামতে পূর্বে পিএসসি পায়নি। পিএসসির উপর ভরসা পেয়েছে লাখো মেধাবী শিক্ষিত তরুণ, পাশ করে ক্যাডার না পেলেও নন ক্যাডারে চাকরি তো পেয়েছেন অনেকে।

আগামীতে পিএসসিতে এই ধারা অভ্যহত থাকুক, থাকবে এই বিশ্বাস করি। আপনি সব সময় ভালো থাকুন স্যার। পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় আপনি এই দেশের লাখো তরুণদের মনে আজীবন স্যার হয়ে থাকবেন।

লেখক: প্রভাষক, সেন্ট্রাল পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, চট্টগ্রাম