অনার্স-মাস্টার্সে প্রথম হয়েও ঢাবির শিক্ষক হতে পারেননি আকবর আলি খান
তরুণ বয়সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক হতে চেয়েছিলেন আকবর আলি খান, মৃদু ছাত্র ইউনিয়ন করা আকবর আলি খানকে পাকিস্তান আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে দেওয়া হয়নি। তিনি কিন্তু অনার্স-মাস্টার্স দুটাতেই প্রথম শ্রেনীতে প্রথম ছিলেন।
গণিত অপছন্দ বলেই ইতিহাসে আগ্রহী আকবর আলী খান কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতি পড়তে গিয়ে পড়লেন বিপাকে। অর্থনীতি পড়তে যে গণিত জানা লাগে।
একসময়ের চেইন স্মোকার আকবর আলি খানতো বিয়েই করবেন না। বাবা-মা শর্ত দিলেন কানাডা যাওয়ার আগে বিয়ে করে বউ নিয়ে যাও! নিজের অনিচ্ছায়, না দেখেই বাবা মার পছন্দে পদার্থবিদ্যার তুখোড় ছাত্রী মিজ্ হামীম খানকে বিয়ে করেন। কানাডায় পড়তে গিয়ে যিনি তুরুপের তাসের মতো কাজে লেগে যায়। গাণিতিক অর্থনীতিটা সহজেই শিখে নিলেন স্ত্রীর কাছ থেকে। চেইন স্মোকার থেকে নন স্মোকার হয়ে গেলেন বিয়ে করতে না চাওয়া এই যুবক। কার প্রভাবে এটা কি আর বলতে হবে?
আরও পড়ুন: শুধু নারী নয়, পুরুষরাও নিজের জন্যে সাজে
ইতিহাসের ছাত্র আকবর আলী খান ইতিহাস রচনা করেছেন জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে। হবিগঞ্জের এসডিও হিসেবে যে স্বাক্ষর করার অথরিটি তাঁর নেই, এমন অনেক স্বাক্ষর অকপটে করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতে।
সিএসপি আকবর আলি খান সিলেটের জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েও যোগদান করেননি। সচিবালয়ের চাকরি ছেড়ে সদ্য প্রতিষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছেন শিক্ষকতা করতে।
বঙ্গবন্ধু এই রত্নকে চিনতে ভুল করেননি, চাকরিতে ফিরে আসার সুযোগটা না থাকলে বাংলাদেশ হয়তো আজকে এই আকবর আলী খানকে পেতো না। ইআরডি, পরিবেশ, পানিসম্পদ, দীর্ঘ সময়ের অর্থসচিব, আমলাতন্ত্রের সর্বোচ্চ পদ মন্ত্রীপরিষদ সচিব হওয়া হতো না।
তিনিতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতেই চেয়েছিলেন। মানুষ কিছু ভাবে, বিধাতা মুচকি হাসে! দুর্বল অর্থনীতির সবল গবেষক আকবর আলি খানকে নিয়ে লিখে শেষ করা যাবে না।
শেষ কয়েকবছর অত্যন্ত কষ্টে বুকের পাজর জ্বালিয়ে বেঁচে ছিলেন। একমাত্র মেয়ে নেহরীন খানকে ভুল চিকিৎসায় হারিয়ে, প্রিয়তমা স্ত্রী যার হাতে গানিতিক অর্থনীতির প্রাথমিক পাঠ নিয়েছেন তাঁকে হারিয়ে। শতবর্ষী শাশুড়ী জাহানারা রহমান ও ভাইয়ের ছেলেমেয়েদের সাথে থাকত। শক্তিহীন হয়ে আমাদের জন্য লিখে গেছেন অসামান্য কিছু বই। বেঁচে থাকলে হুমায়ুন আহমেদের মতো এ জাতিকে মুগ্ধ করার মতো আরও কিছু বই দিতে পারতেন এতে সন্দেহ নেই।
স্যার আমার মতো অনেকেই আপনাকে খুব ভালোবাসে, আপনার মতো হতে চায়। এ পাওয়া আপনার জন্য অপার্থিব। ওই জগতে আপনার কৃতকর্ম আপনাকে শান্তিতে রাখবে বলেই আমার বিশ্বাস। আপনার বইয়ের মাধ্যমে আপনি বেঁচে থাকবেন বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে আরও অনেক দিন। মহান আল্লাহতালা আপনাকে বেহেশত নসীব করুন,আমীন।
লেখক: উপ-সচিব, পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়।
[ফেসবুক থেকে সংগৃহীত]