ধর্ষক-খুনিদের মুক্তির চেয়ে ফুলেল সংবর্ধনা বেশি হতাশ করেছে
জ্যোতি সিং বা নির্ভয়া ধর্ষণকাণ্ডের প্রতিবাদে সমস্ত ভারত চিৎকার করে আকাশ বাতাস কাঁপিয়েছে। বহুকাল আগের কথা নয়। মানুষের ভুলে যাওয়ারও কথা নয় সে কাহিনী।
আর আজ কিনা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস বানুকে গণধর্ষণ করেছে যারা, তাঁর পরিবারের আট জনকে হত্যা করেছে যারা, এমনকী বিলকিসের চোখের সামনেই তাঁর তিন বছর বয়সী সন্তানকে মাথা ফাটিয়ে মেরে ফেলেছে যারা, তারা ১১ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত আসামী ১৫ বছরের মাথায় ‘ব্রাহ্মণ’ হওয়ার কারণে বা জেলের ভেতর ‘ভালো ব্যবহার’ করার কারণে, অথবা অন্য কোনও কারণে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে।
তাও আবার ছাড়া পেয়েছে ১৫ অগাস্ট তারিখে, ভারতের স্বাধীনতা দিবসে। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার ঘটনা তত হয়তো হতাশ করে না, যত হতাশ করে তাদের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে তাদের সম্বর্ধনা দেওয়ার ঘটনা।
আরও পড়ুন: হিন্দুরা দিন দিন মুসলমান হয়ে উঠছে: তসলিমা নাসরিন
তারা কী কারণে মহামানব হয়ে উঠলো? মুসলিমদের ধর্ষণ এবং খুন করেছে বলে? এই ধর্ষক এবং খুনীর দল কিন্তু যে কোনও হিন্দু মেয়েকেও গণধর্ষণ করার ক্ষমতা রাখে, যে কোনও হিন্দুকে খুন করার ক্ষমতা রাখে। মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা এত তীব্র যে অনায়াসে ধর্ষণ এবং খুন করে ফেলতে পারে। কী নিশ্চয়তা যে তারা কোনও হিন্দুকে কখনই ঘৃণা করবে না? করতে নিশ্চয়ই পারে।
এই ধর্ষক এবং খুনীদের বিরুদ্ধে অনেক হিন্দুই কথা বলছে। এরা ধর্মনিরপেক্ষ-হিন্দুদের শত্রু বলে ভাবতে পারে এবং তাদের ওপর প্রতিশোধ নিতে তাদেরও ধর্ষণ করতে পারে, তাদের খুনও করতে পারে। তখন যদি কেউ তাদের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে সম্বর্ধনা দেয়, কেমন দেখাবে সে দৃশ্য?
গোটা উপমহাদেশটাই একটা বীভৎস ঘৃণার জায়গা হয়ে উঠছে। হিন্দু মুসলমানকে ঘৃণা করে, মুসলমান হিন্দুকে ঘৃণা করে। এই ঘৃণা থেকে যারা মুক্ত, তাদের আমরা মানুষ বলে বিচার করি। মানুষের সংখ্যা মনে হয় দিন দিন কমছে। [ফেসবুক থেকে সংগৃহীত]