ঈদের রাতে আল্লাহ তার বান্দাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না
ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আযহা মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে রমজানের ঈদ তথা ঈদ-উল-ফিতর এবং হজ্জের মৌসুমে এই ধর্মগোষ্ঠীর লোকেরা কোরবানির ঈদ তথা ঈদ-উল-আযহা উদযাপন করেন।
সারাবিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় থাকা বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতগণ একযোগে এই বিশেষ উৎসব উদযাপন করেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ভিন্ন দিনে চাঁদ উঠার উপর নির্ভর করে একদিন আগে পরে ঈদ উৎসব পালিত হয়। এই চাঁদ রাতেকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে ইসলাম ধর্মে। এই রাত সমূহের ইবাদতের বিশেষ পুরস্কারের ঘোষণা রয়েছে মহান রবের পক্ষ থেকে।
চাঁদ রাতে সুনির্দিষ্ট কোন ইবাদাত তথা নামাজ বা বিশেষ কোন আমলের ব্যাপারে বলা হয়নি। তবে ইসলামে এই রাতের ইবাদাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এই রাতটি তাহাজ্জুদ, সাধ্যানুযায়ী নফল নামাজ, সালাতুত তাসবিহ ও কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার এবং ক্ষমা-প্রার্থনায় অতিবাহিত করা উত্তম।
ঈদে চাঁদ রাতে আল্লাহ তার বান্দাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না। এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘(দুনিয়াতে) পাঁচটি রাত আছে; যে রাতগুলোতে বান্দার দোয়া আল্লাহ তাআলা ফিরিয়ে দেন না। অর্থাৎ বান্দার দোয়া কবুল করেন।
রাতগুলো হলো-১. (সপ্তাহিক) জুমার রাত ২. রজব মাসের প্রথম রাত ৩. শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত ৪. ঈদুল ফিতরের রাত এবং ৫. ঈদুল আজহার রাত। (মুসান্নেফে আবদুর রাজ্জাক)
আরও পড়ুন: আহলে হাদিসের প্রধান ঈদ জামাত ঢাবির কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে
এই রাতে ইবাদাতকারীর জন্য আল্লাহ তাআলা জান্নাত ওয়াজিব করা ঘোষণা দিয়েছেন। এ সম্পর্কিত এক হাদিসের এক বর্ণনায় এসেছে- হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি পাঁচটি রাত (ইবাদতের মাধ্যমে) জেগে থাকবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। তা হলো -১. জিলহজ মাসের ৮ তারিখের রাত ২. জিলহজ মাসের ৯ তারিখের রাত (আরাফার রাত)৩. ঈদুল আজহার রাত ৪. ঈদুল ফিতরের রাত এবং ৫. অর্ধ শাবানের রাত।’ (আত তারগিব ওয়াত তারহিব)
এছাড়াও ঈদের চাঁদ রাতে ইবাদতকারীর জন্য ইসলামে বিশেষ মর্যাদার ঘোষণা রয়েছে। তা হলো- এই রাতে ইবাদাতকারীদের অন্তর মরবে না। এ আমল সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবু উমামা বাহেলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে আল্লাহর কাছে সাওয়াব পাওয়ার নিয়তে ইবাদত করবে, তার অন্তর সেদিনও জীবিত থাকবে, যেদিন সকল অন্তরের মৃত্যু ঘটবে।’ (ইবনে মাজাহ)
অন্য এক বর্ণানায় রয়েছে, হজরত উবাদা ইবনে সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈদ-উল-ফিতর এবং ঈদ-উল-আজহার রাতকে (ইবাদতের মাধ্যমে) জীবিত রাখবে, তার অন্তরও সেই দিন মরবে না, যেদিন অন্যদের অন্তর মরে যাবে।’ (আল মুজামুল আওসাত)
উপরের হাদিস সমূহের বর্ননা দুই ঈদে চাঁদ রাতের বিশেষ মর্যাদা নিশ্চিত করে। এই দুই রাতের এসব আমলের মাধ্যমে উম্মতে মোহাম্মদী মহান রবের পক্ষ থেকে ঘোষিত বিশেষ পুরস্কারপ্রাপ্ত হতে পারবেন। আল্লাহ রব্বুল আলামীন মুসলমানদের এই উৎসব উদযাপনের পাশাপাশি বিশেষ দিনের ইবাদাতের মাধ্যমে তাঁর পুরস্কার লাভের তাওফিক দান করুন।