২৬ মে ২০২২, ১০:২১

এই ছবিটা জাতীয় লজ্জার!

ড. মো. কামরুল হাসান মামুন (ইনসেডে)   © সংগৃহীত

এই ছবিটা জাতীয় লজ্জার। যারা একে অপরের বন্ধু হওয়ার কথা তারা লোভী রাজনীতিবিদদের কারণে একে অপরের শত্রু হয়েছে। এই ছবিটা ব্রাহ্মণবাড়িয়া কিংবা নরসিংদীতে দুই গ্রামের দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে মারামারির দৃশ্য মনে করিয়ে দেয়।

ছবির থেকে ভিডিওটা দেখলে আরও বেশি মিল পাওয়া যায়। শতবর্ষের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা যদি অশিক্ষিত মূর্খের মত এমনভাবে মারামারি করে তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত না হওয়ার কি কোন কারণ আছে?

যেই ছাত্রদের পড়াশুনায় ব্যস্ত থেকে দেশ বিদেশের বড় বড় স্কলার হওয়ার চেষ্টা করার কথা তারা এখন ছাত্র হয়ে সহপাঠীদের সাথে দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে মারামারি করছে। আর এই দৃশ্য দেখছে প্রশাসন, সরকার আর জনসাধারণ। যেন এটি সাধারণ কোন ঘটনা। যারা যাদের মারছে তাদের অনেকেই অনেককে চেনে না অথবা চিনে কিন্তু ব্যক্তিগত কোন শত্রুতা নেই।

এরা কেবলই ক্ষমতা লোভী রাজনীতিবিদদের ক্যাডার হয়ে নিজেদের পটেনশিয়াল অকালে অঙ্কুরে নষ্ট করছে। এই মারামারিতে কোন নেতার ছেলেমেয়েকে পাওয়া যাবে না। কখনো পাওয়া যায়নি। তাদের সন্তানরা পড়াশুনা করে adiabatic সিস্টেমে যেখানে বাহিরের তাপ ঢুকতে পারে না আবার ভিতরের তাপ বাহিরে যেতে পারে না।

আমাদের রাজনৈতিক নেতারা এইভাবে সকল কাজে তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ভিআইপি সিস্টেম, shunt বা বিকল্প সিস্টেম চালু করে দেশের মধ্যেই বিদেশী জীবন যাপন করে। সমাজকে বিভাজিত করার জন্য দেশের মধ্যে কওমি, আলিয়া মাদ্রাসা, ইংরেজি মাধ্যম, ইংরেজি ভার্সন আর বাংলা মাধ্যমে এমনভাবে বিভাজিত করা হয়েছে যেন এর সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক থাকে। এই বিভাজনটা আসলে ইফেক্টিভলি অর্থনৈতিক ক্লাসে বিভাজনের সমান।

ফলে একই দেশে থেকেও এক ক্লাসের মানুষ অন্য ক্লাসের মানুষদের বুঝে না। বিভাজনের ফলে মানুষ একত্রিত হয়ে দাবি জানাতে পারেনা। শিক্ষার মত মৌলিক চাহিদার ব্যাপারেও যখন দাবি জানায় তখনও কেউ একত্রিত হতে পারে না।

সব সময় বলা হয় ছাত্র আন্দোলনই এই ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সকল আন্দোলনে যোগ দিয়ে সফল করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো কোন আন্দোলনের ফসল জনগণের ঘরে উঠেনি।

সকল ফসল শেষমেশ রাজনীতিবিদরাই হাইজ্যাক করে নিয়ে গিয়েছে। এই ছাত্র আন্দোলনের এত গুণগান গায় তারপরেও কি আমাদের ছাত্ররা একটু ভালো থাকা, পড়ার একটি টেবিল পাওয়া, একটা ওয়ার্ডরোব পাওয়া, একটু ভালো খাবার কি পেয়েছে? অন্যের সন্তানদের লাঠিয়াল হিসাবে ব্যবহার করে নিজেরা ক্ষমতায় যায় ঠিকই কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর ছাত্র শিক্ষক vis-a-vis শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে যায় অবহেলিত।

ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতা থেকে নামানোর রাজনীতিতে ছাত্রদের এইভাবে ব্যবহার কতটা নীচতার পরিচয় তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। ছাত্ররা করবে ছাত্রদের রাজনীতি। তারা দাবি করবে শিক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধির। তারা দাবি করবে আবাসিক হলে শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টির।

অথচ তারা কি করছে! তাও যদি কোন আদর্শের রাজনীতি হতো। এখানে তো রাজনীতিটা কেবলই ক্ষমতা কেন্দ্রিক। মানুষের ভালো করা, মানুষকে শিক্ষিত করাতো এদের উদ্দেশ্য না। কখনো যদি কিছুটা করে সেটা কেবল চাপে পড়লেই করে।