২১ এপ্রিল ২০২২, ১৬:১৩

দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে

নাহিদ, প্রীতি ও লেখক   © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার প্রায় কেন্দ্রস্থলে নিউমার্কেটে ‘ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী’ এবং ‘স্থানীয় দোকান কর্মচারীদের’ মধ্যে মঙ্গলবারের সংঘর্ষের সময় হত্যাকাণ্ডের শিকার নাহিদ হাসানের বাবা নাদিম হোসেন তাঁর সন্তানের অপমৃত্যুর পরে বলেছিলেন, ‘কারও কাছে বিচার চাই না। বিচার চেয়ে কী হবে। কার কাছে বিচার চাইব। মামলাও করতে চাই না’। 

গত ২৪ মার্চ রাজধানীর শাহজাহানপুরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে শিক্ষার্থী সামিয়া আফরীন প্রীতির বাবা জামাল উদ্দিন বলেছিলেন, ‘মেয়ের হত্যার বিচার চাই না। মামলা চালানোর মতো অবস্থাও নেই। আমরা নিরীহ মানুষ। বিচার চাইলে আল্লাহর কাছে চাই। তিনিই বিচার করবেন।’

এই দুই হত্যাকাণ্ডের জন্যে যারা দায়ী– প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে–সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং রাষ্ট্র তাঁদের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারবেন কিনা জানিনা; কিন্তু সন্তান হারানো এই দুই পিতা যে দেশের শাসন ব্যবস্থা, সরকার আর বিচার বিভাগকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন সেটা কী বুঝতে পারছি?

পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে নাদিম হোসেন মামলা করেছেন, কিন্তু অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে করা এই মামলার ভবিষ্যৎ সম্ভবত আমরা জানি। তাঁদের প্রিয়জন হারানোর পরে তাঁদের প্রথম প্রতিক্রিয়াগুলো তাঁদের যে অবস্থার কথা বলে তা কি তাঁদের একার কথা?

২০১৫ সালে নিহত ফয়সাল আরেফিন দীপনের পিতা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক একই কথা বলেছিলেন, ২০১৫ সালে নিহত হয়েছিলেন লেখক অভিজিৎ রায়, এক সময় তাঁর স্ত্রী রাফিদা খাতুনও বলেছিলেন ‘আমিও বিচার চাইনা’। কেননা চাইলেও বিচার পাওয়া যাবে এমন নয়। অনেক হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে পাওয়া যায়নি।

এই যে বিচার না চাওয়া সেটা হচ্ছে দেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তার প্রমাণ। ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত কারোই এখন আর আইন ও বিচার ব্যবস্থার ওপরে আস্থা নেই। প্রতিষ্ঠানের ওপরে আস্থা নেই, কেননা প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙ্গে পড়েছে।

সেগুলো নিজে নিজে পড়েছে তা নয়, যে শাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে সেখানে প্রতিষ্ঠানের চেয়েও ব্যক্তি বড় হয়ে উঠেছে। ভিক্টিম যারা তাঁরাই এখন ভীত সন্ত্রস্ত থাকেন। ভয়ের সংস্কৃতি আর বিচারহীনতার সংস্কৃতি মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে।