ইমরান খানের পতন ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পতনের মাধ্যমে এই ধারণা আরেকবার প্রতিষ্ঠিত হল যে রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান ভঙ্গুর গণতন্ত্রের দেশ। যে দেশটিতে এখন পর্যন্ত কোন প্রধানমন্ত্রী তার পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ করতে পারেনি।
ক্যারশিম্যাটিক নেতা হিসেবে পরিচিত ইমরান খান দায়িত্ব গ্রহণের পরে মনে হচ্ছিল যে হয়তো ইমরানই পাঁচ বছর পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নতুন ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন। কেননা ইমরান খান পেরেছিল বহুদশক ধরে পাকিস্তানের রাজনীতিতে আসন গড়ে বসে থাকা ভুট্টো পরিবার ও শরীফ পরিবারকে অনেক সংগ্রামের পর অপসারণ করতে।
এছাড়া ইমরানের পাকিস্তানের ক্ষমতার রাজনীতিতে আবির্ভাব ঘটেছিল দুর্নীতিমুক্ত, পরিবর্তিত নতুন পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখানোর মাধ্যমে। যদিও অভিযোগ রয়েছে ইমরান খান ক্ষমতা লাভের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর সহানুভূতি পেয়েছিলেন। পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনা হস্তক্ষেপের অভিযোগ অনেক পুরানো।
যারা পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করেন, তাদের সাথে সেনাবাহিনীর সখ্যতা সম্পর্ক থাকে বলে মত প্রচলিত আছে। ইমরান খান তার ব্যতিক্রম নন। ইমরান খানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরিফের রাজনীতিতে শুরু হয়েছিল সামরিক একনায়কের সাথে সখ্যতার মাধ্যমে। পরবর্তীতে সেই সম্পর্কের অবনতির কারণে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ছিলেন নওয়াজ শরিফ।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের বর্ণনা দিতে গিয়ে পাকিস্তানের অন্যতম আইনজ্ঞ এম আর কায়ানী বলেছিলেন যে, ‘পাকিস্তানের সেনাবাহিনী হচ্ছে পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ, কারণ আর কেউ যা করেননি, তারা সেটা করেছে, নিজের দেশটাকে তারা দখল করেছে। নিজের দেশকে দখল করার এই প্রক্রিয়ার একটা ভয়ানক প্রভাব হচ্ছে পাকিস্তানের গণতন্ত্রের ভঙ্গুরতা।
সেনাবাহিনীর সঙ্গে দূরত্বই হচ্ছে ইমরান খান সরকারের পতনের অন্যতম কারণ। পাশাপাশি ইমরান খান তার সরকারের পতনের পিছনে যে মার্কিন প্রভাবের কথা বলেছেন তা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কেননা, এক হাতে তো আর তালি বাজে না। বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন ইমরান। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সখ্যতার কারণে পশ্চিমাদের রোষানলে পরেছিল ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকার।
ইমরান খান সরকারের পতনের পর এখন সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে তা হলো নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার কি স্থিতিশীল হবে? শাহবাজ শরীফের সরকারের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা বেশ কষ্টকর হবে বলে মনে হচ্ছে। কেননা ইমরান খানের দল ইতিমধ্যে নয়া নির্বাচনের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করেছেন।
পাশাপাশি শাহবাজ শরীফের শপথ অনুষ্ঠানে অসুস্থতার দোহাই দিয়ে প্রেসিডেন্ট আরফি আলভি ও সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার অনুপস্থিতি অনেক নেতিবাচক অর্থ বহন করে। দায়িত্ব অর্পণকে কেন্দ্র করে আরেকটি জটিলতা হতে পারে।
লেখক:
মো. হাসান তারেক, শিক্ষক ও কলামিস্ট