এদেশে মেয়েদের জীবনের দাম মিস করা গুলিতে দেয়া প্রাণের সমান
ঠিক আমার নামের একটা মেয়ে কলেজ থেকে রিকশায় করে ফিরতেছিল গতকাল, মেয়েটার নাম সামিয়া আফরিন প্রীতি। হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার গায়ে এসে গুলিটা লাগলো, সে লুটিয়ে পড়লো রাস্তায়। জানা গেলো- ছাত্রলীগের দুই পক্ষের কোন্দলের সূত্র ধরে যাকে লক্ষ্য করে গুলিটা করা হইছিলো, তাকে মিস করে পথচারী প্রীতির গায়ে সেটা লাগছে। হাসপাতালে গিয়ে জানা গেলো, সে মরে গেছে অনেক আগেই!
এই ঘটনাটা গতকালের মতিঝিলের। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মেয়ের বাবা আইনি পদক্ষেপ নেবেন না, কারণ এরমধ্যেই বাসায় দুই এমপি ঘুরে গেছে! বাকিটুকু আর বলে দিতে হবে?
এক মেয়ে শখ করে হাজবেন্ড আর সন্তান নিয়ে সমুদ্র দেখতে গেছিলো, সে হইছে গ্যাংরেপের শিকার। সংবাদ সম্মেলন করার পরে রব উঠলো- সে নাকি বেশ্যা! কেউ মুখ ফুটে বলেছে- অন্যায় বেশ্যার সাথে হলেও সেটা অন্যায়ই?
তনু নামের যে মেয়েটা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরের রাস্তা দিয়ে বাসায় ফিরতেছিল, সে রাস্তার মধ্যেই ভয়ংকরভাবে ক্ষতবিক্ষত যোনী নিয়ে মারা পড়লো। তার ময়নাতদন্তে লেখা হলো- ভালুকের কামড়। ছয় বছর চলে গেছে, ওই এলাকার ভালুকদের ধরা পড়তে দেখছেন?
আরও পড়ুন: পরিবারের হাল ধরতে এপ্রিলে চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল প্রীতির
আরো শুনবেন? এক মা’কে ছেলেধরা সন্দেহে স্কুলের গেটে পিটায়ে মারা হইলো। এক মা ছাদ থেকে লাফ দিলো কারণ তার বাচ্চা হচ্ছিলো না।
একটা ক্লাস টেনের বাচ্চা মেয়ে সারাদিন চেয়ারম্যানের ভাতিজার দ্বারা রেপড হয়ে মনের দুঃখে চিঠিতে বাপ-মাকে সোনা বাবা-মা সম্বোধন করে লিখলো- আমি বেঁচে থাকলে তোমাদের সম্মান শেষ হয়ে যেতো!
জ্বি, এইটা একটা ‘স্বাধীন’ দেশের নারী বিষয়ক বিভিন্ন ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’, যেসব ঘটনায় ঠিক এইভাবেই ধুপধাপ করে নারীরা ভিক্টিম হয়ে যায়!
সেইদেশে টিসিবির ট্রাকের পেছনে দৌড়ায় নারী, রাস্তায় ফেরার পথে মরে যায়, রেপড হয় নারী, নামেমাত্র দেশ চালায় নারী, নারীর টিশার্ট পরা নিয়ে ফতোয়া দেয় নারী! সেই দেশের পুরুষ ক্রিকেটারদের বেতন আর নারী ক্রিকেটারদের বেতন বৈষম্য দেখলে আর মনে হয়না সেইদেশে নারীর সংখ্যাও পুরুষের তুলনায় বেশি!
আরও পড়ুন: মা বলেছিল, ‘আজকে তোর আসার দরকার নাই’
যেদেশের মেয়েদের জীবনের দাম মিস করা গুলিতে দেয়া প্রাণের সমান, কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে আর সৈকত দেখতে গিয়ে রেপ নামক নরক দেখার মতো- সেইদেশের পুরুষদের ক্ষমা করে দিলাম। যেদেশের নারীই নারীকে সাহস দিতে পারেনা, ভিড়ের মধ্যে টিশার্ট পরায় গালাগালিতে প্রথম নারীই এগিয়ে আসে, রেপড হয়ে ফিরে আসার পরে যে মায়েরা মেয়েকে এতোটুকু অভয় দিতে পারে না- সম্মান তোর শরীরে নাই, সেইদেশের পুরুষদেরকে কি বলবো?
সম্ভবত তসলিমা নাসরিনের একটা বইয়ের ভূমিকায় লেখা ছিলো- তবে কি সত্য এইযে মৃত্যু ভিন্ন নারীর মুক্তি নাই? পুরুষের কাপুরষতা, নীচতা, ভিক্টিম ব্লেমিংয়ের বয়ান শুনে নারীর কাছে ফিরে আসি। ফিরে এসে আর ফিরে যাওয়ার পথ পাইনা!
যে মেয়ে নিজের বিপদে নিজে দাঁড়াতে পারে নাই, নিজের কাঁধে সহযোদ্ধার লাশ তুলে নিতে শেখে নাই, যে নিজের মেয়েকে, বন্ধুকে, বোনকে বাঁচার সাহস দিতে পারে নাই, বলতে পারে নাই- পুরুষরা তোকে রিজেক্ট করলেও আমরা তোর হাত ছাড়বো না, তার পাশে দাঁড়াবার ঠ্যাকা কার পড়েছে?
আরও পড়ুন: মামলা করবে না প্রীতির পরিবার, বললেন ‘বিচার কার কাছে চাইবো?’
নারী হয়ে যে বিপদগ্রস্ত নারীর পাশে দাঁড়াতে পারেনা, সেই নারী স্বাধীনতা দিবসের বয়ান লিখবে কেমন করে? এইসব ভাবার দরকার নাই আপারা, আপনি বরং নিজের কথা ভাবেন। কিন্তু নিজের কথা মানে যে অন্যের কথাও ভাবা- ভাবার সময় তা আপনার মনে পড়বে তো?
মনে পড়বেতো- স্বাধীনতা দিবসের আগের দিনও এইদেশে একটা বুলেটের দাম আপনার জীবনের দামের চেয়ে বেশি?
লেখা: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত