এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত জীবিত অপুদের রক্ষায় মনোযোগ দেয়া
অপুর সাথে আমার বিশেষ কোনো ইন্টারেকশন ছিল না। ২০১৫ সালে দেশ ছেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাপারটা ঘটেছে। অপু মারা যাওয়ার পর তাকে নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় অন্যদের লেখাজোখা দেখে মনে হচ্ছে, ওর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পুরোটা সময়ে (২০১৩-১৮) আমি বিভাগে থাকলে ওর সাথে একটা ভালো ইন্টারেকশনের সম্ভাবনা ছিল।
ওদের একটা কোর্স নিয়েছিলাম সম্ভবত সেকেন্ড ইয়ারে। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে আমরা পরস্পরের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারিনি! সন্দেহ নেই, অপুর সঙ্গে হৃদ্যতা না হওয়াটা আমার জন্য বিরাট লস!
মানুষ বিচিত্র কারণে আত্মহত্যা করে। এটা নিয়ে এক্সপার্ট ওপেনিয়ন দেয়ার সুযোগ আমার নেই। কেবল কান্ডজ্ঞান থেকে বলতে পারি, ব্যাপরটা জটিল এবং দেশ-কাল-পাত্র/পাত্রী স্পেসিফিক। এর জন্য রাষ্ট্র-সমাজ-প্রতিষ্ঠানের দায় আছে, স্যোসাল স্ট্রাকচার-ওরিয়েন্টেশন-সিস্টেমের দায় আছে, দায় আছে পরিবার-সম্পর্ক ও আরও আরও নানা কিছুর! ব্যাপারটা যতোটা জটিল ভাবছি, তার চেয়েও জটিল বলে মনে হচ্ছে। একরৈখিক ওয়েতে দেখার সুযোগ নেই।
আত্মহত্যার জন্য যদি কেবল বিদ্যমান সিস্টেম, ল্যাক অব ডেমক্রেসি কিংবা অব্যবস্থাপনাই দায়ী হতো তবে কেবল থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রিতে ই তা বেশি হতো। ওয়ার্ল্ড হেল্থ অরগানাইজেশনের পরিসংখ্যান বলছে, আত্মহত্যার হার সবচেয়ে কম কম্পারেটিভলি গরীব ও 'অগণতান্ত্রিক' দেশে (যেমন, আফগানিস্তান), সবচাইতে বেশি ধনী ও 'গনতান্ত্রিক' দেশে (যেমন, গ্রীনল্যান্ড, জাপান, ইউরোপীয় দেশসমূহে)।
ব্যক্তি ধরে যদি কথা বলি, তবে বলতে হয়, অপুর এচিভমেন্টও কিন্তু কম ছিল না। অনেক অব্যবস্থাপনার মধ্যেও তার অনার্স এবং মাস্টার্সের রেজাল্ট প্রথম দিকে। তার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হওয়ার সম্ভাবনা ছিল প্রবল। বিসিএস প্রিলিমিনারির বৈতরণী পার হয়ে সে লিখিত পরীক্ষার প্রিপারেশন নিচ্ছিল। যদ্দূর বুঝি, চাকরি-বাকরি নিয়ে চরম হতাশ হওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না ওর। অথচ ফার্স্ট ইয়ার থেকেই না কি তার সুইসাইলাড টেন্ডেসি। একাধিক বার এটেম্পটড নিয়েছিল ও।
এখন বোঝা যাচ্ছে ওর দরকার ছিল নিয়মিত কাউন্সিলিং। কিন্তু আমারা তা দিতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছি! এখন বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত এ ব্যাপারটা তে সত্ত্বর মনোযোগ দিয়ে জীবিত আপুদের জীবন রক্ষা করা!
লেখক: আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ফ্লোরিডায় পিএইডিরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক