বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদে অতিরিক্ত সচিব নিয়োগ ও কিছু কথা

 সালাউদ্দিন সোহাগ
সালাউদ্দিন সোহাগ  © সংগৃহিত

একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পিআরএল ভোগরত একজন অতিরিক্ত সচিবকে নিয়োগ দেয়া নিয়ে অনেকেই ফেসবুকে পক্ষে বিপক্ষে মতামত দিচ্ছেন। কেউ কেউ বিষয়টিকে দেশে উচ্চশিক্ষা রসাতলে যাওয়ার একটি ইন্ডিকেটর হিসেবে দেখছেন। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি থেকে প্রতিবাদলিপি দিয়ে বিষয়টির বিরোধিতা করেছেন।

১. বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ তিনটি পদে যারা নিয়োগ পান তাদের মূল কাজ ব্যবস্থাপনা জাতীয়। অর্থাৎ তারা সব কিছু ম্যানেজ করেন। সেটা সরকারের পক্ষ থেকে বা দলীয় অবস্থান থেকে বা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দিক থেকে। সে দিক বিবেচনার একজন অতিরিক্ত সচিবকে এই পদে নিয়োগ দেয়ায় বিষয়টি ব্যবস্থাপনাগত দিক দিয়ে আপাত দৃষ্টিতে যৌক্তিক বলেই মনে হয়। কেননা সরকার চাইলে আমলা দিয়ে মন্ত্রণালয় চালানোর মত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবলিক নয়) পরিচালনার বিষয়টিও ট্রাই-আউট করে দেখতে পারেন। কেননা ইদানিং অনেক প্রথিতযশা (!) শিক্ষক কাম ভিসি মহোদয়গণের দিকে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এবং সেসব অভিযোগের তদন্ত চলছে।

আরো পড়ুন বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় পদে আমলা, আপত্তি চার শিক্ষক সংগঠনের

২. সব মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকেন একজন সচিব এবং কয়েকজন অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব এবং উপসচিব। তাদের মূল দায়িত্ব ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত হলেও তারাই নীতিমালা বা পলিসি তৈরি করেন। এটাই বাস্তবতা। যদিও বিশেষজ্ঞ কমিটির সহায়তা নিয়ে এটা মন্ত্রী মহোদয়গণের করার কথা। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ মন্ত্রীই আমলাদের তৈরীকৃত নীতিতে স্বাক্ষর করে দায় সারেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত আমলাদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্তারা আগেই ধরা খেয়ে আছেন।

৩. আমার দেখা ও জানা মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তা ব্যক্তিগণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। তারা আরোপিত সিদ্ধান্ত শুধু বাস্তবায়ন করেন মাত্র। তাদের নিজেদের মেধা ও বুদ্ধি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব উন্নয়ন করেছে এমন সংবাদ আমি গত কয়েক বছরে দেখি নাই বা শুনি নাই। তাই একজন অতিরিক্ত সচিবকে নিয়োগ দেয়ার ফলে এই ধরণের কাজে কোন ব্যাঘাত ঘটবে বলে আমার মনে হয় না।

আরো পড়ুন কোষাধ্যক্ষ পদে অতিরিক্ত সচিব নিয়োগের প্রতিবাদ জবি শিক্ষক সমিতির

৪. তা হলে কি আমি এই নিয়োগের পক্ষে বলছি। না, তেমনটি নয়। তবে এ ক্ষেত্রে যা করা যায়- "সরকারের আমলাদের মধ্যে যারা "Educational Administration & Leadership" কিংবা "Higher Educational Institution Management" কিংবা "Educational Management" বিষয়ে উচ্চশিক্ষা (MA, M.Ed. বা EdD) নিয়েছেন তাদের এসব পদে নিয়োগ দিতে পারেন"। তারা তাদের ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এক্সপেরিয়েন্স এবং শিক্ষা সংক্রান্ত নলেজ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালো পরিচালনা করতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

৫. আইনি সমস্যা নিয়ে যেমন গাইনি ডাক্তারের কাছে যাবেন না. তেমনি শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্যা নিয়েও পুষ্টিবিদের কাছে যাবেন না। যাদের (আমলা) যেই বিষয়ের নলেজ আছে তাদের তা সমাধানের সুযোগ দিন। যেমন- যেসব আমলাদের প্রযুক্তিগত নলেজ আছে তাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে, যাদের শিক্ষা বিজ্ঞানের নলেজ আছে তাদের শিক্ষা সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ে এবং এমবিবিএস গ্রাডুয়েটদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কাজের সুযোগ দিন। বিশেষ করে টেকনিক্যাল বিষয়ের মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয় থেকে পাস করা গ্রাজুয়েটদের সুযোগ দেয়ার কথা বলছি। নইলে পলিসি মেকারগন "লার্নিং টু লিভ টুগেদার"এর সাথে 'লিভ টুগেদারের' সহ-সম্পর্ক খুঁজে পেতে পারেন।

৬. বর্তমান যে প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিসি, প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হয়, আমি সে প্রক্রিয়াকে সমর্থন করিনা। তাই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার যেসব শিক্ষকদের নির্বাচিত করা হবে তাদের ক্ষেত্রেও "Educational Management" সংক্রান্ত বিষয়ে উচ্চ (MA, M.Ed. বা EdD) ডিগ্রীধারীদের সুযোগ দেয়া দরকার। শুধু 'জি হুজুর' বিবেচনায় এসব পদগুলো ফিলাপ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অচিরেই শেষ নিঃশেষ ত্যাগ করবে।

সবাই যার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, আমিও তার সুদৃষ্টি কামনা করছি। দয়া করে শিক্ষা ব্যবস্থা বাঁচান। (ফেসবুক থেকে সংগৃহিত)


সর্বশেষ সংবাদ