মন্ত্রণালয়ের অনুদানের নামে শিক্ষার্থীদের পকেট কাটা হচ্ছে

  © টিডিসি ফটো

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। আর সেই মেরুদণ্ডকে আঘাত হেনেছে করোনাভাইরাস। গত বছরের মার্চ মাস থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ভার্চুয়াল ক্লাস চললেও গ্রামীণ জনপদে তা সেরকমভাবে পৌঁছাতে পারেনি। কারণ ইন্টারনেটের পর্যাপ্ত সেবা নেই।

শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন কালো অধ্যায় চলমান। কেউ টিউশনি করে নিজের লেখাপড়া এবং পরিবারের জন্য অর্থ জোগান দিত। সেটাও হারিয়ে কষ্টে জীবন-যাপন করছে। কেউ বা পথে-ঘাটে, ক্ষেতে-খামারে, কল-কারখানায় শ্রমিক হয়েও কাজ করছে।

ঠিক এমন সময় শিক্ষা মন্ত্রাণালয় থেকে আন্দাময় খবর, কভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেরামত, সংস্কার, আসবাবপত্র ক্রয়সহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজের জন্য, শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের দূরারোগ্য ব্যাধি ও দৈব দুর্ঘটনার সহায়তার জন্য এবং শিক্ষার্থী যারা দূরারোগ্য ব্যাধি, দৈব দুর্ঘটনা এবং শিক্ষাগ্রহণ কাজে ব্যয়ের জন্য আবেদন করতে পারবে।

তবে শিক্ষার্থীদের এ বিশেষ অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে দুঃস্থ, প্রতিবন্ধী, অসহায়, রোগগ্রস্ত, গরীব, মেধাবী, অনগ্রসর সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। এই অনুদানের আবেদনের সময়সীমা ছিল ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মাউশি সেই আবেদনের সময়সীমা বাড়িয়েছে দ্বিতীয় ধাপে (৭ মার্চ) পর্যন্ত।

২৮ ফেব্রুয়ারি সময় বাড়ানোর ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বর্তমান কভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীদের অনুদান প্রদানের লক্ষ্যে অনলাইনে আবেদনের সময়সীমা আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলো। আবার তৃতীয় ধাপে একই বিষয় উল্লেখ করে ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।

কিন্তু এদিকে মাউশির বিজ্ঞপ্তিতে অনুদানের টাকার পরিমাণ উল্লেখ না থাকলেও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাউশি থেকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রত্যয়ন দেওয়ার নামে কেউ নিচ্ছে ২০ টাকা, কেউ নিচ্ছে ৫০ টাকা আবার কিছু প্রতিষ্ঠান তো একশত টাকাও নিচ্ছে; এমনসব তথ্য উঠে আসছে গনমাধ্যমে।

এভাবে দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিশেষ অনুদানের নামে শিক্ষার্থীদের পকেট কাটা হচ্ছে। এই লুটপাটের দায়ভার কে নিবে? আমরা তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরের কেউ নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সকল শিক্ষার্থীদের জানানো যে, কাদের জন্য এই অনুদানের টাকা, কারা আবেদন করতে পারবে এবং অনলাইনের আবেদনের কাজটা তাঁরাই করতে পারত। সেটা না করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে ভিড় জমানো কতটা গ্রহণযোগ্য কাজ সেটা প্রশ্ন থেকেই যায়।

আর রশিদ ও প্রত্যয়নপত্রের জন্য টাকা দিতে হবে কেন? অথচ আমাদের ট্যাক্সের টাকায় দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলে। করোনায় যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, শিক্ষাজীবন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে সেই সময়ে আমাদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়ানো তাদের উচিত ছিলো। তা না করে রশিদ ও প্রত্যয়ন পত্রের দোকান খুলে বসেছে তারা।

স্বাধীনতার ‘সুবর্ণজয়ন্তী’ বছর চলছে। এ মুহূর্তে আমরা শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রের কাছে প্রশ্ন তুলতেই পারি যে ‘শিক্ষা’ কি আমাদের মৌলিক অধিকার হয়েছে? না কি শিক্ষা হচ্ছে বাজারের আলু পটলের মতো। শিক্ষা-ব্যবসা একসাথে চলে না। শিক্ষা আমার অধিকার, শিক্ষা কোনো পণ্য নয়। আমরা আমাদের অধিকার চাই।

লেখক: শিক্ষার্থী, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জয়পুরহাট সরকারি কলেজ


সর্বশেষ সংবাদ