অনলাইনে নয়, তিতুমীর কলেজের পরীক্ষা সশরীরে নেয়ার পরামর্শ

মাহবুব হাসান রিপন
মাহবুব হাসান রিপন  © টিডিসি ফটো

গত কয়েকদিন যাবৎ অনেকে এই বিষয়ে আমার কাছ থেকে জানতে চেয়েছে এবং তাদের বিভিন্ন বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে এবং তারা আমার অবস্থান জানতে চেয়েছে। সরকারি তিতুমীর কলেজ প্রশাসন থেকে অফিসিয়ালি জানানো না হলেও বিভিন্ন মাধ্যমের বরাত দিয়ে যা জানতে পেরেছি তা হলো-

১। আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ইনকোর্স ও টেস্ট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
২। ইনকোর্স পরীক্ষা গুগল ফর্মের মাধ্যমে অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে এবং সময় থাকবে ১৫ মিনিট৷
৩। এসাইমেন্ট থাকবে এবং সেটি অনলাইনে প্রদান করতে হবে।
৩। টেস্ট পরীক্ষা জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে।

যেহেতু অফিসিয়ালি জানানো হয়নি সেহেতু এই বিষয়গুলো নিয়ে এখনো একটি গঠনমূলক আলোচনা করার সুযোগ রয়েছে সেহেতু এই বিষয়ে আমার মতামত তুলে ধরছি-

১। অনলাইনে পরীক্ষা দেবারমত আমাদের সামর্থ্য আছে কি না?

সরকারি তিতুমীর কলেজ বিতর্ক ক্লাবের সভাপতি হিসেবে শিক্ষার্থীদের একাংশের সাথে আমার যোগাযোগ রয়েছে। সেই যোগাযোগ থাকায়, ক্লাবের কার্যক্রম অনলাইনভিত্তিক করায় আমি জানি আমাদের ক্লাবের ৭৫ শতাংশ সদস্য এই সুবিধা নিতে পারছে না। অর্থাৎ আমাদের বিতর্ক ক্লাবের মোট সদস্যের ২৫ শতাংশ তারা অনলাইন সুবিধা নিতে পারছে। এই সংখ্যাটা যখন ৫৮ হাজার শিক্ষার্থীর সাথে তুলনা করা হবে তখন এটি আরও বৃদ্ধি পাবে। কাজে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত তাতে প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী বঞ্চিত হবে বা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের শিক্ষার্থীদের একাংশ একদম প্রান্তিক পর্যায় থেকে, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা। যাদের না আছে স্মার্ট ফোন আর না আছে নেট কিনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করারমত সামর্থ্য। শুধু তাই নয়, প্রান্তিক পর্যায়ে হওয়ায় গ্রামে ইন্টারনেট সুবিধাও যাচ্ছেতাই। তাদের কথা বিবেচনা করা হলে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়াটা একদম সঠিক সিদ্ধান্ত হবে বলে আমি মনে করি না।

২। অফলাইনে পরীক্ষার বিষয়ে আমার মতামত

গত ৮ মাসে শিক্ষা ব্যবস্থা সংক্রান্ত কোন সঠিক দিকনির্দেশনা রাষ্ট্রযন্ত্র দিতে পারেনি। তারা মার্চ মাস থেকে পর্বভিত্তিকভাবে ছুটি বর্ধিত করেছে যার ফলে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে সময় অতিবাহিত করেছে। সেই সময়ে ঢাকায় থাকা অনেক শিক্ষার্থীর পার্ট টাইম জব হারিয়েছে, টিউশনি হারিয়েছে এবং তারা আর্থিকভাবে দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অথচ তাদের ঢাকায় টিকে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছিলো পার্ট টাইম জব বা টিউশনি৷ রাষ্ট্রযন্ত্র যখন সুনির্দিষ্ট কোন রুপরেখা দিতে পারলো না তখন অনেকে মেসের বিল মাসের পর মাস বিনা কারণে টানতে থাকলেন, এর একটাই কারণ হুট করে ক্যাম্পাস খুলতে পারে!

আমরা খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম ৫ মাস, ৬ মাস মেসে না থেকেও বিন্দুমাত্র ছাড় না দিয়ে পুরো টাকা পরিশোধ করে তারপর তাদের মেস ছেড়ে দিতে হয়েছে। কেউ জমি বিক্রি করে, কেউ ফসল বিক্রি করে, কেউ সঞ্চয় থেকে এই অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করেছে সেখানে রাষ্ট্রযন্ত্র, কলেজ প্রশাসন কোন ভূমিকা বা উদ্যোগী হতে পারেনি।

বর্তমানে অধিকাংশ শিক্ষার্থী তাদের ঢাকার আবাসন ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছে এমতাবস্থায় হঠাৎ করে ৫- ৬ দিনের নোটিশে ঢাকায় নিয়ে এসে পরীক্ষা দেওয়ানো সম্ভব না। এটি আমরাও জানি। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন প্রয়োজন। তাদের আর্থিক প্রস্তুতি নেওয়ার, ঢাকায় নতুন করে আবাসন খোঁজার সময় দিতে হবে তারপর ক্যাম্পাসে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

৩। আপাতত আমাদের কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে?

১। কলেজ প্রশাসনকে সকল বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য কর্ম পরিকল্পনা ঘোষণা করতে হবে।
২। তাদের আবাসন খোঁজার জন্য ও আর্থিক প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। প্রয়োজনে উপবৃত্তি চালু করতে হবে।
৩। অনলাইন পরীক্ষার নামে প্রহসন বন্ধ করতে হবে, গুগল ফর্মের মাধ্যমে ইনকোর্স পরীক্ষারমত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। এতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে যাবে।
৪। অনলাইন এসাইমেন্ট ব্যবস্থা কিছুটা সমর্থন যোগ্য। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা এসাইমেন্ট খাতায় লিখে সেটি কোন কম্পিউটার দোকান থেকে ইমেইলের মাধ্যমে পাঠাতে পারে। এক্ষেত্রে আর্থিকভাবে যে অতিরিক্ত খরচ হবে সেটি ফর্মফিলাপের সময় সমন্বয় করা যেতে পারে।

লেখক: শিক্ষার্থী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, সরকারি তিতুমীর কলেজ বিতর্ক ক্লাব


সর্বশেষ সংবাদ