র‌্যাংকিংয়ে ভালো করা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিভাগের বরাদ্দও ঢাবির চেয়ে বেশি

অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন
অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন

আবার রেঙ্কিং! যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কিউএস এইবার এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এক র‍্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে। আবারো বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ার সেরা ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্থান পায়নি। এইবার বাংলাদেশের ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় এই রেঙ্কিং-এ স্থান পেয়েছে এবং এই ১১টির মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবারো সেরা। মানে নিজ দেশে নিজেদের মধ্যে সেরা। QS এশিয়া রেঙ্কিং-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ১৩৪ তম। গতবার ছিল ১৩৫ তম।

এক আগানো বা পেছানো আসলে কোন ধর্তব্যের মধ্যে পরেনা কারণ এইটা প্লাস/মাইনাস error-এর মধ্যে পরে। সুতরাং অবস্থান ১ এগিয়েছে বলে খুশি হওয়ার কোন কারণ দেখি না। আর দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বুয়েট। বুয়েটের অবস্থান ১৯৯ তম। বুয়েটের অবস্থান এর চেয়ে আরো অনেক ভালো আশা করেছিলাম। আর বাকি ৯টির অবস্থান লজ্জাজনক।

তবে উল্লেখ করতেই হবে তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম অবস্থানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। তার মানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, চিটাগং, শাহজালাল ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এইসব রেঙ্কিং ফেংকিংকে কোন পাত্তা না দিয়ে যথারীতি আরো বীরদর্পে পিছিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা একটু বিশেষভাবে বলতে চাই কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এইবার তার জন্মের ১০০ বছর পূর্তি মহাধুমধামে উদযাপন করতে যাচ্ছে। খুবই কষ্ট লাগে যে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি জন্ম হওয়াটা ছিল একটি Big Bang এর মত। জন্মের পরপরই অনেক সুনাম কুড়িয়েছিল। ইউনিভার্স-এর জন্মের পর থেকে যেমন এক্সপ্যান্ড হতে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামও জন্মের পর থেকে এক্সপ্যান্ড হতে থাকে। কিন্তু এইটা খুব বেশি স্থায়ী হয়নি।

খুব দ্রুতই অর্থাৎ ১৯৪৬ থেকে এর অবস্থান নামতে থাকে আর সেই নামা কখনো থামেনি। এমন কোন সরকার বা প্রশাসন আসেনি যারা এই নিম্নগামীতাকে থামিয়ে সুনাম যাতে বাড়ে সেই ব্যবস্থা করে। আর আরো কষ্টের বিষয় হলো স্বাধীন বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম সবচেয়ে বেশি গতিতে নষ্ট হয়েছে। ২০-৩০ বছর আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ার ১০০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ছিল। এটা লজ্জার। কিন্তু এই লজ্জার কথা কেউ বলেনা। কারণ বুল্লেই বুলবে বুলছে। তখনই ভালো করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার চাপ আসবে। এর চেয়ে বালুর ভিতরে মাথা ঢুকিয়ে থাকাই ভালো।

একটি সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কোন কম্পোনেন্টই কি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে? সত্যিকারের কোন পিএইচডি প্রোগ্রাম আছে? সত্যিকারের বিশ্বমানের যথেষ্ট সংখ্যক শিক্ষক আছে? একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে কিভাবে বলা হয় যে প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে? অথচ ওয়ার্ল্ড রেঙ্কিং-এ ফরেন ফ্যাকাল্টি একটা গুরুত্বপূর্ণ ইনডেক্স। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন পোস্ট-ডক আছে? কোন পোস্ট-ডক ছাড়া এশিয়ার কোন বিশ্ববিদ্যালয় কি এশিয়ার সেরা ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান পেয়েছে? পাওয়া সম্ভব না।

ছাত্রদের আবাসিক হলের ব্যবস্থা কি শিক্ষা বান্ধব? শ্রেণীকক্ষ কি মানসম্পন্ন? একেকটি সেক্টর ধরে ধরে বিচার করলে এমন একটি ক্ষেত্রও পাওয়া যাবে না যেটি মানসম্পন্ন এবং যেগুলো সময়ের সাথে আরো খারাপ হচ্ছে না।

আর ভালো হবে কিভাবে? ৩৫ হাজার ছাত্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট হলো ৮০০ কোটি টাকা। যেইসব বিশ্ববিদ্যালয় রেঙ্কিং-এ ভালো অবস্থানে আছে তাদের একটি বিভাগের বরাদ্দও ৮০০ কোটি টাকার বেশি। এত অল্প বরাদ্দ দিলেও আমাদের প্রশাসন আরো বেশি বরাদ্দের জন্য কোন দাবি জানায় না। এ এক আশ্চর্যের বিষয়। আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো এই বরাদ্দ পেয়েই এরা সরকারের গুনে মুগ্ধ।

 

লেখক: অধ্যাপক, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 


সর্বশেষ সংবাদ