ছাত্রলীগ: এগিয়ে যাওয়া, এগিয়ে নেওয়া
আমরা স্মরণ করতে পারি ষাটের দশকের কথা। বাঙালি জাতীয়তাবাদের চূড়ান্ত উত্থানকালের কথা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি একত্রিত হচ্ছে, একাত্ম হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে।
ছাত্রলীগ বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার প্রধান হাতিয়ার, অগ্রসৈনিক।
ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের নির্দেশে, তাঁর যোগ্য সাগরেদ মোনেম খানের প্রযোজনায় এবং তাঁদের খয়ের খা ড ওসমান গণি’র পরিচালনায় এন এস এফ দোর্দণ্ড প্রতাপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাসিয়ে বেড়াচ্ছে। ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ফেডারেশন। সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। কখনও রাজপথেও পেশিশক্তির উল্লাসে মেতে উঠছে। ছাত্র-শিক্ষক-জনতা-নেতা কারও রক্ষা নাই।
সময় ঘনিয়ে এল। ছাত্রলীগ পাল্টা আঘাত হানতে শুরু করল। ছাত্রলীগের তো বটেই, তখনকার রুশ-চিনাপন্থী ছাত্রনেতাদের স্মৃতিকথায়ও পাওয়া যায়, ছাত্রলীগের সেই সব দিনের সাহসী অবস্থান ও ভূমিকার কারণেই ক্যাম্পাস শান্ত হয়েছিল, এনএসএফ-এর দৌরাত্ম্য থেমেছিল এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল।
প্রায় এককভাবে ছাত্রলীগ আইয়ুব-মোনেম-গণি’র পোষা গুণ্ডাদের রুখেছিল। অপরদিকে তখন রুশ-চিনাপন্থী বন্ধুরা ব্যস্ত ছিল বিশ্বরাজনীতিতে মাও-এর অবস্থান কি, রাশিয়া কি বলছে এবং ক্ষুদ্রতর হবার প্রতিযোগিতায়। অবস্থা অনুকূলে এলে ঊনসত্তরে এই বন্ধুরা তো এলো-ই, খোদ এনএসএফ-এর একাংশও এলো।
সময়! বুক চিতিয়ে ছাত্রলীগ এগিয়ে গেছে, রক্তগঙ্গা বয়ে গেছে, অবশেষে অনেকেই পদ্মাসনে বসেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে আশির দশকের ছাত্ররাজনীতি নিয়ে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। নিষ্ফলা মাঠের কৃষক বইতে। সামরিক সরকারের ছত্রছায়ায় অপরাপর ছাত্রসংগঠন যখন অস্ত্রের মুখে, পেশিশক্তির জোরে এগিয়ে যায় এবং ছাত্রলীগকে দাবায়ে রাখে, তখন ছাত্রলীগও বাধ্য হয় একই পথে হাঁটতে। এরপরে সমানে সমানে লড়াই শুরু। অনুমান করি, ঢাকা কলেজের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এই মন্তব্য করেছেন। তবে সারাদেশেই যে একই চিত্র সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
দু’হাজার নয় সাল থেকে ছাত্রলীগের বেশ বদনাম, পত্রিকা-টিভি সর্বত্র। অনেকের ঘুম হারাম ছাত্রলীগকে বদনাম দিতেই হবে! কারণ, তাঁরা জানে ছাত্রলীগ থাকলে শত সংকটেও রাজনৈতিক অপশক্তিকে রুখবেই। তাই দুই একটা সত্যের সঙ্গে হাজারটা মিথ্যার স্যালাইন বানিয়ে জনতাকে গিলাও, ছাত্রলীগকে হটাও!
এক্ষেত্রে আমার কথা পরিষ্কার, অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে, পেশাতে যেমন এদেশের মানুষের চরিত্রের প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়, ছাত্রলীগ ভিন্নতর হবে, এমনটা ভাবা ভুল। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের কথার অনুরণন এখানেও থাকাটা স্বাভাবিক। ছাত্রলীগ নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একটি সুশৃঙ্খল ও প্রগতিশীল কর্মীবাহিনী এবং সংগঠন গড়ে তুলতে। এই চেষ্টা থাকাটাই ছাত্রলীগের সঙ্গে অন্যদের ফারাক বিবেচ্য।
মূল কথায় ফিরে আসি। দুই হাজার নয় সাল থেকে সারাদেশের সকল ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কিছু সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করতেই হবে। জামাত-শিবির-হিজবুত-জঙ্গি উচ্ছেদ করতে গিয়ে অনেক রক্তও দিতে হয়েছে ছাত্রলীগকে। আজকে যে প্রকাশ্যে সকল ক্যাম্পাস উগ্রবাদমুক্ত এর কৃতিত্ব বাংলাদেশ ছাত্রলীগের, ছাত্রলীগে ধারাবাহিক সাহসের। এই সাহস, এই ত্যাগ ছাত্রলীগের জন্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
এখন আবার উগ্রপন্থীদের, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের অপশক্তির বাড়-বাড়ন্ত দেখা দিয়েছে। অন্যরা কী করবে, এই আশায় বসে নাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ প্রতিবাদ-প্রতিরোধ শুরু করেছে। ছাত্রলীগের এই সাহসী অবস্থানের তারিফ করি।
বাংলা ও বাঙালির বাতিঘর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে ছাত্রলীগ অঙ্গীকারাবদ্ধ। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বদলা নেওয়া ছাত্রলীগের কর্তব্য। এই কর্তব্য পালনে ছাত্রলীগ এগিয়ে যাবেই যাবে। লেখকের কলম সাক্ষ্য দেয় জয় হবেই। জয় জয় ছাত্রলীগ।