এইউবি’র গৌরবের রজতজয়ন্তী এবং কিছু কথা
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, প্রাইভেট সেক্টরে উচ্চ শিক্ষা সেবায় নব দিগন্ত সৃষ্টিকারী বিশ্ববিদ্যালয়টি দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে ২০২১ সালের ৪ জানুয়ারি ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অর্থাৎ রজতজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রজতজয়ন্তী উদযাপন খুবই গর্বের তথা আত্মস্লাগার বিষয়।
কেননা, এটা যে কোনো মানদন্ডের বিচারে উচ্চশিক্ষা বিস্তারে কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ বছরের ভূমিকা খুবই গৌরবোজ্জল দিক।
১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশাল মহীরূহ রুপ লাভ করেছে। বর্তমানে ১৩টি বিভাগ নিয়ে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা বিস্তারে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এর রয়েছে বিশেষ কিছু বিশেষত্ব ও গুরুত্ব- ঢাকার অদূরে আশুলিয়া সুবিশাল স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্বল্প খরচে শিক্ষা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী দ্বারা পরিচালিত মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম।
রজতজয়ন্তী তথা ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবার মাঝেই আনন্দের ঢেউ বইছে। যদিও বিশ্বব্যাপী করোনামহামারীর প্রাদুর্ভাবে ক্যাম্পাসে সরাসরি ক্লাশ-পরীক্ষা বন্ধ, সবকিছুই চলছে অনলাইনে, এরপরও রজতজয়ন্তী উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। এ উপলক্ষে অ্যালামনাই-মিলন মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্মৃতি চারণ, সেমিনার, সঙ্গীতানুষ্ঠান, শিক্ষা কর্মশালা, রচনা প্রতিযোগিতা, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, লোক সঙ্গীতানুষ্ঠান, গুণীজন সংবর্ধনা ও স্যুভেনীর প্রকাশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার।
তবে এর অনেক কিছুই নির্ভর করছে করোনা ভাইরাস মহামারী পরিস্থিতির উপর। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মন্ত্রী-মিনিস্টারদের উপস্থিতিতেই জমকালোভাবে উদযাপিত হবে, অন্যথা অনলাইনেই সীমিত আকারে উদযাপিত হবে এর রজতজয়ন্তী, এমনটিই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) এমিরেটাস প্রফেসর ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক। সেইসাথে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জিত সুনাম-সুখ্যাতি বিনষ্ট করতে এর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনায় লিপ্ত কুচক্রীমহল তথা ষড়যন্ত্রকারীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত বিশ্বব্যাপী এই করোনা-ভাইরাসের মহামারীর প্রাদুর্ভাবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাকার্যক্রমে বড় ধরনের হুচট খেলেও থমেনি এর অগ্রযাত্রা। বরং এই মহাসঙ্কটের মধ্যেও অনলাইন শিক্ষায় এর অবস্থান আরো শক্তিশালী হয়েছে। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে এর শক্ত অবস্থান সবমহলের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এর সবকিছুর মূলে রয়েছে- এর স্বপ্নদ্রস্টা প্রতিষ্ঠাতা যিনি আজীবন সমাজসেবক, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, শিক্ষক ও গবেষক, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন অর্থনীতিবিদ এমিরেটাস প্রফেসর ড. আবুল হাসান এম সাদেক।
তাঁর দুরদর্শী চিন্তা, সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থ, অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে দিনরাত কঠোর পরিশ্রমের ফসল আজকের এই বিশ্ববিদ্যালয়। যার অন্যতম উদ্দেশ্য আধুনিক ও নৈতিক শিক্ষার সমন্বয়ে শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষিত করে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে দেশ ও জাতি গঠনে অবদান রাখা।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাবান্ধব টিউশন ফি, আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষা পরিবেশ নজর কেড়েছে সারা দেশবাসীর। সেই সাথে নজর কেড়েছে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের শিক্ষার্থীদেরও। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুল সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। প্রতিবছর কয়েক হাজার শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করে কর্মজীবনে প্রবেশ করছে। প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত দুই লাখেরও বেশি মানবসম্পদ দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সেক্টরে ভাল অবস্থান করে নিয়েছেন। এটা এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের খুবই আত্মস্লাগার বিষয়।
প্রসঙ্গত, রজতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে স্প্রিং সেমিস্টারে শতভাগ টিউশন ফি ছাড় দিয়ে ভর্তি নেয়া হচ্ছে। এটা নতুন শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বড় ধরনের সুযোগ।
ঢাকার অদূরে আশুলিয়াস্থ বঙ্গবন্ধু রোডে ১০ একরেরও বেশি জমির উপর গড়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির সুবিশাল স্থায়ী ক্যাম্পাস। নিজস্ব ক্যাম্পাসে এর রজতজয়ন্তী উদযাপন হতে যাচ্ছে- এতে ছাত্র-ছাত্রীরাও আনন্দে উচ্ছ্বসিত। আধুনিক নির্মাণ শৈলীতে গড়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন। এর মেগা পরিকল্পনা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে তা সকলেরই দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হবে। ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি অভ্যাগতরা ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসের সার্বিক অবস্থা অবলোকন করে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
সবদিক বিবেচনায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এমন এক ব্যতিক্রমধর্মী ইউনিভার্সিটি যেখানে আধুনিক ও নৈতিক শিক্ষার সমন্বয়ে শিক্ষার্থীকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। এখানে ধনী-গরীব তথা গ্রামীন জনগোষ্ঠীসহ সব শ্রেণী শিক্ষার্থীর শিক্ষা গ্রহণের এক অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করেছেন কর্তৃপক্ষ। মেধাবী গরীব শিক্ষার্থীদের জন্য সম্পূর্ণ ফ্রি শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ দিয়ে সমাজকে আলোকিত করছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।
কেননা, বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্দেশ্য- নৈতিকতা ও মানবতার সমন্বয়ে এমন শিক্ষা প্রদান করা, যা জাতির পরিচয়ের বাহক কৃষ্টি, সভ্যতা ও আদর্শের পরিপূরক। ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এক মাইল ফলক। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো উন্নতমানের শিক্ষার মাধ্যমে এমন মানব সম্পদ তৈরি করা, যারা পেশাগত দক্ষ ও নৈতিকতায় উন্নত এবং দেহমনে সুস্থ হবে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়টির অনন্য এই জন্য যে এখানে বাংলা বিভাগসহ কলা অনুষদের ৪টি সাবজেক্ট এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগসহ সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ৬টি সহ মোট ১৩টি বিষয়ে পাঠদান করা হয়। অন্যান্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেখানে মার্কেট বিবেচনায় সাবজেক্ট/বিভাগ খুলছে সেখানে এইউবি কর্তৃপক্ষ দেশ-জাতির স্বার্থের কথা বিবেচনায় এসব বিভাগে পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন, যা সমাজে ইতিবাচক ফল বয়ে আনছে।
শুধু তাই নয়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। মনোরম নিরিবিলি পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত বিশাল ক্যাম্পাসে রয়েছে শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মেধা-মনন ও শারীরিক বিকাশে খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক চর্চা ও ডিবেটিংসহ বিভিন্ন কো-কারিকুলাম কার্যক্রমে অংশ নেয়ার অফুরন্ত সুযোগ। আধুনিক জ্ঞানচর্চার জন্য এখানে রয়েছে কয়েক লক্ষাধিক বইয়ের সমাহার সমৃদ্ধ লাইব্রেরী ও ল্যাবরেটরী।
যেখানে বিশ্বের নামকরা লেখকদের বই, রেপোটেড জার্নাল ও গবেষণা গ্রন্থ রয়েছে। এছাড়াও বিশ্বের নামকরা ই-লাইব্রেরীগুলোর সাথেও রয়েছে এর কানেকশন, যেখানে কয়েক মিলিয়ন বই-জার্নালের সুবিধা। এখানে একটি সমৃদ্ধ গবেষণা ইনস্টিটিউট রয়েছে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উদ্ভাবনী গবেষণা কর্মের মাধ্যমে জাতির উন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি ভবিষ্যতে বিশ্বের নামকরা গবেষণা ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। একথা স্পষ্ট যে, বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে স্বপ্নের আলোকিত বাংলাদেশ বিনির্মাণে এইউবি এগিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির রজতজয়ন্তী পালনে এই শুভলগ্নে এর নানা কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। কেননা, প্রায় দুই বছর থেকে খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্বপ্নদ্রস্টা এমিরেটাস প্রফেসর ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক স্যারের নানা পরিকল্পনা এবং বিশ্ববিদ্যালয়টিকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপন্ন ও নানা কার্যক্রম। একজন মানুষ কতটা মহান হলে নিজের সারাজীবন বিলিয়ে দিতে পারেন শিক্ষা ও মানবসেবায়।
বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদ তথা ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. জাফর সাদেকও আপদমস্তক একজন সনামধন্য গবেষক ও শিক্ষাবিদ। যিনি বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা বিস্তারে সর্বদা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরজন্য রয়েছে তাঁর অনেক ত্যাগ ও তিতীক্ষা। ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যতম মিসেস সালেহা সাদেকের কথা না বললেই নয়, যিনি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টির উন্নয়নে নিরবে-নিবৃত্তে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যান্য সদস্যদেরও অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।
সেইসাথে, যেসকল শিক্ষকমন্ডলী এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ কুচক্রীমহলের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় নিজেদের নিরলস কঠোর শ্রম দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রমকে এগিয়ে নিচ্ছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
সবশেষে, বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যায়ে নিয়ে আসতে যারাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষাভাবে ভূমিকা রেখেছেন, যাদের নিরলস পরিশ্রমে বিশ্বব্যাপী জ্ঞানের আলো ছড়ানোর এই সুন্দর বাগান তৈরি হয়েছে তাদের সকলের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। মহান স্রষ্টা এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে পর্যায়ক্রমে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করুন। আল্লাহ হাফেজ
লেখক: বিভাগীয় প্রধান, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
(ই-মেইল: drsarderanis77@gmail.com)