হৃদয়ের টানে বারবার ফিরে আসা
দফায় দফায় ছুটি। আঙুল গোনে খুব সহজেই বলা যাবে আটমাসের অধিক সময় দেশের সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। ঠিক তেমনিভাবে রাজধানীর তিতুমীর কলেজও বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের কলরব শূণ্যতায় প্রাণ হারিয়ে খাঁ খাঁ করছে গোটা ক্যাম্পাস। ক্লাস, পরীক্ষা, প্রশাসনিক কার্যক্রম, শিক্ষার্থীদের আড্ডার মুখরতার সেসব দৃশ্য চোখে মেলানো ভার।
টালমাটাল করোনাতেও প্রিয় ক্যাম্পাসকে ভেবে শিক্ষার্থীরা বারবার ছুটে আসছে। কলেজটির প্রধান ফটক থেকে শুরু করে ছাত্র সংসদ, শহীদ বরকত মিলনায়তন, নতুন ভবনের বারান্দা, ফুটওভার ব্রিজে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা প্রিয় মানুষটার মুখ চেয়ে বসে থাকা, বিজ্ঞান ভবনে ঢুকতেই থমথমে পরিবেশ, সাতসকালে সোনার বাংলা গেয়ে ক্লাসে প্রবেশ করা- সব যেনো এখন ভাসা ভাসা স্মৃতি।
সুসময়ে মরিচা পড়েছে! তাতে কি? তবুও ক্যাম্পাসের টানে প্রায়শই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি চোখে মেলে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পড়ুয়া শুভ্রা চৌধুরী বলেন, বর্ষা শেষ হয়ে এখন শীতের অপেক্ষা। কুয়াশার চাঁদরে ঢেকে যাবে প্রিয় ক্যাম্পাস। আমরা আসবো না? হুট করেই তাই চলে আসা। মাঝখানের সেই রাস্তা, দুপাশের গাছ, কলেজের মাঠ আর কংক্রিটের বিল্ডিং, সবই ঠিকঠাক। তবুও কী যেন নেই! আসলে নেই সেই হই-হুল্লোড় আর খাতা কলমের ব্যস্ততা। আশা করি এই খারাপ দিন কেটে যাবে শীঘ্রই। করোনার কুয়াশা কেটে যাবে। আমরা আবারও ক্যাম্পাসে ফিরবো, দল বেঁধে।
ক্যাম্পাসের সংগঠনগুলোর সরব উপস্থিতি চোখে মেলে অনলাইনে। সংগঠনগুলোর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অফিসিয়াল পেজ-গ্রুপ থেকেই নিয়মিত গানে সুর তোলা, কুইজ প্রতিযোগিতা, নাট্যকর্মশালা, অনলাইন টকশো সবই যেনো হচ্ছে। ক্যাম্পাসের জলাপাই গাছে থোকা থোকা জলপাই পাড়তে কত শিক্ষার্থীরাই ঢু দিচ্ছে কলেজে। অনেকে আচার বানিয়ে তা সংগ্রহ করে রাখছে গ্রামে থাকা বন্ধুটার জন্য।
প্রত্যহ ক্যাম্পাসের পরিচিত সুর ছাত্রলীগে ঝাঁঝালো স্লোগান। সেসব বন্ধ থাকলেও ক্যাম্পাসের সক্রিয় এ রাজনৈতিক দলটি নানা সেবামূখী কাজে সহযোগিতা করছে কলেজের শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদেরকে। গোটা ক্যাম্পাসের প্রতিনিধিত্ব করা একমাত্র ফেসবুক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তিতুমীরিয়ান গ্রুপেও নিয়ম করে আয়োজন হচ্ছে ফটো কনটেস্ট, লেখালেখিসহ ক্যাম্পাস স্মৃতিচারণের নানা আয়োজন।
টানা বন্ধের ভেতরে একটুখানি ক্যাম্পাসে আসলে যেনো স্বস্তি খুঁজে পায় তরুণপ্রাণ শিক্ষার্থীরা। তবে ক্যাম্পাসটির চলমান শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছাড়াও সাবেক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। সাত বছর পর ক্যাম্পাসে পা রাখা শামিম চৌধুরী বিশাল বলেন, যেখানেই যেই অবস্থানে থাকি না কেনো তিতুমীরের ক্যাম্পাস আমায় সবসময় টানে। দীর্ঘ সাত বছর বছর পর সেদিন ক্যাম্পাস থেকে ঘুরে এলাম। হুদয়ের টানে ফিরে আসি বার বার। আর আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি আপন আলয়ে ফিরে এসেছি। সেই শহীদ মিনার, চিরচেনা ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট, মিলনায়তন সব যেনো আমাকেও বুকে টেনে নিলো।
করোনার লম্বা ছুটিতে ক্যাম্পাসের নির্মানাধীন দশতলা একাডেমিক ভবন দু’টি এবং ছেলে-মেয়েদের জন্য হোষ্টেলের নির্মাণ কাজও অনেকদূর এগিয়ে গেছে। নির্মাণশ্রমিকরা আশা নিয়ে বলেন, নতুন বছরের শুরুতেই আশা করি ভবনগুলো ব্যবহার উপযোগী হয়ে উঠবে।
ক্যাম্পাসের দীর্ঘ বন্ধের সময় নিয়ে তিতুমীর কলেজ অধ্যক্ষ মো. আশরাফ হোসেন ভারাক্রান্ত হয়ে বলেন, এতোটা সময় কখনো শিক্ষার্থীদের চোখে না দেখে থাকতে পারিনি। মাঝে মাঝে মন খারাপ হয় কলেজ এসে। আগে রুমে একটু পরপরই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আসতো। নানা প্রয়োজনে আলাপ হতো। এখন মাঝেমাঝে কাজের প্রয়োজনে যা আসি তাতেও একলা বসে থাকতে হয়। এভাবে আর কতদিন! তবুও এই দূঃসময়ে আমাদের সকলকে ঘরবন্ধী থাকতে হবে। প্রয়োজনে বাইরে বের হলে যেনো আমার প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীরা সকলেই মাস্ক ব্যবহার করে সেটাই কাম্য।
লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী