১২ নভেম্বর ২০২০, ১৯:১৯

এইচএসসি-২০: মান উন্নয়ন পরীক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তায় কেন?

প্রতীকী

গত বছর এডমিশন প্রিপারেশন একটু কম থাকায় স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম তুলি নাই। শুধুমাত্র ২০২০ সালে আরও ভাল করে প্রিপারেশন নিয়ে ভর্তি পরিক্ষা দেব বলে। ২০২০ সালের মার্কশীট না পেলে ঢাবি, বুয়েট, রাবি, চবি, কুয়েট, রুয়েট- এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফরমই উঠাতে পারব না।

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, মান উন্নয়ন পরীক্ষার্থীদেরও একইভাবে জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের উপর মূল্যায়ন করা হবে। যেসব মান উন্নয়ন পরীক্ষার্থীদের জেএসসি ও এসএসসিতে ভাল ফলাফল ছিল, তারা হয়ত মান উন্নয়ন হয়ে যাবে এবং ২০২০ সালের মার্কশীট পেয়ে যাবে।

কিন্তু, যেসব মান উন্নয়ন পরীক্ষার্থী এসএসসি বা জেএসসিতে খারাপ ফল করেছে কিন্তু এইচএসসি ২০১৯-এ ভাল ফলাফল করেছে অর্থাৎ জিপিএ-৫ এর কাছাকাছি ফলাফল করেছিল, তাদের জেএসসি ও এসএসসি সমন্বয় করে যদি ২০১৯ সালের এইচএসসির চেয়েও জিপিএ কমে যায় তাদের ফলাফল কীভাবে দেওয়া হবে? শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই ব্যাপারে এখনো স্পষ্ট করে কিছু বলে নাই।

২০১৯ সালের এইচএসসির ফলাফলের চেয়ে কমে গেলে তো আর মান উন্নয়ন হবে না। সেক্ষেত্রে কি তাদের ২০১৯ সালের মার্কশীটই দেওয়া হবে? যদি ২০২০ সালের মার্কশীট না দেওয়া হয়, তাহলে তো আমাদের স্বপ্নের অপমৃত্যু হবে। আমরা আমাদের কাঙ্খিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারব না।

ঢাবি, বুয়েট, রাবি, চবি, কুয়েট, রুয়েট- দেশের এই টপ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেকেন্ড টাইম বন্ধ থাকায় ২০২০ সালের মার্কশীট না পেলে ভর্তি ফরম উঠানো যাবে না। শুধুমাত্র ২০২০ সালের মার্কশীটের জন্যই এইচএসসি-২০১৯ এ যথেষ্ট ভাল ফলাফল করার পরেও অনেক শিক্ষার্থী মান উন্নয়ন পরিক্ষার নিবন্ধন করেছিল। যাতে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারে।

যদি ৫ বছর আগের জেএসসিতে জিপিএ-৫ থাকার কারণে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ দেওয়া সম্ভব হয়, তাহলে যারা ২০১৯ সালে একবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে এবং তারপর থেকে আরো এক বছরের অধীক সময় ধরে একই পড়া পড়তেছে, তাদেরও তো মান উন্নয়ন করে ২০২০ সালের মার্কশীট দেওয়া উচিত।

তাছাড়া প্রত্যেক বছর প্রায় তিন লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফেল করে থাকে। তাদের কেও গণহারে পাস করিয়ে দেওয়া হইতেছে এবং এমন কিছু পরিক্ষার্থী থাকে যারা জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পায় এবং এইচএসসিতে গিয়ে দুই-এক বিষয়ে ফেল করে। তাদেরকেও জিপিএ-৫ দেওয়া হলে যারা ২০১৯-এ একবার এইচএসসি দিয়েছে তাদের মান উন্নয়ন করে দেওয়া কি উচিৎ নয়?

এই বছরে প্রায় ষোল হাজার মান উন্নয়ন পরিক্ষার্থী ছিল। এর মধ্যে হয়ত অর্ধেক সংখ্যক পরীক্ষার্থীদের জেএসসি এবং এসএসসি ফলাফল দিয়ে মান উন্নয়ন হয়ে যাবে। তাহলে বাকী অর্ধেক পরীক্ষার্থী যাদের জেএসসি এবং এসএসসি এর ফলাফল দিয়ে মান উন্নয়ন হবে না তাদের কি হবে?

তাদের মধ্যে যারা গত বছর স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরম তুলে নাই এই বছর আরো ভালভাবে প্রিপারেশন নিয়ে পরীক্ষা দেবে বলে এই শিক্ষার্থীগুলোর স্বপ্ন কি অধরাই রয়ে যাবে আজীবন?

দশ বছর ধরে বুকের মধ্যে লালিত স্বপ্ন পুরনের ন্যূনতম সুযোগটিও কি এদের দেওয়া হবেনা? আজীবন মনের মধ্যে আক্ষেপ জমে থাকবে এই ভেবে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ ভর্তি পরিক্ষা পর্যন্ত দিতে পারলাম না! এর জন্য কারা দায়ি থাকবে? প্রাকৃতিক মহামারী কোভিড-১৯ নাকি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেওয়া সিদ্ধান্ত?

শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা বাতিল করে বিকল্প উপায়ে মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাহলে কর্তৃপক্ষ চাইলেই কি এই কয়েক হাজার পরীক্ষার্থীদের জন্য এমন কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না যাতে করে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়? শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেওয়া সিদ্ধান্তই কি এই শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পুরনের অন্তরায় হবে?

মান উন্নয়ন ক্যান্ডিডেটদের পরীক্ষা না নিয়েই জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের কারণ দেখিয়ে ২০২০ সালের মার্কশীট না দেওয়াটা ফেল করিয়ে দেওয়ার শামিল। যা এইচএসসি ২০২০-এর ঘোষিত অটোপাসের পরিপন্থী। তাই মান উন্নয়ন পরীক্ষার্থীদের যাদের জেএসসি ও এসএসসির সমন্বয় করে এইচএসসি-২০১৯ এর ফলাফলের চেয়েও কম হয়ে হচ্ছে, তাদের কে এইচএসসি-২০১৯ এ যে ফলাফল করেছে তার পরবর্তী ধাপের ফলাফল করিয়ে হলেও ২০২০ সালের মার্কশীট দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। যাতে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরিক্ষা দিতে পারে।

যাদের ৪.৭৫ ছিল তাদের ৪.৮৩,
যাদের ৪.৮৩ ছিল তাদের ৪.৯২,
যাদের ৪.৯২ ছিল তাদের ৫.০০।

যদি ফলাফল বৃদ্ধি করিয়ে দেওয়া সম্ভব না হয়, তবে সেই ফলাফলই বলবৎ রেখে ২০২০ সালের মার্কশীট দেওয়ার দাবি জানাই। এতে করে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। ২০১৯ সালের মার্কশীট দিলে কয়েক শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আশাকরি, কর্তৃপক্ষ এমন কোন সিদ্ধান্ত নেবে না যেটা কোন শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত বিপর্যের কারণ হয়।

এইসব মান উন্নয়ন পরিক্ষার্থীরা বুঝে উঠতে পারতেছে না যে তাদের ২০২০ সালের মার্কশীট দেওয়া হবে নাকি ২০১৯ সালের? তারা এতদিন ধরে স্বপ্নের যে ভার্সিটির প্রিপারেশন নিয়ে আসতেছিল সেটাই কি চালিয়ে যাবে নাকি সেকেন্ড টাইমার হিসেবে নতুন করে অন্য ভার্সিটির প্রিপারেশন শুরু করবে? এই সব সংশয়ের শেষ কখন?

লেখক: শাহদৌলা সরকারি কলেজের এইচএসসি-২০২০ এর মান উন্নয়ন পরীক্ষার্থী।