মহানবী (সা.)-এর আগমনের সুসংবাদ

  © ফাইল ফটো

আল্লাহ তা’লা দুনিয়ার জমিনে মানুষ জাতিকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর গোলামি করার জন্য। প্রেরণ করেছিলেন এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী ও রাসুল। তাঁর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব ও সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (সা.)। সকল নবী-রাসুলের উপর অবতীর্ণ করেছিলেন একশত চারখানা কিতাব। যে কিতাবগুলো মানব জাতির জীবন বিধান।

এমন কোন কিতাব নেই, যে কিতাবে পরবর্তী কোন নবী বা রাসুলের জীবন বৃত্তান্ত আলোচনা করা হয়েছে। একমাত্র আলোচনা করা হয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর মহামূল্যবান জীবন বৃত্তান্ত ও চরিত্রের কথা। কোরআনেও রয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর উত্তম চরিত্র, জন্মকালীন তথ্যাবলি ও বংশ মর্যাদার বিবরণ। তিনিই হচ্ছেন একমাত্র বিশ্ববাসীর জন্য ‘রহমত’।

সাইয়্যিদুল মুরছালীন, ইমামুল মুরছালিন, ছাইয়্যিদুল কাওনাইনি ওয়াছ ছাক্বালাইন- এ সকল উপাধিতে নবী মুহম্মদ (সা.)-কে ভূষিত করা হয়েছে। সে নবী ও রাসুল (সা.) সম্পর্কে পূর্ববর্তী নবী ও রাসুলদের সাথে এবং তাদের উপর নাযিলকৃত কিতাবাদীতে আলোচনা করে মুহাম্মাদ (সা.)-এর সুমহান মর্যাদাকে আল্লাহ তা’লা সর্বোচ্চ স্থানেই বহাল রেখেছেন।

রূহ জগতে আল্লাহ সকল নবি ও রাসুলদেরকে একত্রিত করে রাসুল (সা.)-কে পৃথিবীতে প্রেরণের সুসংবাদ প্রদান করেছেন।

ইরশাদ হচ্ছে- স্মরণ করুন! যখন আল্লাহ নবীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন এই বলে- আমি তোমাদেরকে যে কিতাব ও প্রজ্ঞা দান করেছি তা গ্রহণ কর। অতঃপর তোমাদের কাছে যা আছে তার সমর্থক একজন রাসুল আসবেন। তখন অবশ্যই তোমরা তার প্রতি ঈমান আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে।

তিনি বলেছিলেন, তোমরা কি স্বীকার করলে এবং এ ব্যাপারে আমার চুক্তি গ্রহণ করলে? তারা বলেছিলেন, স্বীকার করলাম। তিনি বলেছিলেন, তাহলে তোমরা সাক্ষী থেকো, আর আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী থাকলাম। (সূরা আল ইমরান- ৮১)।

তাফসীরে তাবরানীর মধ্যে এসেছে- আলী (রা.) ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহ সব রাসুলগণের কাছ থেকে নবী মুহম্মদ (সা.) সম্পর্কে অঙ্গীকার নেন যে, তারা স্বয়ং যদি তার আমলে জীবিত থাকেন, তবে যেন তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেন এবং তাকে সাহায্য করেন। স্বীয় উম্মতকেও যেন এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়ে যান। স্বয়ং আল্লাহ রুহ জগতে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনের সু-সংবাদ দিয়েছিলেন। তাও আবার সমস্ত নবী-রাসুলদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়ে, শেষ নবীর সাক্ষাত পেলে উনার প্রতি ঈমান এবং ইসলাম প্রচারে সাহায্য করতে।

ইরশাদ হচ্ছে- স্মরণ কর যখন মরিয়ম তনয় ঈসা (আ.) বললেন হে বনী ইসরাইল আমি তোমাদের কাছে প্রেরিত আল্লাহর রাসুল। আমার পূর্ববর্তী তাওরাত কিতাবের আমি সত্যায়নকারী। একজন রাসুলের সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আগমন করবেন, তাঁর নাম আহমদ (সা.) (সূরা সফ- ৬)

তাওরাত ও ইঞ্জিল কিতাবে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পরিচিতি এভাবে বিবৃত হয়েছে (অর্থ) তিনি (মুহাম্মদ সা.) কারো কাছে লেখাপড়া না শিখেও মহাজ্ঞানের অধিকারী হবেন। এটাই নবুয়তের প্রধান সাক্ষ্য এবং তাঁর অনুসারীরা অর্জন করবেন এক মহান সফলতা।

উক্ত বিবৃতির সাথে পবিত্র কালামের একটি আয়াতের সামঞ্জস্য রয়েছে; ইরশাদ হচ্ছে- যারা এই রাসুলের অনুসরণ করে চলে যা তারা তাদের কিতাবে তাওরাত ও ইঞ্জিলে এ রাসুল (সা.) সম্পর্কে লিখিত দেখতে পাচ্ছে। তিনি ভাল কাজের আদেশ দেবেন এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবেন। (সূরা আ’রাফ- ১৫৭)

তাওরাত কিতাবে রাসুল (সা.) সম্পর্কে আরও বিবৃত হয়েছে- বনী ইসমাইলের বংশ থেকে একজন নবি প্রেরিত হবেন, আল্লাহ বাণী তাঁর উপর নিক্ষেপ করা হবে, আল্লাহ যা কিছু বলবেন প্রচার করার জন্য, তা সবই তাঁর উম্মতের নিকট প্রচার করবেন নিজের পক্ষ থেকে কিছু বলবেন না।

উপরোক্ত বিবৃতি নিয়ে কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে- তিনি (নবী মুহাম্মদ) নিজের প্রবৃত্তি হতে কিছুই বলবে না। যা কিছুই বলেন, আল্লাহ পাকের পক্ষ হতে ওহী প্রাপ্ত হয়। যা তাঁর প্রতি ওহী করা হয়ে থাকে। (সুরা নজম- ৩,৪)

কা’বে আহবার বলেন, পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব সমূহে রাসুল (সা.) সম্পর্কে বলা হয়েছে- রাসুল (সা.) জন্মগ্রহণ করবেন মক্কা নগরীতে। হিজরত করবেন মদিনা শরীফে এবং তাঁর রাজত্ব হবে সিরিয়া পর্যন্ত।

রাসুল (সা.)-এর পূর্ব পুরুষদের ভবিষ্যৎ বাণী: ইমাম তিবরানী বলেন, নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর একজন সম্মানিত পূর্ব পুরুষ ছিলেন সা’দ বিন আদনান। তখনকার যুগে একজন নবী ছিলেন যার নাম ‘আরমিয়া ইবনে হালকিয়া’। আল্লাহ ঐ নবীকে ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন, সা’দ বিন আদনানের বংশ থেকে জন্মগ্রহণ করবেন খাতামুন নাবিয়্যিন রাসুল (সা.)।

আল্লাহ আরও বললেন যে, বাদশা ‘বখতে নছর’ যেন তার বাহনে করে সা’দ বিন আদনানকে সিরিয়ায় নিয়ে যায়। বাদশা ‘বখতে নছর’ আদেশ প্রাপ্ত হয়ে তাই করেন। সা’দ বিন আদনান সেখানে গিয়ে বসবাস আরম্ভ করেন। (সিরাতে মোস্তাফা)।

নেযার নামে রাসুল (সা.)-এর আরেকজন পূর্ব পুরুষ। তার জন্মের পর তার ললাট ছিল নূরে মুহাম্মদিতে উদ্ভাসিত। তার পিতা শুকরিয়া স্বরূপ বিরাট ভোজনের আয়োজন করেন। উপস্থিত অতিথিগণ শিশুকে দেখে মন্তব্য করেন যে, এ বংশ থেকে আগমন করবেন রাসুল (সা.)।

কা’ব বিন লুয়াইর ভবিষ্যৎ বাণী: তিনি রাসুল (সা.) সম্মানিত পূর্ব পুরুষ। যিনি শুক্রবার জুমআর দিন সকল লোকদেরকে একত্রিত করার রীতি চালু করেন। প্রত্যেক শুক্রবারে সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে তিনি ভাষণ দিতেন। একদা তিনি ভাষণে বললেন যে, আমার বংশেই আগমন করবেন সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (সা.)। যদি তোমরা তার সমকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকো; তাহলে অবশ্যই তোমরা তাঁর উপর ঈমান আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে।

আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদীস যা সিরাতে মোস্তফা কিতাবে ‘ইদ্রীছ কান্দুলুভী’ উল্লেখ করেছেন। এক ইহুদী ব্যক্তি সে তাওরাত ও ইঞ্জিল কিতাবে পারদর্শী ছিল। সে ব্যবসার জন্য মক্কা শরীফে চলে আসে এবং এখানেই বসবাস শুরু করেন। যে রাতে রাসুল (সা.) মা আমেনার ঘরে আগমন করেন। সে রাত পোহাতেই ওই ইহুদী ব্যক্তি কুরাইশদের একটি মজলিসে গিয়ে জিজ্ঞেস করে যে, গত রাতে কুরাইশ বংশে কি কোন ছেলে সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছে।

তারা জবাব দিল আমরা জানিনা। লোকটি বললো একটু অনুসন্ধান করে দেখুন। লোকটির পেরেশানি দেখে তারা অনুসন্ধানে বেরিয়ে পড়লো। সংবাদ আসলো যে, সত্যিই গতরাতে খাজা আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিবের ঘরে এক নবজাতকের আগমন ঘটেছে। সে বললো আমাকে সেখানে নিয়ে চলো। তারা ওই ইহুদীকে নিয়ে গেল, সে শিশু মুহাম্মদ (সা.)-এর কাঁধের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বেহুশ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।

চেতনা ফিরে আসার পর তাকে এরকম পরিস্থিতির কারণ জানতে চাইলে সে বলে যে আমি এ নবজাতকের কাঁধে ‘মহরে নবুয়ত’ দেখে বুঝতে পারলাম। আমাদের ইহুদী বংশে আর কোন দিন নবী আসবেনা। আর এ নবজাতকই হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী। আমি এ বেদনা সহ্য করতে না পারায় বেহুশ হয়ে যাই।

আল্লাহ তাঁর হাবিব (সা.)-এর আগমনের মাসের উছিলায় আমাদের কবুল করুন। আমাদের সবার অন্তরে আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর মোহাব্বত দান এবং তাঁর আদর্শ অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। (আমিন)।

লেখক: প্রাবন্ধিক


সর্বশেষ সংবাদ