এক ছেলের প্রেমিকা তাকে ‘মাফ করে’ দিতে বলেছে!

আমিনুল ইসলাম
আমিনুল ইসলাম  © ফাইল ফটো

ছেলেটা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাশ করে একটা স্কুলে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে পড়াচ্ছে। এই ছেলের মেসেজটা আমার ‘আদার বক্সে’ এসছে। আমাকে অনেকেই মেসেজ পাঠান। উত্তর দেয়া হয়ত সেই অর্থে সম্ভব হয় না। তবে আমি চেষ্টা করি সবার মেসেজগুলো পড়তে।

এই ছেলে যা লিখেছে, মূল কথা দাঁড়ায়- বাংলাদেশের অনেক স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায় খণ্ডকালীন শিক্ষক আছে। কিন্তু এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা তাদের শিক্ষক হিসেবে দেখে না। দেখে খণ্ডকালীন হিসেবে!

শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দেয়ার সময় নাকি সবাই জিজ্ঞেস করে- এমপিও ভুক্ত কিনা? এছাড়া করোনা আসার পর এই খণ্ডকালীন অনেক শিক্ষক নাকি বেতন পাচ্ছে না। অর্থাৎ নিজেদের কাজের জায়গাতেই এরা এক ধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।

ছেলেটা এই মুহূর্তে সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করছে। কিন্তু শিক্ষকতা সে পছন্দ করে। চাকরি স্থায়ী না হওয়ার কারণে তার প্রিয় মানুষটা, মানে তার প্রেমিকা নাকি তাকে বলেছে- আমার পরিবার মানবে না। আমাকে মাফ করে দাও।

এইসব লিখে এই ছেলে আমাকে অনুরোধ করেছে। স্যার, আপনার লেখা লাখো মানুষ পড়ে। আপনি তো পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করেন। টেলিভিশনে কথা বলেন। আমার জন্য নয়, খণ্ডকালীন শিক্ষকদের বছরের পর বছর চাকরি স্থায়ী হয় না। আপনি এই নিয়ে যদি একটু লিখতেন।

আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি খণ্ডকালীন শিক্ষকদের নিয়ে না লিখে বরং অন্য বিষয় নিয়ে লিখবো। যে প্রেমিকা স্রেফ চাকরি স্থায়ী না হবার কারণে তোমাকে এখন ‘মাফ’ করে দিতে বলছে। সে তো তোমাকে ভালোবাসে না। তোমার চাকরি, প্রতিষ্ঠিত হওয়াই যদি মূল বিষয় হয়; তাহলে সে কি আদৌ তোমাকে ভালোবেসেছে? নাকি তোমার চাকরি, অর্থ, স্ট্যাটাস এইসবকে ভালোবেসেছে? ভালোবাসা কি এতোই সহজ?

এই যে সমাজে ডিভোর্সের হার অনেক বেড়ে গেছে। অনেক পরিবারেই আজকাল দেখা যাচ্ছে- অশান্তি! এর মূল কারণ কিন্তু এটাই। আজকাল ছেলেপেলেরা আর মানুষটাকে ভালোবাসে না। ভালোবাসে ভালো চাকরি, গাড়ি-বাড়ি এইসব বস্তুগত বিষয়কে!

অথচ ভালো তো বাসার কথা মানুষটা কীভাবে কথা বলে, তার হাঁটা-চলা, আচার-আচরণ, ভালো-খারাপ ইত্যাদি বিষয়কে! ধরে নাও তোমার চাকরিটা স্থায়ী হয়েছে। ধরে নাও তোমাদের বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর দেখা গেল কোন কারনে তোমার চাকরিটা আর নেই! কিংবা তোমার কোন সমস্যা দেখা দিয়েছে।

তখন? তখনও কি এই মেয়ে বলে বসবে- ‘মাফ করে দাও!’ ডিভোর্স তো সমাজে এই কারণেই বাড়ছে। সম্পর্কগুলোও আঁটকে গেছে এইসব বস্তুগত চাওয়া-পাওয়ায়। আজকাল আর কেউ মানুষকে ভালোবাসে না। ভালোবাসে চাকরি, গাড়ি-বাড়ি, স্ট্যাটাস এইসবকে।

আমার ভালোবাসার মানুষ যদি আমাকে এসে বলে- গ্রামে গিয়ে থাকতে হবে। আমি সেখানে গিয়েই থাকার চেষ্টা করবো। কারণ আমি তো মানুষটাকে ভালোবেসছি। এরপর না হয় দুজন মিলে জীবন যুদ্ধে জয়ী হবার চেষ্টা করবো। আমার ভালোবাসার মানুষটা যদি এসে বলে- ভাঙা ঘরে থাকতে হবে। আমি সেখানেই থাকবো। এরপর দুজনে মিলে চেষ্টা করবো যুদ্ধ করে জয়ী হবার।

হ্যাঁ, ভালোবাসা মানে তো মানুষটাকে ভালোবাসা। তার কথা ভালো লাগবে, তার সঙ্গ ভালো লাগবে। কখনো কখনো অনেক কিছু ভালো লাগবে না। ঝগড়া হবে। কিন্তু আবার মিল হয়ে যাবে। যে কিনা স্রেফ চাকরি স্থায়ী না হবার কারণে বলতে পারে ‘মাফ করে দাও!’ সে কোনদিনও তোমাকে ভালোবাসেনি। কখনোই না।

মেয়েটার তো বলা উচিত ছিল- কোন ব্যাপার না। চাকরি নিশ্চয়ই একটা না একটা সময় হবে। দুজনে মিলেই না হয় যুদ্ধটা শুরু করি। চাকরি, অর্থ, গাড়ি-বাড়ি, স্ট্যাটাস; এইসবের দরকার আছে। তবে সেটা কখনোই মানুষ, ভালোবাসা কিংবা সম্পর্কের ঊর্ধ্বে হতে পারে না। কখনোই না।


সর্বশেষ সংবাদ