এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়া কতটা শিক্ষার্থীবান্ধব?
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; যার ওপর একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অনেকাংশে নির্ভরশীল। একজন শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিক তথা এইচএসসি পরীক্ষার সিঁড়ি পার হয়েই সিদ্ধান্ত নেয় সে কোন পথে যাবে। সেটা হতে পারে মেডিকেল, প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ভর করে একজন শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে কি পারবেনা। তাছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে কলেজ ও বিষয় দেওয়া হয়। অর্থাৎ উচ্চ শিক্ষার সাথে এইচএসসি পরীক্ষার রয়েছে গভীর সম্পর্ক।
কিন্তু এ বছরের এপ্রিলে যে এইচএসসি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল তা করোনা মহামারির কারণে নেওয়া সম্ভব হয়নি। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনেক চেষ্টা করেছে। কেননা, এ বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ১৪ লাখ এবং এদের সাথে অভিভাবক, শিক্ষক ও নিরাপত্তা কর্মী রয়েছেন যারা পরীক্ষার সাথে সম্পৃক্ত। সব মিলিয়ে পরীক্ষাকে কেন্দ্র প্রায় ৩০ লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে মনে করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আর বর্তমান পরিস্থিতিতে এতো মানুষের নিয়মিত সমাগমে রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
অন্যদিকে, কবে নাগাদ দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব কমবে সে বিষয়ে রয়েছে শঙ্কা ফলে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাও অনিশ্চিত গন্তব্যে। এমতাবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষার্থীবান্ধব। বস্তুত, দীর্ঘ ছয় মাস স্থগিত থাকার পর অবশেষে একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসায় পরীক্ষার্থীরা অনেকটা ভারমুক্ত হয়েছে এবং তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবে এখন।
তবে এমন সিদ্ধান্তের নেতিবাচক দিকও রয়েছে এবং অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এমন সিদ্ধান্তে আশাহত হয়েছেন। কেননা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছেন জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল নির্ণয় করা হবে যা ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকাশিত হবে। কিন্তু এমন অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে যারা বিভিন্ন কারণে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারেনি কিন্তু পরবর্তীতে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এইচএসসিতে ঈর্ষণীয় ফলাফল অর্জন করেন। আর এ ধরনের শিক্ষার্থীরা মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে শত চেষ্টার পরেও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জন করতে পারবেনা। এমনকি তারা উচ্চশিক্ষা নিয়েও ভীষণ চিন্তিত।
অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানের স্বপ্ন ভঙ্গের দুশ্চিন্তা করছেন কেননা এইচএসসির ভালো ফলাফল পরবর্তিতে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণে সহায়ক হয়। পক্ষান্তরে, অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে যারা জেএসসি ও এসএসসিতে ভালো ফলাফল করলেও পরবর্তিতে খামখেয়ালির কারণে এইচএসসি পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল করে এমনকি অনেক সময় অকৃতকার্য হয়। অর্থাৎ মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের মেধা ও পরিশ্রম অনুপাতে ফলাফল দিতে পারবেনা বরং ফলাফল বৈষম্য দেখা দিবে এবং উচ্চশিক্ষার পথ কঠিন হবে। তাছাড়া এ পদ্ধতিতে মূল্যায়ন বিদেশে উচ্চশিক্ষায় বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করবে বলে শঙ্কা রয়েছে অনেকের মাঝে।
এমতাবস্থায় প্রকৃত মেধাবী ও পরিশ্রমী শিক্ষার্থীরা যাতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেতে জটিলতার মুখে না পড়ে সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ফলাফল তৈরিতে বিশেষ বিবেচনা করবে এমনটাই প্রত্যাশা। এছাড়া যেহেতু এ বছর পরীক্ষা না নেওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাবেনা সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ফলাফলের ওপর নির্ধারিত নম্বর বিবেচনা না করলেই মেধাবি শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে বলে মনে করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহল।
লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ
ই-মেইল: sajibprodhanbd@gmail.com