স্কুল যেন আগের মতো আর নেই
- শ্রাবণী বসু, লন্ডন থেকে
- প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:৩১ PM , আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:৩১ AM
স্কুলের ইউনিফর্ম পরা ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা সাত সকালে রাস্তা দিয়ে কিচিরমিচির করতে করতে যাচ্ছে। লন্ডনের রাস্তায় ছবিটা নতুন নয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের দাপটে গত ছ’মাসে হারিয়ে গিয়েছিল এই দৃশ্য। আজ সকালে নতুন করে ওদের রাস্তায় দেখতে পেয়ে ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। এ শহরে লকডাউনের তালা খুলে ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে স্কুল-কলেজগুলি। মনটা এই ভেবে নেচে উঠল যে ওরা আবার একসঙ্গে স্কুলে যাবে। ঠিক আগের মতোই।
তবে পুরোপুরি আগের মতো কি হবে আর? এটা যে নিউ নর্ম্যাল! সবই আছে। একটা উদ্বেগ রয়েছে সর্বক্ষণ। বাড়তি সতর্ক সকলে। মুখে মাস্ক। ছোট ছোট দলে ওরা হাঁটছে। হাসি-ঠাট্টা সবই চলছে। তবে যেন মাপা।
এখন স্কুলে ঢুকেই পড়ুয়াদের আগে হাত স্যানিটাইজ় করতে হয়। স্কুল শুরুর আগে যে অ্যাসেম্বলি বা প্রার্থনাসভা হত, তা আপাতত বাদ রাখা হয়েছে। যে সব স্কুলে দু’টি ক্লাসঘরের মাঝে সংকীর্ণ প্যাসেজ রয়েছে, সেখানে ভিড় এড়াতে ‘ওয়ান-ওয়ে’ নিয়ম চালু করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনও প্যাসেজ দিয়ে শুধু যাওয়া বা শুধু আসা যাবে।
খেলার মাঠে ভিড় এড়াতে বিভিন্ন ক্লাসের বিরতির সময় বদল করা হয়েছে। শৌচাগারে একসঙ্গে দু’জনের বেশি ঢোকা বারণ। স্কুলে পড়ুয়াদের যে গরম গরম খাবার দেওয়া হত, তা এখন বন্ধ। মিলছে প্যাকেট করা খাবার। তা-ও বাইরে নিয়ে গিয়ে দূরে বসে খেতে হবে। ছোঁয়াছুঁয়ি বাঁচিয়ে খেলা যায়, শুধুমাত্র এমন খেলায় উৎসাহ দিচ্ছে স্কুল। খুব প্রয়োজন ছাড়া ওরা যাতে একে-অপরের জিনিস ব্যবহার না-করে, সেই পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
আসলে স্কুলে বাচ্চাদের মধ্যে ‘শারীরিক দূরত্ববিধি’ বজায় রাখা সহজ নয়। একেবারে নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে বিষয়টির গুরুত্ব বোঝানোই মুশকিল। দু’মিটার দূরত্বের নিয়মবিধি ওদের পক্ষে মানা কি সম্ভব? ওরা তো হুড়োহুড়ি করবেই। তবে যারা একটু উঁচু ক্লাসে পড়ে, তারা খানিকটা বুঝবে। ইংল্যান্ডের স্কুলগুলোয় পড়ুয়াদের নিজের ক্লাসের বন্ধুদের মধ্যে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে মিশতে বলা হচ্ছে। এই দলগুলোকে বলা হচ্ছে ‘বাবল’ বা বুদবুদ।
স্কুলগুলোতে দূরত্ববিধি বজায় রাখতে এক এক জায়গায় এক এক নিয়ম চালু করা হয়েছে। ওয়েলস বা স্কটল্যান্ডের স্কুলে ২ মিটারের দূরত্ববিধির বালাই নেই। তবে স্কটল্যান্ডে হ্যান্ডশেক বা জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় এড়িয়ে চলতেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবার ওয়েলস বা ইংল্যান্ডে এই ধরনের আচরণবিধি নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই। লকডাউন চালু রয়েছে এমন এলাকায়, সাত বছর বা তার বেশি বয়সি পড়ুয়াদের ক্লাসের ভিতরে-বাইরে মাস্ক পরতেই বলা হচ্ছে।
তবে এত করেও করোনা সংক্রমণ রোখা যাচ্ছে কি? সংক্রমণ ছড়ানোয় ইতিমধ্যেই দু’টি স্কুল বন্ধের খবর মিলেছে। একটি সাফাকে। সেখানে পাঁচ জন কর্মী পজ়িটিভ হওয়ায় স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার স্ট্যাফোর্ডশায়ারের এক স্কুলে এক পড়ুয়ার শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ায়, স্কুলের আরও ১০০ পড়ুয়াকে নিভৃতবাসে পাঠানো হয়েছে। ইংল্যান্ডের অন্য তিনটি এবং ওয়েলসে অন্তত আটটি স্কুলে সংক্রমণ ছড়ানোর খবর মিলেছে। প্রশাসন অবশ্য স্কুলে সংক্রমণ ঠেকাতে সব রকমের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ব্রিটেনের মৃত্যুহার আগের তুলনায় কমলেও সংক্রমণ কিন্তু বেড়েছে। লকডাউনের রাশ আলগা হওয়ায় এখন কমবয়সিদের মধ্যেই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বেশি। বাড়ির বয়স্ক ও অসুস্থদের মধ্যে সংক্রমণ রুখতে ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক কমবয়সিদের দূরত্ববিধি বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছেন। [লেখাটি আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত]