এইচএসসি পরীক্ষা অবশ্যই হবে, তবে এখন নয়
এপ্রিল মাসেই প্রতিবছর এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এবছর করোনাকালীন দুঃসময়ের কারণে পরীক্ষা এপ্রিল মাসে নেওয়া সম্ভব হয়নি। দিনদিন করোনাভাইরাস এর প্রকোপ মাত্রাতিরিক্ত হারে বাড়ছে। বাংলাদেশ একটি জনবহুল পূর্ণ দেশ। সরকার কতৃক লকডাউন দেশের জনগণ ঠিকমত পালন করেনি।
কিন্তু তবুও খবর নিলে দেখা যাবে আমাদের মত কিছু সচেতন নাগরিকেরা বর্তমান পরিস্থিতিতেও পরিবার-পরিজন নিয়ে বাসায় অবস্থান করছে দীর্ঘ সময় জুড়ে। মাসের পর মাস অতিক্রম হয়ে গিয়েছে, এমতাবস্থায়ও পরিবারের কেউ অতি গুরত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়া ঘর থেকে বের হতে সংকোচ বোধ করছে, আর এই পরিস্থিতিতে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া কতটা যৌক্তিক?
এইচএসসি পরীক্ষা একটি বোর্ড পরীক্ষা, কোনো স্কুল বা কলেজের বার্ষিক পরীক্ষা নয়। এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেবে ১৩ লক্ষ শিক্ষার্থী। আগস্ট মাস ধরে হাতে গুণে যদি হিসাব করা হয় তাহলে আমরা আমাদের এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে ব্যাপক চিন্তিত আছি ৫ মাস! এই দীর্ঘ ৫ মাস কি চারটি খানিক কথা? অপরদিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ১৩ লক্ষ!
লকডাউনের শুরু থেকে এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে সবাই উদ্ধিগ্ন আছে, প্রথমতঃ পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি এপ্রিল মাসে। শিক্ষার্থীরাও করোনাভাইরাস নামক এই মহামারী নিয়ে খুব চিন্তিত। আমাদের চিন্তার কারণ শুধু এই ভাইরাস ও মহামারী চলাকালীন সময়টুকুই নয়। আমাদের আরেকটি বড় চিন্তার কারণ হলো আমাদের পরীক্ষা। এই অপ্রকল্পনীয় পরীক্ষা নিয়ে মাথা ব্যথা শুধু আমার তোমার নয়। ১৩ লক্ষ শিক্ষার্থীর এবং তাদের পরিবারের সকল সদস্যবৃন্দের।
জনগণ সরকারের নির্দেশ মানছে না, বলাবাহুল্য তারা তাদের লাইফস্টাইলে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন না এনে আগের মতই অবাধ চলাফেরা করে বেড়াচ্ছে। হ্যাঁ কথাটি তিক্ত হলেও কড়া সত্য! ফলাফল আক্রান্তের সংখ্যা কিন্তু কমছে না, টেস্ট অনুযায়ী আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে-কমছে। তো করোনা মুক্ত বাংলাদেশ দেখতে হলে ব্যাপক নিরাপত্তার প্রয়োজন।
শুধুমাত্র কয়েকটি দিক বিবেচনা করে একটা বোর্ড পরীক্ষা নেওয়া বাস্তবে আমাদের সকলের জন্যই হুমকিস্বরূপ হয়ে দেখা দেবে। দেশের আনাচে-কানাচেতে এখনো অনেক পরিবারই আছে যারা করোনাভাইরাস নিয়ে মোটেও সচেতন নয়।
শিক্ষার্থীরা বাসা থেকে বের হবার আগে নিরাপত্তার জন্য সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকলেও তারা সচরাচর অন্যান্য দিনের মতই বাস, রিকশা অথবা অন্যান্য যানবাহনে করে পরীক্ষার কেন্দ্রে আসবে। তাদের সাথে তাদের পরিবারের কেউ না কেউ থাকবেই। কেন্দ্রে ঢুকার পূর্ব মুহূর্তে হাত স্যানিটাইজ করে নেওয়ার পরেও কেন্দ্রের সামনে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক ভীড় দেখা যাবে। এই ভীড়ের মাঝেও শিক্ষার্থীদের কথোপকথনেও বর্তমান সময়ের কথিত 'সোশাল ডিস্টেন্স' বজায় নাও থাকতে পারে। পাশাপাশি কেন্দ্রের সর্বোচ্চ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার একটি ব্যাপারও কিন্তু এখানে উঠে আসবে।
ছোটবেলা থেকেই আমরা বাংলা পাঠ্যপুস্তকে পড়ে এসেছি, 'আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।' আজকের শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান করার জন্য সরকারের কাছে আমাদের বিনীত আবেদন। তাদের নিরাপত্তার জন্য অল্প কয়েক ব্যাবস্থাই হয়তোবা বাঁচিয়ে দেবে ১৩ লক্ষ শিক্ষার্থী ও জড়িত তাদের পরিবারের সদস্যদের। আজ শনিবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে নতুন করে ২ হাজার ২২৬ জন। পরীক্ষা আরম্ভ হওয়ার পরে আক্রান্তের এ সংখ্যার মাঝে আজ আমরা যারা পরীক্ষা নিয়ে চিন্তিত আছি তারা কি থাকবো না কেউ? আমদের কেউ আক্রান্ত হলে আমাদের পরিবারের জন্যও এটি বেশ কষ্টদায়ক হবে। এর দায়ভার কে নেবে? আমরা পরীক্ষার্থীরা কেও অন্যান্যদের মতো হেলায় ফেলায় চলছি না। যথাসম্ভব সরকারের নির্দেশ মানার চেষ্টা করেছি, এখনো করছি। করোনাভাইরাস নামক এই মহামারীর সময়ে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া কি একমাত্র কারণ হয়ে দাঁড়াবে নাতো আমাদের জীবনঝুঁকির? অবশ্যই ১৩ লক্ষ শিক্ষার্থী সকলে জীবনঝুঁকিতে ভুগবে।
অপরদিকে দীর্ঘ ৪ মাস ধরে পরীক্ষা হবে কি হবে না, পরীক্ষা কবে হবে, কীভাবে হবে এমন নানান অপ্রত্যাশিত চিন্তা মাথা ঘুরপাক খাওয়ার কারণে কোনো শিক্ষার্থীই পড়াশোনায় আগের মতো মনোযোগী হতে পারছে না। মানসিক দুশ্চিন্তা একটি সুস্থ মস্তিষ্ক বিকাশের পথে বড় হুমকিস্বরূপ। পরীক্ষা নিয়ে আমরা বর্তমানে মানসিক দুশ্চিন্তায়ই ভুগছি।
শিক্ষার্থীদের কারও চাহিদা নেই সরকার কতৃক অটোপাশ পাওয়ার। ইহা স্রেফ একটি ভিত্তিহীন পরিকল্পনা, যা বর্তমান সমাজে বাস্তবিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পরীক্ষা হবে, অবশ্যই পরীক্ষা হবে। তবে সঠিক সময়ে। অন্ততঃ যাতে আমরা শিক্ষার্থীরা নিরাপদে ভয়ভীতি বিনা পরীক্ষার কেন্দ্রে হাসিমুখ খানা নিয়ে পৌঁছাতে পারি এবং সুস্থতার সঙ্গে নিজ ঘরে পরিবারের কাছে ফিরে আসতে পারি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে।
শিক্ষার্থীদের শুধু একটাই দাবী, ‘করোনাকালীন দুঃসময়ে আমরা কেউ এইচএসসি পরীক্ষা চাই না।’ সকল শিক্ষার্থীদের বিনীত আবেদন সরকারের কাছে করোনাভাইরাসের এই বিদ্রুপ মহামারীর সময়কালে আমাদের এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া স্থগিত করা হোক। আমাদের এই দাবী এবং আমাদের পরিবারেরও এই একই দাবি।
লেখক: শিক্ষার্থী, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার কলেজ